রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয় - ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার


ডায়াবেটিস এই রোগটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের সাধারণ একটি ধরা বাধা নিয়মের মধ্যে থাকতে হয়।রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয় - ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার, এক্ষেত্রে অনেক নিয়ম কানুন মেনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। তাই আমরা আজ আলোচনা করব রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয় - ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার সম্পর্কে।

রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয় - ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার এ প্রসঙ্গে আমরা আরো জানবো, রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয়, কেমন হওয়া উচিত খাবার, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা, ব্যায়াম ও বিশ্রাম, ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, সেহরি, ইফতার, রাতের খাবার, ওষুধ ও ইনসুলিন, হাঁটা ও ব্যায়াম, মনে রাখা জরুরী, রোজা পালনে কি ঝুঁকি রয়েছে, রোজা পালনের ঝুঁকিপূর্ণ যারা এই সম্পর্কে।

রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয়

ডায়াবেটিস এই রোগটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের সাধারণ একটি ধরা বাধা নিয়মের মধ্যে থাকতে হয়। এই রোগীদের সঙ্গে খাদ্যা অভ্যাস ও লাইফস্টাইল এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয় হিসেবে, ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থাপনার উপর একটা গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। কেননা  ডাইবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা এই সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের না রাখলে নানা জটিলতায় পড়বেন।

কেমন হওয়া উচিত খাবার

রমজান মাসে মানুষকে ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনেক সময় যেমন, ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত খেয়ে থাকতে হয়। এই দীর্ঘ সময় একজন ডায়াবেটিস রোগী না খেয়ে থাকা উচিত কিনা তা নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। কুরআন শরীফের আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোজা থাকা নিয়েও কিছু কথা রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ গরমে ত্বকের ৫টি সমস্যা এবং সমাধান

কোন ডায়াবেটিস রোগী যদি ধর্মীয় আগ্রহের কারণে রোজা রাখতে চান তবে তাকে নিষেধ করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে রোজা রাখলেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তবে রোজা রাখার সময় ডায়াবেটিস রোগীর যেসব ঝুকি দেখা দিতে পারে যেমন, গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া, রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, পানি শূন্যতা তৈরি হওয়া ইত্যাদি।

খাদ্য ব্যবস্থাপনা

ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

  • খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রেখে খাবার পরিমান এবং ধরন ঠিক করতে হবে। সঠিক সময় সঠিক পরিমাণ খাবার প্রয়োজন, সঠিক ওজন ও ক্যালরির মাত্রা বজায় রাখুন।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও পুষ্টিকর খাবার খান।
  • প্রচুর ফলমূল, শাকসবজি, টকদই তালিকায় রাখুন।
  • প্রচুর পানি পান করুন পানি শূন্যতা রোধ করতে। এছাড়াও ডাবের পানি পান করতে পারেন।
  • রমজানের আগে যে পরিমাণ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতেন রমজানে সে পরিমাণ ঠিক রেখে ক্যালোরি যুক্ত খাবার খান।
  • ইফতারের সময় অতি পরিমানে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার খাবেন না। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার থেকে বিরত থাকুন।
  • সেহেরির শেষ সময় অল্প সময় আগে খাবার খেতে হবে, সেহেরী বাদ দেওয়া যাবেনা।

ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা

রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয় হিসেবে ঘনঘন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। রোজা রেখে গ্লুকোমিটারে রক্ত পরীক্ষা করলে রোজা ভাঙ্গে না। শরীর খারাপ লাগে অবশ্যই রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করে দেখতে হবে। রক্তে গ্লুকোজ ৪ মিলিমোলের কম বা ১৬ মিলিমোলের বেশি হলে রোজা ভাঙতে হবে।

ব্যায়াম ও বিশ্রাম 

ডায়াবেটিস রোগীদের সাধারণ বা স্বাভাবিক জীবনযাপন চালনা করতে হবে। রোজা রেখে খুব বেশি কঠোর পরিশ্রম বা কঠোর ব্যায়াম না করাই ভালো। তবে তারাবির নামাজ শারীরিক শ্রম হিসেবে গণ্য করা হয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার

ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য অভ্যাস এবং লাইফ স্টাইলের সাথে যথেষ্ট পরিমাণ মিল রয়েছে। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে একজন ডায়াবেটিস রোগীকে অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। সেই সঙ্গে করতে হয় সুশৃংখল ও নিয়ন্ত্রণ জীবনযাপন। রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার ও খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক সতর্কতা বা নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। তবে সে সকল নিয়মকানুন মেনে চললে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা সহজ হয়।

আরো পড়ুনঃ শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায়

খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা। স্বাভাবিকভাবেই এই সময় ডায়াবেটিস রোগীর ঔষধ ও ইনসুলিন এর মাত্রা সময়সূচি বা পরিবর্তন হয়। এর মধ্যে কোন অনিয়ম দেখা দিলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক বেড়ে বা কমে যেতে পারে। তাই কোন ডায়াবেটিস রোগে রোজা রাখতে চাইলে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা সতর্ক রাখতে হবে। নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

  • সেহেরীতে লাল চালের ভাত ,লাল আটার রুটি ,দুধ ,কলা, মাছ ,মাংস ,সবজি, ডাল রাখার চেষ্টা করতে হবে।
  • সেহরির শেষ সময় অল্প কিছুক্ষণ আগে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • ইফতার শুরু করতে পারেন নবীজী(সঃ) এর সুন্নাহ একটি খেজুর দিয়ে। এছাড়াও গাইসেমিক ইনডেক্স কম যুক্ত ফল, ফলের জুস ,টক দই, ডাবের পানি,চিড়া ইত্যাদি খেতে পারেন।
  • সেহেরিতে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার, মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর তরল খাবার খেতে হবে, যেন পানি শূন্যতা না হয়।
  • রাতে হালকা খাবার যেমন স্যুপ, লাল আটার রুটি, মাছ, মাংস, চিড়া খেতে পারেন।

সেহরি

সেহেরিতে খাবার খেতে পারেন যতটুকু পরিমাণ তা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

  • ভাত - ১ থেকে ১.৫ কাপ
  • মাছ বা মাংস -মাঝারি মাপের ১ টুকরা
  • সবজি - ১.৫ থেকে ২ কাপ
  • ডাল - এক কাপ
  • দুধ -  এক গ্লাস

ইফতার

ইফতারে যতটুকু পরিমাণ খাবার খেতে পারেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

  • মুড়ি  - আধ কাপ
  • ছোলা - আধা কাপ
  • খেজুর -  একদিন পরপর একটি
  • টক দই -  আধা কাপ
  • ফল -  যেকোনো টক ফল বা ফলের জুস, ডাবের পানি
  • বাড়িতে রান্না করা চটপটি বা হালিম - আধা কাপ

রাতের খাবার 

  • লাল আটা রুটি - মাঝারি সাইজের ২ টি
  • মাছ বা মাংস -মাঝারি মাপের ১ টুকরা
  • সবজি - ১.৫ থেকে ২ কাপ
  • ডাল - এক কাপ

ওষুধ ও ইনসুলিন

ডায়াবেটিকস রোগীর রোজা শুরুর আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ ও ইনসুলিন এর সময়সূচী করে নিতে হবে। কেননা ডায়াবেটিস রোগীরা সঠিক সময় ওষুধ ও ইনসুলিন না নিলে বিপদ হতে পারে।

হাঁটা ও ব্যায়াম

রোজা অবস্থায় দিনের বেলা অতিরিক্ত হাঁটা ও ব্যায়াম বা যেকোনো ধরনের ভারী কায়িক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকাই ভালো। এ সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবির নামাজ আদায় করলে শারীরিক ব্যায়ামের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

মনে রাখা জরুরী

রোজা অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের সেসব নিয়ম কানুন মানা উচিত নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলোঃ

আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে ৭ টিপস

  • রোজায় ক্যালোরি ঠিক রেখে শুধু খাদ্য উপাদান ও খাবার সময় পরিবর্তিত হবে।
  • ইফতারে অতিভোজন এবং সেহরিতে অল্পভজন থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
  • সেহেরীতে কোন অবস্থাতেই না খেয়ে বা সামান্য কিছুকে রোজা রাখা যাবে না।
  • রোজা রেখে কখনোই আগের মাথায় ঔষধ বা ইনসুলিন নেবেন না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
  • প্রতিদিন ইফতারের ঠিক ২ ঘণ্টা আগে ও ইফতারের ঠিক ২ ঘণ্টা পরে গ্লকোমিটারে রক্তের গ্লুকোজ লেভেলের চার্ট বানিয়ে ফেলতে হবে । কোন ধরনের অস্বাভাবিক কিছু দেখা দিলে বা রক্তে গ্লুকোজ লেভেলের পরিমাণ কমে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

রোজা পালনের ঝুঁকিপূর্ণ যারা

রমজান মাসে রোজা পালনের ঝুঁকিপূর্ণ যারা নিম্নে তা আলোচনা করা হলোঃ

  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগী
  • অতি বৃদ্ধ ডায়াবেটিস রোগী
  • দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতা রোগী
  • ঘন ঘন হাইপো ও হাইপার গ্লাইসেমিক ডায়াবেটিস রোগী
  • মারাত্মক সংক্রমণ, যক্ষা ,ক্যান্সার রোগী
  • দিনে একের অধিক ইনসুলিন নেম যারা

এছাড়াও  অধিকারী কাইক পরিশ্রমি,হার্ট এটাক ,ডায়াবেটিস রুগিদের জন্য রোজা রাখার ক্ষেত্রে খুব সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা কেমন লাগলো রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয় - ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার এই আর্টিকেলটি। আশা করছি রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয় - ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। সত্যই যদি আপনারা ভীত হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের পেজটি ফলো করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url