রোজা রেখে মেসওয়াক করার নিয়ম - মেসওয়াক করার উপকারিতা
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার অভ্যাস স্বাভাবিকভাবে সবারই । কিন্তু রোজার মাসে সুবহে সাদিকের আগে ব্রাশ করতে না পারলে সমস্যায় পড়তে হয়। রোজা রেখে টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, মাজন অথবা কয়লা দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা মাকরূহ। তাই আজ আমরা আলোচনা করব রোজা রেখে মেসওয়াক করার নিয়ম - মেসওয়াক করার উপকারিতা নিয়ে। আপনারা কি রোজা রেখে মেসওয়াক করার নিয়ম - মেসওয়াক করার উপকারিতাসম্পর্কে জানেন? যদি না জানেন তাহলে আজকের আর্টিকেল থেকে জেনে নিন রোজা রেখে মেসওয়াক করার নিয়ম - মেসওয়াক করার উপকারিতা সম্পর্কে।
নিম্নে রোজা রেখে মেসওয়াক করার নিয়ম - মেসওয়াক করার উপকারিতা প্রসঙ্গে আরো জানবো, মেসওয়াক করা বলতে কি বুঝ, মেসওয়াক করার নিয়ম, মেসওয়াক করার সময়, মেসওয়াক করার উপকারিতা, টুথপেস্ট, টুথ পাউডার থেকে বিরত থাকা জরুরী, মেসওয়াক নবীজির সুন্নত, রমজানের মেজওয়াক, মেসওয়াক এর পার্থিব উপকারিতা, মেসওয়াক এর পরকালীন উপকারিতা, মেসওয়াক যেভাবে করবেন, রোজা রেখে মেসেজ করা যাবে কি এগুলো সম্পর্কে।মেসওয়াক করা বলতে কি বুঝ
ইসলামের হাদিস নির্দেশনা মোতাবেক আসলে মেসওয়াক দ্বারা বোঝা যায় মুখ ও দাঁত
পরিষ্কার করা। এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টিও লাভ করা যায়। বিভিন্ন ধরনের গাছের
ডাল বা শিকড় দিয়েও প্রত্যেক নামাজ বা ওযুর সময় দাঁত পরিষ্কার করাকে ইসলামের
মেসওয়াক বলা হয়।
মেসওয়াক করার নিয়ম
মেসওয়াক করার নিয়ম, হযরত ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহুর বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ডান পাশ থেকে মেসওয়াক করা শুরু করা। দাঁতের উপর থেকে নিচে এবং নিচ থেকে উপরের দিকে মেসওয়াক করা।
আরো পড়ুনঃ রমজানের খাদ্য তালিকায় কি কি খাবার রাখবেন
লম্বালম্বি তথা ডান থেকে বামে বা বাম থেকে ডানের দিকে মেসওয়াক না করা। হাতের মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল থাকবে মেসওয়াক উপর। কনিষ্ঠ ও অনামিকা আঙ্গুল থাকবে মেসওয়াক এর নিচে। বৃদ্ধা আঙ্গুলি দিয়ে মেসওয়াকের নিচ থেকে চাপ দিয়ে শক্তভাবে ধরতে হবে।
মেসওয়াক করার সময়
মেজ করার সময় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- নামাজ আদায়ের আগে মেসওয়াক করা।
- ঘুম থেকে ওঠার পর মেসওয়াক করা।
- কোরআন হাদিস পড়ার আগে মেসওয়াক করাকে অনেকে মুস্তাহাব বলে।
- ওজুতে কুলি করার আগে মেসওয়াক করা।
- মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের আগে মেসওয়াক করা।
- মুখের দুর্গন্ধ ছড়ালে মেসওয়াক করা।
- ঘরে প্রবেশ করে মেসওয়াক করা।
- জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মেসওয়াক করা।
- ক্ষুধা লাগলে মেসওয়াক করা।
মেসওয়াক করার উপকারিতা
মেজওয়াক করার উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মেসওয়াক করে নামাজ আদায় কর,মেসওয়াক বিহীন নামাজের তুলনায় ৭০গুন বেশি ফজিলত রয়েছে।
- মেসওয়া্কে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়
- মেসওয়াকে পাকস্থলী সুস্থ রাখে ও শরীর শক্তিশালী হয়।
- দারিদ্রতা দূর হয়ে সচ্ছলতা আসে এবং উপার্জন বাড়ে।
- মেসওয়াকে শয়তান অসন্তুষ্ট হয়।
- নিয়মিত মেসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব হবে ।জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ হবে।পুত পবিত্র হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে মুমিন।
- মেসওয়াকে স্মরণশক্তি ও জ্ঞান বাড়ে, অন্তর পবিত্র হয় সৌন্দর্য বাড়ে।
- মেসওয়াক কারীরা ইবাদতের শক্তি পাবেন বিজলি দ্রুত পুলসিরাত পার হবেন এবং ডান হাতে আমলনামা পাবেন।
টুথপেস্ট, টুথ পাউডার থেকে বিরত থাকা জরুরী
রমজানে আলেমদের পরামর্শ মেনে রোজার বিশেষ ফজিলত অর্জনের টুথপেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা জরুরী। রমজানের দিনের বেলা টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করতে না পারলেও তা তো মুখের যত নেওয়া আবশ্যক।
আরো পড়ুনঃ রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয়
কারণ দুই তাদের মাঝখানে খাবার জমে থাকলে তা দাঁতের জন্য ক্ষতি কারক ও হতে পারে। এজন্য রমজান মাসে ইফতার ও সেহেরির পর মানসম্মত টুথপেস্ট বা ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে পরামর্শ দেন ডেন্টিস্টরা।
মেসওয়াক নবীজির সুন্নত
মেসওয়াক নবীজির সুন্নত । সেহেরির শেষ মুহূর্তে সুবহে সাদিকের আগে ব্রাশ করতে না পারলে রোজা মাকরূহ বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে মেসওয়াক করা উচিত। এর মাধ্যমে নবীজির একটি বিশেষ সুন্নত পালনের পাশাপাশি সারা দিন মুখে দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
রমজানের মেজওয়াক
হাসান রাদিয়াল্লাহুকে রোজা অবস্থায় দিনের শেষে মেসওয়াক করার বিষয়
জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রোজা অবস্থায় দিনের শেষে মেসওয়াক করতে কোন অসুবিধা
নেই। কারণ মেসওয়াক পবিত্রতার মাধ্যমে। অতএব দিনের শুরুতে এবং শেষেও মেসওয়াক
করো।
মেসওয়াক এর পার্থিব উপকারিতা
মেসওয়াক এর পার্থিব উপকারিতা গুলো হলঃ আলী রাদিয়াল্লাহু বলেছেন,
- মেসওয়াক করার ফলে মস্তিষ্ক সজীব হয়
- দাঁত জীবাণুমুক্ত হয়
- দাঁতের ক্যালসিয়াম পূরণ হয়।
- দারিদ্রতা দূর হয় এবং পরিবারের সচ্ছলতা আসে
- পাকস্থলী রোগ মুক্ত হয়
- শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়
- মনে প্রফুল্লতা আসে
- দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।
- চেহারায় সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
- হৃদয় পরিচ্ছন্ন হয়।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
মেসওয়াক এর পরকালীন উপকারিতা
মেজওয়াক এর পরকালীন উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- ইবাদতে আনন্দ পাবে
- মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব হবে
- আমলনামা ডান হাতে পাবে
- বিজলীর মত পুলসিরাত পার হবে
- ফেরেশতারা মেসওয়াক কারীর সঙ্গে মুসাফাহা করবে করেন
- দোযখের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে
- জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে
- গুনাহ মুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে
- আল্লাহতালা তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন
- সুন্নত পালন করার সোয়াব প্রাপ্ত হবে
- ইবাদতে ৭০ গুণ সব পাবে
মেসওয়াক যেভাবে করবেন
মেসওয়াক যেভাবে করবেন নিমেষ সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- মুখের ডান দিক থেকে মেসওয়াক শুরু করা
- দাঁতের পোস্তরের দিক থেকে মেসওয়াক করা অর্থাৎ দৈর্ঘ্যের দিক থেকে উপর নিচে নয়।
- লম্বালম্বি তথা ডান থেকে বামে বা বাম থেকে ডানের দিকে মেসওয়াক না করা। হাতের মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল থাকবে মেসওয়াক উপর। কনিষ্ঠ ও অনামিকা আঙ্গুল থাকবে মেসওয়াক এর নিচে। বৃদ্ধা আঙ্গুলি দিয়ে মেসওয়াকের নিচ থেকে চাপ দিয়ে শক্তভাবে ধরতে হবে।
রোজা রেখে মেসেজ করা যাবে কি
রোজা রেখে মেসওয়াক করার নিয়ম - মেসওয়াক করার উপকারিতা এ প্রসঙ্গে আমরা জানবো,রোজা রেখে মেসেজ করা যাবে কি? হ্যাঁ রোজা রেখে মেসওয়াক করা যাবে। রোজা রেখে মেসওয়াক করলে বরং সুন্নত।
আরো পড়ুনঃ রোজার আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি আমলের প্রস্তুতি
আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে যে ,রোজা রেখেছি তাহলে মেসওয়াক করা যাবে না। অনেকের মাড়িতে সমস্যা তাতে মেসওয়াক করলে রক্ত বের হতে পারে। তাতে রোজার কোন ক্ষতি হবে, না রোজা নষ্ট হবে না। রোজা রেখে মেসওয়াক করা যাবে । এটি জায়েজ এটি নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
শেষ কথা
প্রিয় বন্ধুরা,রোজা রেখে মেসওয়াক করার নিয়ম - মেসওয়াক করার উপকারিতা আমার এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে একটি কমেন্ট করবেন। আর রোজা রেখে মেসওয়াক করার নিয়ম - মেসওয়াক করার উপকারিতা এই আর্টিকেলটি মাধ্যমে যদি আপনারা একটু উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আমার কষ্ট সার্থক। আমার অনেক ইসলামিক পোস্ট পেতে আমাদের পেজটি ফলো করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url