নাকের সর্দি দূর করার উপায় - সর্দিতে নাক বন্ধ হলে করণীয় কি


আজ আমরা আলোচনা করব নাকের সর্দি দূর করার উপায় ও সর্দিতে নাক বন্ধ হলে করণীয় কি তা নিয়ে। সর্দিএকটি ভাইরাস জনিত সমস্যা বা রোগ। বিভিন্ন ধরনের জীবাণু বা ভাইরাস শ্বাসনালীদের সংক্রমণ করার ফলে আমাদের সর্দি হয়ে থাকে। অনেকগুলো ভাইরাসের মধ্যে একটি ভাইরাস হলো রাইনো ভাইরাস যা সহজেই আক্রমণ করে আমাদের  সর্দি বাঁধিয়ে দেয় । 

আর এই নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে আমরা বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট বা ড্রপ ব্যবহার করতে পারি। কিংবা নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে আমরা বিভিন্ন ঘরোয়া টেকনিকও ব্যবহার করতে পারি। এখানে আমরা আরো আলোচনা করব, সর্দিতে নাক বন্ধ হলে করণীয় কি, নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায়, সর্দি দূর করার ট্যাবলেট, বাচ্চাদের নাকের সর্দি দূর করার উপায়, বাচ্চাদের নাকের ড্রপের নাম কি এসব সম্পর্কে।

নাকের সর্দি দূর করার উপায়

সর্দি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। আবহাওয়া বা ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রায় মানুষের জ্বর সর্দি দেখা দেয়। তবে এর মধ্যে সর্দি টাই বেশি হয়ে থাকে। ছোট বড় সবাই এই সমস্যায় পড়ে থাকে। অনেকেই বলে সর্দি হওয়া মানুষের শরীরের জন্য বেশ উপকার তবে আমার কাছে এটি বেশ বিরক্তিকর। তাই আমরা নাকের সর্দি দূর করার উপায় খুঁজতে  থাকি।

আরো পড়ুনঃ সুস্থ থাকার জন্য মানুষের কতটুকু ঘুমের প্রয়োজন

অনেকেই আমরা অনেকভাবে নাকের সর্দি দূর করে থাকি যেমন সর্দির ট্যাবলেট খেয়ে, সর্দির ড্রপ নাকে দিয়ে, আবার সর্দি দূর করার জন্য ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে। অনেকেই আমরা লেবু-মধু গরম পানি খেয়েও নাকের সর্দি দূর করার উপায় খুঁজি।

সর্দিতে নাক বন্ধ হলে করণীয় কি

ঠান্ডা বা সর্দি লাগলে নাক দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকে ।ফলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় এমনকি হা করে শ্বাস নিতে হয় যা খুবই কষ্টকর। তবে নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে কিছু নিয়ম মেনে চললেএই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায় যেমনঃ

  • সর্দি আটকে গেলে নাক ও কপালে হালকা গরম চেক দিন।
  • প্রচুর পানি পান করুন।
  • নাক পরিষ্কার করার জন্য স্যালাইনের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
  • নাকে সর্দি আসতেই ঝেড়ে ফেলুন, সর্দি নাকে আটকে রাখবেন না।
  • নাক সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
  • গরম চা পান করতে পারেন।
  • কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।
  • গরম পানি দিয়ে গড়গড় করুন।
  • ঝাঁঝালো মেন্থল মলম ব্যবহার করতে পারেন যা শ্বাস নিতে পারবেন।

নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায়

নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায় বেশ কার্যকর ।তাই আপনারা নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে নিছের উপায়গুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন আশা করি কাজে লাগবে।

তুলসী পাতা ও আদা

গরম পানিতে তুলসী পাতা আদা কুচি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে তার দিনে দুই থেকে তিনবার গরম গরম খান দেখবেন সর্দি কাশি কমে যাবে।

 রসুন

রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার সর্দি কাশি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সর্দি কাশি হলে  ঘি এর সাথে ৪-৫ কোয়া রসুন ভেজে তা গরম গরম খেয়ে ফেলুন দেখবেন অনেক আরাম বোধ করবেন।

লেবু ও মধুর চা

নাক বন্ধ হলে তা দূর করার জন্য লেবু ও মধুর চা আমাদের জন্য খুবই উপকারী। এক গ্লাস গরম পানিতে দুইটা চামচ মধু ও এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন দেখবেন অনেক উপকার পাবেন।

আদা ও চা

ঠান্ডার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার সবচেয়ে বেশি কার্যকারী উপাদান হলো আদা ও চা। আদার চা খেলে সর্দি কাশি দ্রুত ভালো হয়।

গরম পানির ভাব

বন্ধ নাক ছাড়াতে গরম পানির ভাব খুবই কার্যকরী। ইউক্যালিপটাস বা ট্রিটি অয়েলএর কয়েক ফোঁটা পানিতে মিশিয়ে ভাব নিলেও অনেক আরাম পাওয়া যায়।

সর্দি দূর করার ট্যাবলেট

সর্দি থেকে বাঁচার জন্য আপনারা সর্দি দূর করার ট্যাবলেট খেতে পারেন। এতে করে সর্দি খুব তাড়াতাড়ি কমে যাবে । নিম্নে নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে সর্দির ট্যাবলেট এর নাম কোম্পানির নাম এবং প্রিস প্রতি কয় টাকা করে তা দেওয়া হলঃ

  • ইস্টাসিন কোম্পানির নাম জয়সন ফার্মা এর দাম প্রিস প্রতি ১ টাকা।
  • ফেক্সো ৬০ এমজি কোম্পানির নাম স্কয়ার দাম প্রতি পিস চার টাকা।
  • ডেসলার কোম্পানির নাম অরিয়ন ফার্মা  দাম প্রতিদিন ৪ টাকা।
  • নিউরোসিল কোম্পানির নাম ইনসেপ্টা দাম প্রতি পিস তিন টাকা।
  • সিনামিন কোম্পানি নাম ইবনে সিনা দাম প্রতি পিসচার৪ টাকা।
  • হিস্টালেক কোম্পানির নাম একমি দাম প্রতি পিস এক টাকা।

বাচ্চাদের নাকের সর্দি দূর করার উপায়

ঠান্ডা মৌসুমে বাচ্চারা খুব সহজেই সর্দিতে আক্রান্ত হয়। আর এর ফলে বাচ্চাদের নাক বন্ধ হলে তারা খুব বিরক্ত হয় এবং কান্নাকাটি করে। আর এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য করণীয় হলোঃ 

স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের মতে শিশুদের বয়স ৪ বছর পূর্ণ না হলে নাকের স্প্রে ব্যবহার করা যাবে না। নবজাতক ও অল্প বয়সী শিশুদের জন্য স্যালাইন ড্রপ হলো নাকের একমাত্র নিরাপদ স্প্রে। বাজারে স্যালাইন নাকে ড্রপ কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়াও বাসায় আধা কাপ কুসুম গরম পানিতে চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ লবণ গুলো স্যালাইন ড্রপ তৈরি করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ শীতের পিঠা সম্পর্কে

আপনার শিশুকে চিৎ করে শোয়ানোর পর নাকের প্রত্যেক ফোটায় দুই তিন ফোটা স্যালাইন ড্রপ দিন। নাকের ভেতর থেকে স্যালাইন ড্রপ অথবা সর্দি বের হয়ে আসলে টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন।

বাথরুমে বাষ্পায়িত করুন

বাথরুমে কিছু মিনিট হট শাওয়ার চালু রাখুন ।তারপরে বাথরুম বাষ্পে পরিপূর্ণ হলে আপনার শিশুকে নিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকুন ।এতে নাকের সর্দি পাতলা হবে সাবধান শিশুকে হট সাওয়ার গোসল করাবেন না অন্যথায় ত্বক পুড়ে যাবে।

পানি পান করান ও বিশ্রামে রাখুন

শরীরে ডিহাইড্রেশন এড়াতে শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। বন্ধু নাক আরো খারাপ অবস্থা থেকে রক্ষা করতে ডি হাইড্রেশন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই সময় বাচ্চারা পানি পান করতে অনিহা প্রকাশ করে ।তাই তাদের  পানি পান করানোর চেষ্টা করতে হবে এবং বুকের দুধ খাচ্ছে কিনা সেদিকে কেউ খেয়াল রাখতে হবে। শিশুরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

হিউমিডিফায়ার চালু করুন

শীতের ঠাণ্ডা এড়াতে এবং ঘরকে উষ্ণ করতে হিউমিডিফায়ার চালু করতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন হিটার চালু করলে শুষ্ক বাতাসে অনেক সময় শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে এতে ঝুঁকি আছে। হিটার যদি চালু রাখেন এবং শিশুর নাম যদি বন্ধ থাকে এতে আরো ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু হিউমিডিফায়ার চালু রাখলে ঘরে বাতাসের আদ্রতা যোগ হয় ।এতে করে শিশুর নাকের সর্দি পাতলা এবং স্বস্তি পায়। বিশেষ করে এটি রাতে কার্যকারী।

বাচ্চাদের নাকের ড্রপের নাম কি

বাচ্চাদের নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে বাচ্চাদের নাকের ড্রপের নাম কি বা সর্দির ড্রপের নাম কি এটা সবাই জানতে চান। আজকাল বাচ্চাদের নাকের সর্দির জন্য বিভিন্ন ধরনের ড্রপ ব্যবহার করা হয় যেমন আফরিন, নজু মিষ্টি, হ্যাপিছল, এন্টাজল ইত্যাদি। শিশুদের বন্ধনাক খোলার জন্য এসব ড্রপ ব্যবহার করা হলেও সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের এক নিবন্ধনে বলা হয়েছে, এসব নাকেট ড্রপে লাভ তো হয় না বরং এতে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফল সম্পর্কে

ডক্টর ড্রিলের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া কুইজল্যান্ড ইউনিভার্সিটি মেডিসিনের একদল বিশেষজ্ঞ গবেষণা করে বলেন, শিশুদের বন্ধ না খোলার জন্য যেসব ড্রপ নাকি দেওয়া হয় তার কারণে শিশুদের পেটের সমস্যা, দ্রুত স্পন্দন,  খিচুনি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

নাকের ড্রপ ব্যবহারে ক্ষেত্রে আরো একটি অসুবিধা হলো প্যাকেট একই দেখতে হলেও ছোট বড়দের ক্ষেত্রে এই ড্রপের মাত্রা ভিন্ন রয়েছে তবে অনেকেই ও সাবধান বসত মাত্রা না দেখে কেনার কারণে বড়দের ট্রপ ছোটদের দিয়ে দেয়। ফলে বাচ্চাদের ঝুঁকির মাথা বেড়ে যায়।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url