সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি


আবহাওয়া বদলের সময় অর্থাৎ সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি এর মত উপসর্গগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই সাধারণত এ ধরনের সমস্যাই বেশি পড়ে থাকেন।সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি শিশু বা বয়স্কের ক্ষেত্রে বেশি দেখা দেয়। অনেক ওষুধ খেয়েও সহজে ছাড়তে চায় না সর্দি কাশি।

তবে আপনারা সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি থেকে রেহাই পেতে বা চট জলদি আরাম পেতে কিছু আয়ুর্বেদিক বা টোটকা ব্যবহার করতে পারেন। আমরা সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি থেকে রেহাই পেতে আরো জানবো, সর্দি কাশির লক্ষণ, সাধারণ সর্দি কাশির চিকিৎসা, ওষুধ সেবনের পূর্বে সতর্কতা, সর্দি কাশির ঔষধ, যখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, যেসব লক্ষণ দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নিতে হবে, সর্দি কাশি প্রতিরোধের উপায়, সম্পর্কে।

সর্দি কাশির লক্ষণ

সাধারণত একই সময়ে ঠান্ডা গরম এর কারনে সর্দি কাশি হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো গরম থেকে এসে ঠান্ডা জাতীয় পানি পান করা বা ঠান্ডা এসির মধ্যে বসার কারণেও সর্দি কাশি লাগে। অনেক সময় বৃষ্টিতে ভেজা,সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি অর্থাৎ আবহাওয়া বদলের সময় সর্দি কাশি হয়ে থাকে। তবে কিভাবে বুঝবেন যে আপনার ফ্লু , করোনা না সর্দি কাশি হয়েছে।
সাধারণত সাধারণ সর্দি কাশির লক্ষণগুলো একই রকমের হয়ে থাকে। যেমন সাধারণ সর্দি কাশি হলে মাথা যন্ত্রণা করে, জ্বর জ্বর ভাব আসে, হালকা কাশি হতে পারে তা দুইদিন পর থেকে বেড়ে যেতে পারে, এছাড়া একটু গায়ে হাত-পা ব্যথা হতে পারে। সাধারণ সর্দি কাশি ৩ নের মধ্যে ঠিক হয়ে যায় ।কিন্তু ভাইরাস ধরনের সর্দি কাশি তিন দিন পরে আরো বৃদ্ধি হতে থাকে।

সাধারণ সর্দি কাশির চিকিৎসা

সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি,সাধারণ সর্দি কাশি থেকে রক্ষা পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা নিতে পারেন, এতে আপনারা দ্রুত সর্দি কাশি থেকে রেহাই পাবেন। নিম্নে সাধারণ সর্দির কাছে চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • বিশ্রাম নিন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান।
  • গলা ব্যথা উপশমের জন্য লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড় করুন।
  • কাশি উপসমের জন্য মধু খেতে পারেন। তবে এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য এই পরামর্শটি প্রযোজ্য নয়।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
  • পানির পাশাপাশি তরল জাতীয় খাবার খান। যেমন জুস, চিড়া পানি, ডাবের পানি ইত্যাদি।
  • শরীর উষ্ণ রাখুন।
অনেকে ধারণা করেন যে ভিটামিন সি, রোশন ও একানিশিয়া নামের হারবাল ঔষধ সর্দি কাশি প্রতিরোধে কিংবা সর্দি কাশি থেকে দ্রুত সরে উঠতে সাহায্য করে। তবে এই ধারণার পক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ওষুধ সেবনের পূর্বে সতর্কতা

সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি বা যে কোন ধরনের অসুখ হলে ,সব ধরনের ওষুধ সেবনের পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। লক্ষণ দেখা গেলেই হুট করে কোন ওষুধ সেবন করলে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, তাই ওষুধ সেবনের আগে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সর্দি কাশির ঔষধ সেবনের পূর্বে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো খেয়াল রাখুনঃ
  • গর্ভাবস্থায় অনেক ওষুধ সেবন করায় মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের যেকোনো ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকুন।
  • ঔষধ সেবনের আগে সেটির গায়ে লাগানোর লেভেল দেখে নিবেন। ঔষধের সাথে থাকা নির্দেশনা গুলো মেনে চলবে।
  • অনেক সর্দি কাশির ওষুধের মধ্যে ব্যথা নাশক ওষুধের উপাদান থাকে, যেমন প্যারাসিটামল, আইবু প্রফেন ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রে আলাদা করে ব্যাথা নাশক ব্যবহার করলে ওষুধের মাথা ক্ষতিকর পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
  • দুই বছরের ছোট শিশুদের সর্দি কাশির জন্য কোন ওষুধ দেওয়া উচিত নয়।
  • শিশুদে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া উচিত নয়।

সর্দি কাশির ঔষধ

সর্দি কাশির জন্য তেমন একটা ওষুধের প্রয়োজন হয় না। সাধারণ সর্দি কাশির সাধারণত কোন ওষুধ ছাড়ায় ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে সর্দি কাশির উপশম থেকে কিছুটা রেহাই পেতে কিছু ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। যেমনঃ
প্যারাসিটামল
সাধারণ সর্দি কাশি জ্বর ও মাথা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে প্যারাসিটামল সেবন চলাকালে অন্য কোন ব্যথার ওষুধ, কফ সিরাপ অথবা সর্দি কাশির হারবাল ওষুধ সেবন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা  মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে প্যারাসিটামল সেবন ঝুঁকি বাড়ায়।
নাক বন্ধের ড্রপ
নাক বন্ধের ড্রপ হিসেবে অনেক ড্রপই বাজারে রয়েছে। যা নাক বন্ধ উপশম এ ব্যবহার করা হয়। তবে টানা এক সপ্তাহের বেশি ব্যবহার করবেন না তাতে নাক বন্ধের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। এক সপ্তাহে যদি কোন উন্নতি না হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

যখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে

সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নিম্নে যখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে লক্ষণ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে কিংবা গর্ভবতী হলে।
  • দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে যেমনঃ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ও ফুসফুসের রোগ থাকলে।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এমন চিকিৎসা নিলে। যেমন কেয়ামত থেরাপি ও লম্বা সময় ধরে ট্রেডওয়েট সেবন।
  • অনেক জ্বর আসলে অথবা জ্বরের সাথে খিচুনি বা কাপুনি থাকলে।
  • তিন মাসের কম বয়সী শিশুর জ্বর আসলে অথবা খুব মিসটেজ হয়ে পড়লে। যে কোন বয়সে শিশুকে নিয়ে আশঙ্কা থাকলো।
এ সকল লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

যেসব লক্ষণ দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নিতে হবে

নিম্নে যেসব লক্ষণ দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নিতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
শিশুদের ক্ষেত্রে
  • ঠোঁট ও মুখ নীল হয়ে যাওয়া।
  • খিচুনি।
  • পানি শূন্যতা। এর কিছু লক্ষণ হল= ৮ ঘন্টায় একবারও প্রসাব না করা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং কান্না করলে চোখে পানি না আসে। ছোট শিশুদের মাথায় সামনের দিকে বসে যেতে পারে।
  • বুকে ব্যথা।
  • দ্রুত শ্বাস নেওয়া অথবা শ্বাসকষ্ট হওয়া।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে পাঁজরের হাড় ভিতরে ঢুকে যাওয়া।
  • সজাগ অবস্থাতে পুরাপুরি সচেতন না থাকা এবং অন্যদের সাথে না মেশা।
  • মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা।
  • জ্বর ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর উপরে চলে যাওয়া।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে
  • বুকে অথবা তলপেটে ক্রমাগত ব্যথা অথবা চাপ চাপ লাগা।
  • খিচুনি।
  • ক্রমাগত মাথা ঘুরানো, বিভ্রান্তি ওঝিমুনি।
  • প্রসাব না হওয়া।
  • শ্বাসকষ্ট।
  • মাংস পেশীতে তীব্র ব্যথা।
  • প্রচন্ড দুর্বলতা ও অস্থিরতা।
  • কাশির সাথে রক্ত যাওয়া।
উল্লেখিত লক্ষণগুলো ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী অন্যান্য রোগের লক্ষণগুলো বেড়ে গেলেও জ্বর কাশি কিছুটা কমার পরেও আবার ফিরে আসে ।অথবা হঠাৎ করে লক্ষণগুলো বেড়ে গেলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

সর্দি কাশি প্রতিরোধের উপায়

সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি কমবেশি সকলেরই হয়ে থাকে । তাই সর্দি-কাশি প্রতিরোধের উপায় নিয়ে অনেকেই ভাববেন। নিম্নে সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি প্রতিরোধের উপায় আলোচনা করা হলোঃ
আরো পড়ুনঃ ঘুমের উপকারিতা
  • সম্ভব হলে কাজ থেকে বিরতি নিয়ে ঘরে থাকুন এবং বিশ্রাম নিন।
  • মানুষের সংস্পর্শে আশা থেকে বিরত থাকুন। 
  •  হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় অন্যদের থেকে দূরে সরে যান এবং টিস্যু দিয়ে নাম মুখ ঢাকুন। এবং ব্যবহারের পর টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিন।
  • সুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। কারো সাথে হ্যান্ডশেক অথবা কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকুন।
  • বাইরে বের হলে মাক্স ব্যবহার করুন।
  • জ্বর সেরে যাওয়ার পর অন্তত ২৪ ঘন্টা পার হওয়ার আগে পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না।
  • বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

শেষ কথা

সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি ,আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। কারণ বর্তমান সময়ে সর্দি কাশি আমাদের লেগেই আছে, আর আমরা এ থেকে পরিতানের উপায় খুঁজছি। তাহলে আপনারা আর দেরি না করে আমাদের পেজটি ফলো করুন। অবশ্যই আপনারা সিজন চেঞ্জে সর্দি-কাশি এর সমাধান পেয়ে যাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url