রমজান মাসের করণীয় আমল সম্পর্কে জানুন
পবিত্র রমজান মাস আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রমজান মাস হলো আল্লাহর একটি বিশেষ নেয়ামত এর মাস। আর এই মাসে আমাদের পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়। তাই এ মাসের গুরুত্ব আমাদের কাছে অধিক। আর রমজান মাসের করণীয় আমল রয়েছে যা আমাদের পালন করা খুবই প্রয়োজন।
রমজান মাসের করণীয় আমলগুলো পালন করলে এর মাধ্যমে আমরা জান্নাত পেতে পারি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। তাই আজ আমরা আলোচনা করব রমজান মাসের করণীয় আমল সম্পর্কে। তাহলে আসুন দেরি না করে জেনে নেই রমজান মাসের করণীয় আমল গুলো কি কি।
সিয়াম পালন করা
সিয়াম পালন করা ফরজ। কারণ ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে সিয়াম একটি অন্যতম রুকন।
তাই রমজান মাসের সুন্নত মোতাবেক প্রধান আমল গুলোর মধ্যে সিয়াম পালন করা অন্যতম ।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন; সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে সে যেন
তাতে সিয়াম পালন করে।(সূরা আল বাকারা আয়াত ১৮৫)
সহিহভাবে কোরআন শেখা
কোরআন আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী। আর এই কোরআন অবতীর্ণ হয় রমজান মাসে।
তাই রমজান মাসে কুরআন শেখা অন্যতম একটি আমল। আর কোরআন শিক্ষা করা ফরজ করা হয়েছে
কারণ কুরআনে বলা হয়েছে; পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।
সময় মতো সালাত আদায় করা
সময় মতো সালাত আদায় করা এবং তা পালন করার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা সিয়াম পালনের
সাথে সাথে সময় মত নামাজ আদায় করলে জান্নাতের পথ সুগম হয়। সময় মতো
সালাত আদায় করা সম্পর্কে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছেঃ নিশ্চয়ই সালাত মমিনদের উপর
নির্দিষ্ট সময় ফরজ(সূরা নিসাঃ১০৩)
আরো পড়ুনঃ ঈদ উল ফিতর অর্থ কি
অপরকে কোরআন পড়া শেখানো
রমজান মাস হল অপরকে কোরআন পড়া শেখানো বা নিজে শেখার উত্তম সময়। রমজান মাসে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদের কোরআন শিক্ষা দিতেন।
এই প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের মধ্যে
সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কোরআন শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।(সহিহ আল
বুখারীঃ৫০২৭
সালাতুত তারাবিহ পড়া
সালাতুত তারাবিহ পড়া রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছেঃ সে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সোয়াব হাসিলের আশায় রমজান মাসের তারাবি আদায় করবে , তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা
রমজান মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়। তাই এই মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করার ফজিলত
অনেক। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়।
প্রতিটি নেকি দশটি নেকি সমান। আমি বলি না যে, আলিফ- লাম-মিম একটি হরফ। বরং আলিফ
একটি হরফ, মিম একটি হরফ লাম একটি হরফ।
শুকরিয়া আদায় করা
রমজান মাস সবার ভাগ্যে জোটে না ,এই মাসটি পাওয়া কোন ব্যক্তির কাছে বিরাট
সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ এই মাসে সকল মানুষের দোয়া কবুল করে নেন এবং পাপী
মানুষদের তিনি পাপ থেকে মুক্তি দেন। তাই এই মাসে বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা
এবং আল্লাহর কাছে চাওয়া যে এই মাসটি আবার ফিরে পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে
কুরআনে বলা হয়েছেঃ আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদের যে হেদায়েত
দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো এবং যাতে তোমরা শোকর কর। সূরা আল
বাকারা-১৮৫
কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা
রমজান মাসে কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা উত্তম। কারণ এই মাসে আল্লাহ তায়ালা
কল্যাণকর কাজের বিনিময়ে অধিক সওয়াব দিয়ে থাকেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন; এই মাসে প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এসে বলে বা আহবান করতে
থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসারী তুমি আরো অগ্রসর হও। হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা
অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর।( তুমি কি জানো) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা কত
লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।
বেশি বেশি দান সদাকাহ করা
এ মাসে বেশি বেশি দান সদকাহ করা ফকির বা গরিব মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া
গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়াও এই মাসে যাকাত দেওয়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসে বেশি বেশি দান সদকাহ করতেন।
ইতিকাফ করা
ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম,
কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তেগফার ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা
সান্নিধ্য একাকী কিছু সময় যাপন করা। এটার ফজিলতের গুরুত্ব এতই বেশি যে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে রমজানের শেষ ১০ দিন এবং
তার সাহাবীগণদের নিয়ে ইতিকাফ করতেন।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের মেছতা দূর করার উপায়
সামর্থ্য থাকলে ওমরা পালন করা
রমজান মাসের করনীয় আমল গুলোরমধ্যে,ওমরা পালন করার ফজলত অধিক।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; রমজান মাসের ওমরা করা আমার সাথে হজ্জ আদায় করার সমতুল্য।
লাইলাতুল কদর তালাশ করা
রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ,সেই রাতটি হল
লাইলাতুল কদর। এ সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে কদরের রাত আজ আর মাসের চেয়েও উত্তম।
(সূরা কদরঃ৪)
ইফতার করা
রমজান মাসের করণীয় আমলের মধ্যে,কোন বিলম্ব না করে সময়মতো ইফতার করা বিরাট
ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। কেননা হাদিসে বলা হয়েছে; যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে
যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি ইফতার করে। কেননা পানি হল অধিক
পবিত্র।
বেশি বেশি দোয়া ও কান্নাকাটি করা
জীবনের সমস্ত গুনাহ ও মাফ পাবার আশায় রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া ও কান্নাকাটি
করা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবাদত। কেননা এই মাসে আল্লাহতালা গুনাহ ও পাপকারীদের সমস্ত
গুনাহ মাফ করে দেন দোয়া ও কান্নাকাটির মাধ্যমে।
ইফতার করানো
রমজান মাসে ইফতার করানো একটি বিশাল সওয়াবের কাজ। এই প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে; যে
ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ ছোয়াব লাভ করবে, তাদের
উভয়েরই সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।
ফিতরা দেওয়া
রমজান মাসের করণীয় আমল এর মধ্যে, সিয়ামের ভুল ভ্রান্তি এড়াতে ফিতরা দেওয়া আবশ্যক।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
অপরকে খাদ্য খাওয়ানো
রমজান মাসে অপরকে খাদ্য খাওয়ানো, কিংবা গরিব-দুঃখী অসহায় মানুষদের খাদ্য
খাওয়ানো অত্যন্ত পণ্যের কাজ। কোরআনে এসেছে; তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা
সত্ত্বেও মিসকিন এতিম ও বন্দীগীকে খাদ্য দান করে।
আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নত করা
আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নত করা একটি পুণ্যের কাজ। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন; আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যা মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আরো তাকওয়া অবলম্বন করো রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়র ব্যাপারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।
মিসওয়াক করা
মেসোকের প্রতিরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। হাদিসে এসেছে; অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্র কারি, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে ভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ শ্বাসকষ্ট কেন হয়
কুরআন বোঝা ও আমল করা
রমজান মাসে কোরআন বুঝে পড়া এবং সেই মোতাবেক আমল করার গুরুত্ব অপরিসীম।
তাছাড়াও কোরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা ও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা
নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না।
রমজান মাসে যা করণীয় নয়
রমজান মাসের করণীয় আমল গুলোর মধ্যে, এমন অনেক কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিম্নে সে সকল কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- সেহরি না খাওয়া
- মিথ্যা বলাও অন্যান্য পাপ কাজ করা
- বিলম্বে ইফতার করা
- শেষে ১০ দিন কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকা
- অপচয় ও অপব্যয় করা
- তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কোরআন খতম করা
- বেশি বেশি খাওয়া
- জামাতের সাথে ফরজ সালাত আদায়এ অলসতা করা
- লোক দেখানো ইবাদত করা
- সংকট তৈরি করা জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য
- অশ্লীল ছবি ও নাটক দেখা
- বিদাআত করা
- দুনিয়াবী বাস্তবতায় মগ্ন ত থাকা
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা আপনাদের,রমজান মাসের করণীয় আমল সম্পর্কে জানুন এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের পেজটি ফলো করুন। রমজান মাসের করণীয় আমল সম্পর্কে জানুন এমন অনেক নতুন নতুন ইসলামিক পোস্ট সম্পর্কে জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
খুব সুন্দর হয়েছে