রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতি


রমজান আমাদের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে, আর মাত্র ৬ দিন পেরোলেই আমাদের রমজান অর্থাৎ রোজা শুরু হয়ে যাবে। তাই রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতি সম্পর্কে আমাদের জানার প্রয়োজন রয়েছে। বা রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতি আমাদের জন্য জরুরী। আসুন তাহলে আমরা আর দেরি না করে জেনে নেই রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতি সম্পর্কে।

আমরা আরো জানবো, রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতির মধ্যে তওবাহ - ইস্তেগফার করা, রমজানের রোজার মানসিক প্রতিজ্ঞা নেওয়া, রমজান শুরু আগেই আগের কাজা রোজা আদায় করা, যাবতীয় গুনাহ থেকে সাধারণত ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করা, বিগত রমজানের অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করা, রমজানের ফরজ রোজার নিয়ম-কানুন জেনে নেওয়া, রমজানের আগে থেকে বেশি বেশি দোয়া সম্পর্কে।

তওবাহ - ইস্তেগফার করা

রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতি এর মধ্যে তওবাহ - ইস্তেগফার করা অন্যতম। কেননা রমজানের আগেই সব গুনাহ থেকে তওবাহ - ইস্তেফার করতে হবে। কোন মানুষ বা অন্যায়কারী যদি ভেবে থাকে রমজান এলে আমার সব গুনাহ এমনিতেই ক্ষমা হয়ে যাবে। বাস্তবে বিষয়টা তেমন না বরং রমজানের আগে তওবাহ - ইস্তেগফার করে রমজানের যাবতীয় কল্যাণ লাভে নিজেকে প্রস্তুত করা খুবই জরুরী।
আর এর ফলে আল্লাহ তায়ালা তার সেই সকল বান্দাদের আগে সব গুনাহ মাফ করে দিয়ে রমজানের যাবতীয় কল্যাণ দিয়ে জীবন সুন্দর করে দেন। আর এই জন্য পান্দা বা আমাদের বেশি বেশি পড়তে হবে "আল্লাহুম্মাগফিরলি" অর্থাৎ= হে আল্লাহ' আমাকে ক্ষমা করে দিন।

রমজানের রোজার মানসিক প্রতিজ্ঞা নেওয়া

আমাদের রমজান মাসের পরিপূর্ণ সওয়াব বা ক্ষমা পেতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। জীবনভর যত গুনাহ করছি এই রমজান মাসে সে সকল গুনাহ বা অন্যায় থেকে পরিপূর্ণভাবে ক্ষমা পেতে হবে এই প্রতিজ্ঞাটি মনে মনে করতে হবে। বেশি বেশি সওয়াব পেতে হবে, বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে অর্থাৎ রমজানের রোজার মানসিক প্রতীক্ষা নেওয়া।

দুঃখজনক বিষয় অনেক সময় পূর্ব প্রস্তুতি না থাকার কারণে অনেক মমিন মুসলমান পরিপূর্ণ সওয়াব বা ক্ষমা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমাদের এমন ভাবে প্রতিজ্ঞা নিতে হবে যে চাকরি-বাকরি , ব্যবসা-বাণিজ্য বা নিজের কাজ যেমনই হোক, আমি আমার বিগত জীবনের সকল গুনাহ থেকে নিজেকে মাফ করিয়ে নেব। আমি আমার প্রতি আল্লাহকে খুশি করিয়েই ছাড়বোই ছাড়বো ইনশাল্লাহ।

রমজান শুরু আগেই আগের কাজা রোজা আদায় করা

রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতি এর মধ্যে রমজান শুরু আগেই আগের কাজা রোজা আদায় করা এর গুরুত্ব অন্যতম। আমাদের অনেকেরি অসুস্থ হওয়ার কারণে বা সফর এর কারনে রমজানের ফরজ রোজা কাজা হয়ে থাকে। তাই সে সফল কাজা রোজা আমাদের রমজান আসার পূর্বেই যথাযথ সময়ে আদায় করে নেওয়া উচিত।

বিশেষ করে মা বোনদের ভাংতি রোজা থাকতে পারে সে সকল ভাংতি রোজা সাবান মাসে এই সময়ে আদায় করে নেওয়া উচিত। এতে বিশেষ করে ২ টি ভাল আমল বাস্তবায়িত হবে ১। রমজানের ফরজ আমলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ২। সুন্নাতের অনুসরণ হবে।

যাবতীয় গুনাহ থেকে সাধারণত ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করা

রমজান মাসে যাবতীয় গুনাহ থেকে সাধারণত ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করা চালিয়ে যেতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে অনেক মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন, তবে সবার ভাগ্যে এই ক্ষমা জোটে না। আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পেতে গেলে বিশেষ করে দুটি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করে তা থেকে ফিরে আসতে হবে। কাজ দুটি হলঃ
শিরক থেকে মুক্ত থাকা
শিরক অর্থ তুলনা করা অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শিরক না করা। কেউ যদি ভুলবশত বা অনিচ্ছায় ছোট বা বড় শিরক করে থাকে তাহলে রমজান আসার আগে তা থেকে তওবাহ - ইস্তেগফারের মাধ্যমে ফিরে আসতে হবে।
হিংসা থেকে মুক্ত থাকা
হিংসা মানুষকে ধ্বংস করে দেয় তাই কারো প্রতি কোন বিষয়ে হিংসা না করা। হিংসা মানুষের সকল নেক আমল গুলো নষ্ট করে দেয় বা জ্বালিয়ে দেয়, যেভাবে আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিত হিংসা থেকে মুক্ত থাকা।
আরো পড়ুনঃ ঈদ উল ফিতর অর্থ কি

বিগত রমজানের অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করা

রমজান আসার পূর্বে বিগত রমজানের অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করা বা নেক আমল গুলো করতে না পারার কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে আমাদের। যেমনঃ
  • কেন তারাবিহ পড়া হয়নি?
  • কেন দান সহযোগিতা করা হয়নি?
  • কেন নিয়মিত কোরআন অধ্যায়ন করা হয়নি?
  • কেন ইতেকাফ করা হয়নি?
  • কেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা সম্ভব হয়নি?
  • কেন রোজাদারদের ইফতার করানো হয়নি?
  • কেন কুরআন সুন্নাহর আলোচনা করা হয়নি?
  • কেন রমজানের পাড়া-প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের হক আদায় করা হয়নি?
  • কেন রমজানের পরিবারের লোকদের হক আদায় করা হয়নি?
এই সকল বিষয় বা কারণগুলো চিহ্নিত করে নিয়ে নিজেকে সে সকল কাজ থেকে বিরত রেখে কিংবা প্রস্তুতি গ্রহণ করে কল্যাণকর সব আমল করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।

রমজানের ফরজ রোজার নিয়ম-কানুন জেনে নেওয়া

রমজান মাস আসার আগে আগেই আমাদের রমজানের ফরজ রোজার নিয়ম-কানুন জেনে নেওয়া উচিত। এতে করে আমাদের রমজানের রোজা নষ্ট হওয়া থেকে বা মাকরুহ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। তাই আমাদের সকলেরই উচিত রোজা আসার আগেই রমজানের ফরজ রোজার  নিয়ম-কানুন জেনে নেওয়া বা মাসআলা - মাসায়েল সম্পর্কে ভালোভাবে জানা।

রমজানের আগে থেকে বেশি বেশি দোয়া

রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতি এর মধ্যে রমজানের আগে থেকে বেশি বেশি দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। তাই রমজানের আগে আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করতে হবে যে ,হে আল্লাহ; আমি যতই চেষ্টা করি, তোমার তৌফিক বা ইচ্ছা না থাকলে আমি যেমন রমজান পাব না আবার রমজান পেলেও বরকত লাভে সক্ষম হব না। সুতরাং রমজান ও রমজানের নেক আমল করার তোমার কাছে তৌফিক চাই।
হে আল্লাহ; রমজানে যত মানুষ সৌভাগ্যবানদের কাতারে নাম লেখাবে, তাদের কাতারে আমাকেও সামিল করো; হে রাব্বুল আলামিন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা, নিশ্চয়ই আপনারা রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে কিছুটা হলেও উপকৃত হয়ে থাকবেন। আপনারা যদি রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতি আর্টিকেটির মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এমন অনেক ইসলামিক পোস্ট পেতে আমাদের পেজটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url