শবে কদরের দোয়া, ফজিলত ও নামাজের নিয়ম
শবে কদর শব্দটি ফারসি শব্দ।শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ ,সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। তাই শবে কদর অর্থ হল উত্তম রজনী বা মর্যাদাপূর্ণ রাত। আর আজ তাই আমরা আলোচনা করব শবে কদরের দোয়া, ফজিলত ও নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক্রম বন্ধুরা, তাহলে আপনারা জেনে নিন শবে কদরের দোয়া ,ফজিলত ও নামাজের নিয়ম সম্পর্কে।
শবে কদরের দোয়া, ফজিলত ও নামাজের নিয়ম এই প্রসঙ্গে আমরা আরও জানব, শবে কদর কি, শবে কদর অর্থ কি, শবে কদরের দোয়া, শবে কদরের ফজিলত, শবে কদর নামাজের নিয়ম, শবে কদর কবে, লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস, লাইলাতুল কদরের মর্যাদা, শবে কদরের আমল, কদর নামাজের নিয়ত, লাইলাতুল কদর এর সূরা, শবে কদরের নামাজ কয় রাকাত সম্পর্কে।
শবে কদর কি
শবে কদর হচ্ছে ফরাসি শব্দ আর আর আরবি পরিভাষায় হচ্ছে লাইলাতুল কদর অর্থাৎ পবিত্র রজনী বা মহিমান্বিত রাত। শবে কদর রাতে যদি কেউ ইবাদত করে তবে সেই ইবাদতে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে অধিক সওয়াব লাভ করা যায়।
আরো পড়ুনঃ রমজানের খাদ্য তালিকায় কি কি খাবার রাখবেন
এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য পবিত্র কোরআন মাজিদে "সূরা কদর" নামে একটি সূরাও নাযিল
হয়েছে। সবে কদরের রাতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন।
শবে কদর অর্থ কি
শবে কদর অর্থ সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। শবে কদর শব্দটি ফারসি শব্দ।শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ ,সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। তাই শবে কদর অর্থ হল উত্তম রজনী বা মর্যাদাপূর্ণ রাত।
এই রাতের ইবাদত সকল মাসের এবাদতের চেয়ে উত্তম। এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য পবিত্র কোরআন মাজীদে "সূরা কদর" নামে একটি সূরা নাযিল করা হয়েছে। নিম্নে শবে কদরের দোয়া, ফজিলত ও নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
শবে কদরের দোয়া
কোরআন নাজিলের মাসে ক্ষমা ও রহমত কামনায় কোরআনের এই দোয়াগুলো বেশি বসি পড়া
যেতে পারে। নিম্নে সে সকল দোয়া গুলো আলোচনা করা হলোঃ
উচ্চারণঃ রাব্বানাকশিফ অন্নাল আযাবা ইন্না মুমিনুন।
অর্থঃ এ আমাদের পালনকর্তা। আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন,
আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি। (সূরা দুখান ;আয়াত ১২)
উচ্চারণঃ রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমীন।
অর্থঃ হে আমার প্রভু! (আমাকে )ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই
তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারি। (সূরা মুমিনুল; আয়াত ১১৮)
উচ্চারণঃ রাব্বি ইন্নি জালামতু নাফসি ফাগফিরলি।
অর্থঃ হে আমার প্রভু। নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি
আমাকে ক্ষমা করুন। (সূরা কাসাস ;আয়াত ১৬)
উচ্চারণঃ রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়াকিনা
আজাবান্নার।
অর্থঃ হে আমার রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গুনাহ
ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করো। (সূরা আল ইমরান
;আয়াত ১৬)
উচ্চারণঃ রাব্বানা আতিনা ফেদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও
ওয়াকিনা আজাবান্নার।
অর্থঃ হে পরওয়ারদিগার! আমাদিগকে দুনিয়াতে ও কল্যাণ দান করো এবং আখিরাতেও
কল্যাণ দান করো এবং আমাদেরকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করো।
উপরোক্ত দোয়াগুলি ছাড়াও আরো এমন অনেক দোয়া রয়েছে কোরআনে, যা আপনারা শবে কদরের
রাত্রে বেশি বেশি আমল করতে পারেন। এতে করে আপনাদের পূর্বের সকল গুনাহ মাফ হবে এবং
অনেক পণ্যের ভাগীদার হবেন।
শবে কদরের ফজিলত
শবে কদরের ফজিলতের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের
চেয়েও উত্তম রাত। পবিত্র কুরআনুল কারীম নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহু রাব্বুল আলামিন
এই রাতকে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ উত্তম ও মহিমান্বিত রাত হিসেবে আমাদের জন্য
দান করেছেন। রমজানের শেষের দশকের রাতগুলোর মধ্যে এক বিজর রাত হল ভাগ্য নির্ধারণ
বা লাইলাতুল কদরের রাত।
শবে কদর নামাজের নিয়ম
লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম, বিশেষ করে এ নামাজের কোন নিয়ম বা পদ্ধতি নেই। লাইলাতুল কদরের রাতে দুই রাকাত করে নফল নামাজ যত সুন্দর ও মনোযোগ সহকারে পড়া যায় ততই ভালো। দুই রাকাত দুই রাকাত করে আপনি যত খুশি তত নামাজ পড়তে পারেন।
আরো পড়ুনঃ রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয়
এছাড়াও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা ,দোয়া পড়া,
ইস্তেগফার ,তসবি -তাহলিল, তওবা করতে পারেন। এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা
প্রার্থনা করবেন।
শবে কদর কবে
শবে কদরের দোয়া, ফজিলত ও নামাজের নিয়ম এটার মাধ্যমে জানুন শবে কদর কবে।রমজানের
২৭ তারিখ অর্থাৎ ২৬ রমজান দিবাগত রাত লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা অন্য বেজোড়
রাতে চেয়ে বেশি। এর সম্পর্কেও হাদিস একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যেঃ হযরত
আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি কদরের রাত
অর্জন করতে ইচ্ছা করো, সে যেন তা ২৬ রমজান দিবাগত রাত তথা ২৭ রমজানে অনুসন্ধান
করে।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস হলো, সমস্ত রজনী আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদর
দ্বারাই সৌন্দর্য ও মোহনীয় করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা এই বরকতময় রজনীতে বেশি
বেশি তাসবিহ -তাহলিল ও ইবাদত -বন্দেগীতে রত থাকো। অন্য আরেকটি হাদিসে
বলেছেন, তোমরা তোমাদের রব কে আলোকিত পেতে চাইলে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর রাতে
জেগে রাত ব্যাপি ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দাও।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাত টি পাওয়ার জন্য শেষের দশকে আজীবন ইতেকাফ করেছেন। উম্মতের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কদরের রাতের সন্ধানে রমজানের প্রথম দশ দিন ইতিকাফ কাজ করলাম।
এরপর ইতিকাফ করলাম পরবর্তী ১০ দিন। তারপর আমার প্রতি ওহী নাযিল করে জানানো হলো যে, তা শেষ দশ দিনে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে সে যেন ইতিকাফ করে।
শবে কদরের আমল
শবে কদরের দোয়া, ফজিলত ও নামাজের নিয়ম এই আর্টিকেল থেকে আপনারা জানুন শবে কদরের
আমল সম্পর্কে।শবে কদরের আমল নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- নফল নামাজ পড়া
- রাতে তারাবির নামাজ পড়া
- মসজিদে ঢুকে দুই রাকাত (দুখুলিল মসজিদ) নামাজ পড়া
- রাত শেষ রাতে সেহেরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া
- সম্ভব হলে সালাতুল তাজবি পড়া
- সম্ভব হলে সালাতুল শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ বেশি বেশি পড়া
- তাওবার নামাজ পড়া
- কোরআন তেলাওয়াত করা
- সূরা কদর, সূরা দুখান, সুরা ইয়াসিন, সূরা তোহা, সূরা আর রহমান, সূরা ওয়াকিয়া, সূরা মূলক, সূরা কুরাইশ এবং ৪ কুল পড়া।
- দরুদ শরীফ পড়া
- জিকির আজগার করা
- তাওবা ইস্তেগফার পড়া
- কোরআন সুন্নাহয় বর্ণিত দোয়া পড়া
- বেশি বেশি দান-সাদকা করা
- পরিবার পরিজন বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা কবর জিয়ারত করা।
কদর নামাজের নিয়ত
কদর নামাজের নিয়ত নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
উচ্চারণঃ"নাওয়াইতুয়ান উছল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকা আতাই ছলাতি
লাইলাতুল কদর নফলী, মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লা হু
আকবার"
লাইলাতুল কদর এর সূরা
লাইলাতুল কদরের সূরা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইন্না আনযালনাহু ফি লাইলাতিল কদর। অমা আদরা কামা লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কাদরী
খাইরুম মিন আলফি শাহর। তানাযযালুল মালায়িকাতু অররুহু ফীহা বিইযনি রাব্বি
হিমমিন কুল্লি আমরি। সালামুন হিয়া হাওমাতব লাইল ফাজর।
আরো পড়ুনঃ রমজান মাসের করণীয় আমল সম্পর্কে জানুন
বাংলা অর্থঃ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
নিশ্চয় আমি এটা (কোরআন)কদর রাতে নাযিল করলাম। আর আপনি কি জানেন, মহিমান্বিত রাত কি? কদর( মহিমান্বিত) রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতা ও রুহ (জিব্রাইল)( দুনিয়াতে) অবতীর্ণ হয়,স্বীয় রবে নির্দেশে। সে রাতে সম্পূর্ণ শান্তি, ফজর পর্যন্ত বিরাজিত থাকে।
শবে কদরের নামাজ কয় রাকাত
শবে কদরের দোয়া, ফজিলত ও নামাজের নিয়ম এ প্রসঙ্গে আর জানবো শবে কদরের নামাজ কয় রাকাত।শবে কদরের নামাজ রাকাত সংখ্যা উল্লেখ করা নেই।তবে শবে কদরের নামাজ দুই রাকাত করে যত বেশি পড়া যায় তত সওয়াব পাওয়া যায়।
নামাজের প্রতি রাকাতের সূরা ফাতিহা সাথে সূরা ইখলাস সূরা কদর আয়াতুল কুরসি অথবা
সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়ায় অধিক সওয়াব পাওয়া যায়। এই নিয়মে ১২
রাকাত নামাজ বা এর চেয়ে বেশি আদায় করতে পারেন। তাছাড়াও প্রতি চার রাকাত নামাজ
পর পর তাসবিহ- তাহলিল, কোরআন পড়ে মহান আল্লাহ তা'আলা নিকট দোয়া কামনা করা অতি
উত্তম।
শেষ কথা
পাঠক বন্ধুরা, এই আর্টিকেলটিতে আজ আমরা আলোকপাত করেছি,শবে কদরের দোয়া, ফজিলত ও নামাজের নিয়ম নিয়ে। আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।শবে কদরের দোয়া, ফজিলত ও নামাজের নিয়ম এটার মাধ্যমে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের পেজটি ফলো করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url