আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ


আজ আমরা আলোচনা করব আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। আম একটি খুবই সুস্বাদু ফল। আম পাকা হোক বা কাঁচা দু ধরনের আমই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী । একজন সুস্থ মানুষ যদি প্রতিদিন একটি কাঁচা আম খায় তবে তার ভিটামিন সি এর দৈনিক চাহিদার ৫০ ভাগ পূরণ হয়। আমরা অনেকেই হয়তো আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানিনা, বা জানলেও অতটা ভালোভাবে জানিনা। তাই তো আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ভালোভাবে জানবো।
তাহলে আসুন জেনে নেই আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এই প্রসঙ্গে আমরা আরো জানবো, আমের উপকারিতা, ক্যান্সার যোদ্ধা, ত্বকের জন্য, কোলেস্টরেল ঠিকঠাক, চোখের জন্য, ওজন কমাতে, হজমের জন্য, হিটস্টক ঠেকাতে, মনোযোগ ও স্মৃতি বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ঘুমে সহায়ক, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে, ত্বক ও চুলের যত্নে, হৃদরোগে ঝুঁকি কমাতে, আম খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা, আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

আমের উপকারিতা 

আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এ প্রসঙ্গে আমরা জানবো আমের উপকারিতা সম্পর্কে। পাকা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, যা শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করতে এবং হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। 

আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা

তাই যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে তারা প্রতিদিন অল্প পরিমাণ হলেও আম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আবার যাদের হাড়ের সমস্যা আছে তাদের জন্য আম বেশ উপকারী একটি ফল। নিম্নে আমের উপকারিতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ক্যান্সার যোদ্ধা 

আমে রয়েছি কোয়েরসেটিন, ফাইসেটিন, গ্যালিক অ্যাসিড, মিথাইল গ্যালেট নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । এগুলো স্তন ক্যান্সার থেকে শুরু করে ক্লোন ক্যান্সার ,পটেস্ট ক্যান্সার ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

ত্বকের জন্য

আম ত্বককে ভিতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে । আম বিশেষ করে ত্বকের ফুসকুড়ি দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

কোলেস্টরেল ঠিকঠাক

আমে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি ,ফাইবার ও প্যাকটিন থাকায় রক্তের উচ্চমাত্রার কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

চোখের জন্য 

আমরা ছোটবেলা থেকেই পড়ে আসছি আমের ভিটামিন এ আমাদের রাতকানা থেকে রক্ষা করে। তবে বর্তমান সময়ে রাতকানা রোগ নেই বললেই চলে ।তবে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বেশি বেশি আম খেলে ক্ষতি নেই। আবার যারা ড্রাই আই সমস্যায় ভুগছেন তারা আম খেলে উপকার পেতে পারেন।

ওজন কমাতে

আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা খেলে রোজগার ভিটামিনের চাহিদা মিটে যাওয়ার কথা। তাছাড়াও আমে রয়েছে ফাইবার যা শরীরে পুষ্টি ও শক্তি যোগাবে। তাই এই মৌসুমে যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন তারা বার্গার, কোলড্রিংস এগুলোর বিকল্প হিসেবে আম খেতে পারেন।

হজমের জন্য

আম হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আমে থাকা এনজাইম গুলো প্রোটিন উপাদান গুলোকে সহজে ভেঙে ফেলতে পারে ।

আরো পড়ুনঃ বরই ও বরই পাতার উপকারিতা

 ফলে এতে করে খাবার হজম হওয়ার দ্রুত। তাছাড়াও বাঁচা যায় পাকস্থলীর সংক্রমণ অনেক রোগ থেকেও।

হিটস্টক ঠেকাতে

গরমে হিটস্টক একটি সাধারন ঘটনা। আম শরীরকে শীতল রাখে ।আম আমাদের ভেতরটা শীতল রাখে ও শরীরকে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া থেকে শরীরের ভেতরের অঙ্গ গুলোকে বাঁচায়।

মনোযোগ ও স্মৃতি বৃদ্ধি করে 

আম মেমোরি বুস্টার হিসেবে কাজ করে। আম মনোযোগ ও স্মৃতি বৃদ্ধি করতে বেশ সহায়ক। কোন কিছুর প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হলে এর সমাধান দেবেন আম।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 

আম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়াও সহ যোদ্ধা হিসেবে ভিটামিন সি তো রয়েছে।

ঘুমে সহায়ক 

আম অনিদ্রা দূর করে। আমি রয়েছে টিপটোফ্যান, মেলটোনিন ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের ঘুমকে ত্বরান্বিত করে।

দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে 

আমরা ছোটবেলা থেকেই পড়ে আসছি আমের ভিটামিন এ আমাদের রাতকানা থেকে রক্ষা করে। তবে বর্তমান সময়ে রাতকানা রোগ নেই বললেই চলে ।তবে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বেশি বেশি আম খেলে ক্ষতি নেই। আবার যারা ড্রাই আই সমস্যায় ভুগছেন তারা আম খেলে উপকার পেতে পারেন।

ত্বক ও চুলের যত্নে

আম ভিটামিন এ ,সি ও ই এর অন্যতম মাধ্যম যা ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।

হৃদরোগে ঝুঁকি কমাতে

আমে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম ও ফাইবার যার শরীরে গ্লুকোজ ,কোলেস্টরেল ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া আম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে হৃদপিন্ডের সার্বিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এ প্রসঙ্গে আমরা হৃদরোগে ঝুঁকি কমাতে আমের ভূমিকা সম্পর্কে জানব।

  • আম কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • আমে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এটি স্কার্ভিসহ অন্যান্য মুখের ঘা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • আম ত্বক, হাড় ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
  • আমের গুটামিক এসিড স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • আমে উপস্থিত ফলেট ও আয়রন শরীরের রক্তকণিকা গঠন করতে সাহায্য করে।
  • আম রক্ত স্বল্পতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • আম খেলে ভালো ঘুম হয়।
  • আম স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতার ভূমিকা রাখে।

আম খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা 

আমে উপকারী গুনাগুন থাকলেও এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

  • অতিরিক্ত আম খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • আম ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে, পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে খেতে হবে।
  • আম খাওয়ার সময় এর সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ ও মরিচ মেশানো যাবে না, ফলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হবে।
  • আম খাওয়ার পরপরই পানি খাওয়া যাবেনা।

আমের পুষ্টিগুণ

 আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এর মাধ্যমে আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

আরো পড়ুনঃ কাঁচা মরিচ খাওয়ার উপকারিতা

  • গাছ পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ রয়েছে। যা আমাদের শরীরে দাঁত ,নখ ও চুল ইত্যাদি মজবুত করার জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে।
  • সাধারণত পাকা আম ত্বকের লোমের গোড়া পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।ফলে আম মুখের ও নাকের ওপর জন্মানো ব্ল্যাকহেডস দূর করতে অনেক আংশের সাহায্য করে।
  • যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পাকা আম খান তাহলে আপনার মুখের কালো দাগ দূর হবে।
  • পাকা আম আমাদের ত্বকে সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃণ করে। এটি আমাদের ত্বকের ভিতর ও বাইরে উভয়ভাবেই সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
  • আম আমাদের ত্বকের লোমের গোড়া পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ও ব্রণের সমস্যার সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • আমের উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আমের পুষ্টি উপাদান। পাকা আমের আসে কিছু উপাদান যেমন-ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা হজমের সাহায্য করে। আমে আছে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম, এটা আমাদের শরীরের প্রোটিন অণুগুলো ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে যা হজম  শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
  • আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন আমাদের শরীরে স্নায়ু গুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে সাহায্য করে ।আমাদের শরীরকে রাখে পুরোপুরি সতেজ যার ফলে খুব দ্রুত ঘুম আসতে সাহায্য করে।
  • আমে রয়েছে ব্যাটাকেরোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম। এসব উপাদান পরিমানে পর্যাপ্ত থাকায় পাকা আম হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • আমাদের হাটকে সুস্থ ও সবল রাখতে আম বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • আমে প্রচুর পরিমাণে এসিড থাকে যেমন টারটারিক অ্যাসিড ,ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড যা আমাদের শরীরে অ্যালকালাইন বা ক্ষার ধরে রাখতে সহায়তা করে।
  • আপনি যদি প্রতিদিন এক কাপ আম খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার শরীরে ভিটামিন এ এর চাহিদা প্রায় ২৫ শতাংশের যোগান দিতে পারবে। ভিটামিন এ আমাদের চোখের জন্য খুবই কার্যকরী। এটি আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে।
  • আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • পাকা আম আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার এ সহায়তা করে। আমের মধ্যে থাকা  টারটারিক অ্যাসিড ,ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড যা আমাদের শরীরে অ্যালকালাইন বা ক্ষার ধরে রাখতে সহায়তা করে।
  • আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ।তবে পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আমাদের দাঁত ও হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। 
  • পাকা আম পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়া এটি আমাদের হার্টবিট ও রক্তস্বল্পতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • উপউক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝতেই পারছেন আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এর উপকারিতা অপরিসীম। তাই এই আমের সিজনে আপনি এবং আপনারা বা পরিবারের সদস্যরা মিলে আম খান। তবে অবশ্যই পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত আম খাবেন। কারণ বাজারে ফরমালিন যুক্ত আমের উপকারিতা থেকে অপকারিতায় বেশি ।তাই এই বিষয়ে সাবধান।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ, এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। আম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা কি কোন উপকৃত হয়েছেন। যদি হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।= ধন্যবাদ


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url