গরমে শিশুর যত্ন - গরমে শিশুর খাবার


গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় আমাদের ছোট্ট সোনামণিরা। তাই গরমে শিশুর যত্ন - গরমে শিশুর খাবারএর দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। যাতে করে গরমে শিশুর যত্ন - গরমে শিশুর খাবার এর কারণে শিশু না অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আবার আপনারা গরমে শিশুর যত্ন - গরমে শিশুর খাবার সম্পর্কে এই পোস্টটির মাধ্যমে কিছুটা ধারণা নিতে পারবেন।

তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক  গরমে শিশুর যত্ন - গরমে শিশুর খাবারএই সম্পর্কে। আপনারা এ সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন, গরমে শিশুর যত্ন, গরমে শিশুদের যে ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, সমস্যা বেশি হলে কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন, শিশুদের সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ, গরমে শিশুর খাবার, গরমে শিশুদের কি খাওয়ানো উচিত না এগুলো সম্পর্কে এগুলো সম্পর্কে।

গরমে শিশুর যত্ন 

গরমে সবচেয়ে কষ্ট পায় আমাদের পরিবারের ছোট্ট সোনামণিরা। তাই গরমে শিশুর যত্ন নেওয়া অধিক প্রয়োজন। নিম্নে গরমে শিশু যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

শিশুকে বেশি বেশি পানি পান করাবেন

শিশুদের অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায় ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। তাই সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর বাচ্চাকে পানি অথবা ফলের রস খাওয়াতে হবে। এছাড়া শিশুর পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সিজিনাল ফলক খাওয়াতে পারেন।

 আরো পড়ুনঃ গরমে ত্বকের ৫টি সমস্যা এবং সমাধান

তাছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্যালাইন কিংবা গ্লুকোজ ও দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেসব শিশু বয়স ৬ মাসের কম তাদের ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুটি যথেষ্ট। সেজন্য কিছু সময় পর পর বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চা খেতে না চাইলেও বারবার অল্প অল্প করে হলেও খাওয়াতে হবে।

বাচ্চাকে আরামদায়ক সুতি কাপড় পরান

গরমে বাচ্চাকে আরাম দিতে সুতি  কাপড়ের জামা কিংবা প্যান্ট বাচ্চাকে পড়াতে পারেন। কোন ফ্যাশনেবল জামা কাপড় না পরিয়ে বাচ্চাকে ঢিলা ঢালা আরামদায়ক সুতি কাপড় এর জামা পরান। কারণ সুতি কাপড়ের পানি শোষণের ক্ষমতা বেশি, যদি বাচ্চা গরমে ঘেমে যায় তাহলে সুতি কাপড় তা শোষণ করে নিবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা যদি অতিরিক্ত গরমে অধিক ঘেমে যায় তবে সাথে সাথে জামা কাপড় খুলে শরীর মুছে দিতে হবে এবং অন্য কাপড় পরাতে হবে।

শিশুকে সহজপাচ্য নরম খাবার দিন

ছয় মাসের বেশি বাচ্চাদের জন্য খাবার নির্বাচনে যথেষ্ট যত্নবান হতে হবে। আপনারা চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খাওয়াতে পারেন। সহজে পরিপাক ও শোষণ হবে এমন ধরনের সবজি, খিচুড়ি ,শাক বাচ্চাদের দিতে পারেন। বাচ্চাদের যতটা সম্ভব নরম এবং তরল খাবার দিন। গরমে বাচ্চাদের তেল মসলা জাতীয় খাবার থেকে এড়িয়ে চলুন।

বাচ্চাদের নিয়ে দূরপাল্লার ভ্রমণ পরিত্যাগ করুন

আমরা মানে বড়দের তুলনায় শিশুদের ত্বক অধিক নাজুক হয় ।তাই গরমে বাচ্চাদের নিয়ে দূরপাল্লা ভ্রমণে যাওয়া মোটেই উচিত নয়। বাস বদ্ধ গাড়ি ভ্রমণ বাচ্চাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। প্রয়োজন হলে আপনারা নদীপথে লঞ্চ জার্নি করে যেতে পারেন।

কড়া রোদ থেকে রক্ষা করুন

শিশু যদিবাহিরে যায় তবে গায়ে রোদ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আর এর ফলে ঘেমে গিয়ে তা থেকে অসুস্থ হওয়া স্বাভাবিক। তাই বাইরে শিশুকে নিয়ে যেতে হলে হাতে ছাতা নিয়ে বের হওয়া ভালো। তাছাড়াও মাথায় টুপি বা পাতলা কাপড় দিয়ে শিশুর মাথা ঢেকে নিয়ে যেতে পারেন। এবং সাথে পানি রাখুন, একটু পর পর বাচ্চাকে পানি পান করান।

নিয়মিত গোসল করান

অনেকেই আছেন যারা বাচ্চাদের নিয়মিত গোসল করান না ঠান্ডার ভয়ে। এই প্রচন্ড গরমে অবশ্যই আপনারা বাচ্চাকে ভালো মতো প্রতিদিন গোসল করাবেন। যদি মনে হয় ঠান্ডা অতিরিক্ত পানি তাহলে পানি একটু কুসুম গরম করে তা ব্যবহার করবেন। গোসলের পর ভালোভাবে বাচ্চাকে মুছিয়ে দিবেন। ভেজা চুল থাকলে ঠান্ডা লেগে সর্দি কাশি হতে পারে ।তাই ফ্যানের নিচে দাঁড় করিয়ে ভালোভাবে গা মাথা মুছিয়ে দিন।

ঘরে খেলার ব্যবস্থা করে দিন

পাঁচ বছরের উপরের বাচ্চারা যারা বিকেলে বাইরে খেলতে যাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের ঘরে খেলার ব্যবস্থা করে দিন। খেলাধুলা শারীরিক মানসিক বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অতিরিক্ত রোধ গরমে দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটি করলে শিশু ঘেমে গিয়ে ঠান্ডা লাগতে পারে এতে করে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়বে। এর জন্য ঘরেই ফ্যানের নিচে শিশুর খেলাধুলার ব্যবস্থা করুন।

বাচ্চা চুল কেটে ছোট করে দিন

বাচ্চাদের শরীরের সাথে সাথে মাথার ত্বক ভাবতে থাকে। ফলে চুলের গোড়া ঘেমে গিয়ে তাতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। এমনকি খুশকি ও হতে পারে। তাই যতটুকু সম্ভব হয় চুল কেটে ছোট করে দিবেন। এর ফলে মাথা ঘামলেও তা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। এবং বাচ্চাকে নিয়মিত মাথায় সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করাবেন।

ঘরের ভেতরে আলো বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন

বাচ্চাদের ঘরে আলো বাতাস পর্যাপ্ত পরিমাণে আসছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেজন্য দরজা জানালা যত দূর সম্ভব খোলা রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে শিশুকে বারান্দায় বসিয়ে খেলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

গরমে শিশুদের যে ধরনের সমস্যা দেখা দেয়

গরমে শিশুদের যে ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে নিম্নে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

আরো পড়ুনঃ চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়

  • গরমে বাচ্চাদের মাথা ঘেমে গিয়ে চুলে খুশকি হতে পারে।
  • বাচ্চাদের চামড়ার রেশ বা ঘামাচি হতে পারে অতিরিক্ত গরমে।
  • এই গরমে অধিক সময় ডাইপার পড়ে থাকলেও রেশ হতে পারে।
  • গরমে হজম শক্তি ব্যাহত হয়ে বাচ্চার পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হতে পারে।
  • ঘামের ফলে শরীর থেকে লবণ পানি বের হয়ে যায় ফলে পানি শূন্যতা হতে পারে।
  • ঘামে শরীর থেকে পানি বের হওয়ার কারণে সোডিয়াম ,পটাশিয়াম বা ইলেক্ট্রোলাইট এর ঘাটতিজনিত সমস্যা হতে পারে।
  • শিশুদের অতিরিক্ত ঘামার ফলে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ,নিউমোনিয়া বা ঠান্ডা লাগতে পারে।

সমস্যা বেশি হলে কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন

আপনাদের সতর্কতা থাকার ফলেও যদি বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ে ।তাহলে দেরি না করে যতদূর সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। নিম্নে যে সকল সমস্যা বেশি হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

  • হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই গায়ে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া
  • অতিরিক্ত পানির পিপাসা
  • শিশুর চেহারা দেখে অসুস্থ বলে মনে হলে
  • বারবার বমি কিংবা পাতলা পায়খানা করলে
  • খেতে একেবারে না চাইলেই
  • প্রসবের পরিমাণ কমে গেলে
  • চোখ বসে গেলে অথবা জিব্বা শুকনো হয়ে গেলে
  • শিশুর মধ্যে যদি নিজ দেশ ভাব দেখা দেয় অথবা কোন কারণ ছাড়াই খেলাধুলা না করে

এ সমস্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনারা দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ।অথবা নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।

শিশুদের সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ 

আপনার ছোট্ট সোনামণিকে সুস্থ রাখতে কিছু প্রয়োজনীয় টিপস বা পরামর্শ সম্পর্কে আলো চোনা করা হলোঃ

  • শিশুকে নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করাবেন
  • গোসলের পর শিশুর শরীর ভালো করে মুছে দিন
  • শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন
  • শিশুর ঘামাচির উপদ্রব্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘামাচি নাশক পাউডার ব্যবহার করুন
  • বাচ্চাকে প্রচুর পানি পান করান
  • সুতি পাতলা কাপড়ের নরম পোশাক পরান
  • গরমে শিশু দুর্বলতা কাটাতে মাঝে মাঝে খাবার স্যালাইন খেতে দিন
  • শিশুকে ধুলাবালি থেকে দূরে রাখুন
  • বাইরের গরমে শিশুকে কম বের করুন
  • শিশু যদি ঘেমে যায় তাহলে ঘাম মুছে দিন। কারণ ঘাম বসে আবার শিশুর জ্বর হতে পারে
  • গরমে শিশু চুল কেটে ছোট করে দিন
  • শিশুর যেন পর্যাপ্ত ঘুম হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন

গরমে শিশুর খাবার 

গরমে শিশুর খাবার সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুবই জরুরী। গরমে শিশুকে সহজপাচ্য ও নরম খাবার খেতে দিন। নিম্নে গরমে শিশুর খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

লেবুর শরবত

লেবু ভিটামিন সি-এর অন্যতম বড় উৎস। এমনিতেই শিশুদের নিয়মিত ভিটামিন সি খাওয়ানো উচিত। গরমে লেবু শরবত শিশুর ভীষণ উপকারী একটি পানীয় হতে পারে। কারণ ভিটামিন সি গরমের শিশুকে শক্তি যোগানোর পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই শিশুদের লেবুর শরবত খাওয়ানো উচিত।

ছাতুর শরবত

গরমে শিশু শরীর ঠান্ডা রাখতে কার্যকর ছাতুর শরবত। শিশুদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ছাতুর শরবত রাখুন ।কারণ এটি শিশু শরীর ঠান্ডা রেখে শরীরে পুষ্টি পৌঁছে দেবে।

তরমুজ

গরমের তীব্রতায় মন প্রাণ জুড়াতে তরমুজের জুড়ি নেই। তাছাড়া এই তরমুজে রয়েছে ৯২% পানি। যা খেলে শরীরে পানি শূন্যতা দূর হয়। তাই গরমে পানি শূন্যতা দূর করতে তরমুজ খেতে হবে নিয়মিত। এই গরমে শিশুকে নিয়মিত তরমুজ খেতে দিন ।এতে শরীর ভেতর থেকে আদ্র থাকবে।

আরো পড়ুনঃ চুলের সৌন্দর্য ও যত্নে আদা কেন উপকারী 

দই

এই গরমে শিশু পেটের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। পেটে নানান সমস্যা দূর করতে শিশুকে নিয়মিত দই খাওয়াতে পারেন। দুই হজমের সমস্যা মিটিয়ে শরীর ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে। বাচ্চারা টক দই খেতে না চাইলে তাদের মিষ্টি দই খাওয়াতে পারেন। এছাড়াও দইয়ের লাচ্ছি তৈরি করে বাচ্চাদের খেতে দিতে পারেন।

গরমে শিশুদের কি খাওয়ানো উচিত না

গরমে শিশুদের ঝাল মসলা জাতীয় খাবার একেবারে খাওয়ানো উচিত নয়। এতে করে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও বাচ্চাদের চিপস, বাদাম ,পাপড়, চানাচুর, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি না খাওয়ানোই উচিত। কারণ এর ফলে বাচ্চাদের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,গরমে শিশুর যত্ন - গরমে শিশুর খাবার এই পোস্টটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। আশা করছি গরমে শিশুর যত্ন - গরমে শিশুর খাবার এই পোস্টটির মাধ্যমে শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু টিপস আপনারা পেয়ে যাবেন।গরমে শিশুর যত্ন - গরমে শিশুর খাবার এই পোস্টটির মাধ্যমে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।-ধন্যবাদ


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url