মাথা ব্যাথা হলে করণীয় - মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা


মাথা ও ঘাড়ের ব্যথা মূলত আমাদের কাছে মাথাব্যথা নামে পরিচিত। মস্তিষ্ক ও মাথার ঘাড়ের আবরণে চারপাশের রক্তনালি নার্ভ ও তাদের আবরণ, মাথার চামড়া নিচের মাংসপেশী, চোখ, কান ,সাইনাস ও ঘাড়ের মাংসপেশীর ইত্যাদি প্রদাহ এবং টানই মূলত মাথাব্যথা। মাথাব্যথা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রাইমারি হেডেক এবং সেকেন্ডারি হেডেক। আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা আলোচনা করব মাথা ব্যাথা হলে করণীয় - মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে।
তাহলে বন্ধুরা জেনে নিন মাথা ব্যাথা হলে করণীয় - মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে। মাথা ব্যাথা হলে করণীয় - মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা এ প্রসঙ্গে আমরা আরও জানব, মাথা ব্যথা কি , মাথা ব্যাথা হলে করণীয়, ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি, গ্যাস থেকে মাথাব্যথা, মাথা ব্যথার ঔষধ, কখন ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেওয়া উচিত, বাম পাশে মাথা ব্যাথার কারণ, বিভিন্ন ধরনের মাথা ব্যথার কারণ উপসর্গ, মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা এগুলো সম্পর্কে।

মাথা ব্যথা কি  

মাথা ও ঘাড়ের ব্যথা মূলত আমাদের কাছে মাথাব্যথা নামে পরিচিত। মস্তিষ্ক ও মাথার ঘাড়ের আবরণে চারপাশের রক্তনালি নার্ভ ও তাদের আবরণ, মাথার চামড়া নিচের মাংসপেশী, চোখ, কান ,সাইনাস ও ঘাড়ের মাংসপেশীর ইত্যাদি প্রদাহ এবং টানই মূলত মাথাব্যথা। মাথাব্যথা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ

প্রাইমারি হেডেক এবং সেকেন্ডারি হেডেক। মাইগ্রেন, দুশ্চিন্তার কারণে মাথাব্যথা, কাজটা হেডেক ইত্যাদি হলো প্রাইমারি হেডেক। আর সাইনোসাইটিস, স্টক, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথার আঘাত জনিত কারণে ব্যথা হল সেকেন্ডারি হেডেক।

মাথা ব্যাথা হলে করণীয়

মাথা ব্যাথা হলে করণীয় হিসেবে লেভেন্ডার বা পিপারমেন্টের মত সুগন্ধি ফ্লেভারের তেল দিয়ে মাসাজ করলে অনেক সময় মাথা ব্যথা কমে যায়। আবার অনেক সময় চা বা কফি খেলে মাথা ব্যথা কমতে থাকে কারণ এতে থাকা বিশেষ ধরনের ক্যাফেইন মাথার যন্ত্রণা কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। 

আবার অনেক সময় চায়ের সাথে আদা লবঙ্গ মধু মিশিয়ে খেলেও মাথার যন্ত্রণা বা ব্যথায় অনেকটা আরাম পাওয়া যায়। অসহ্য মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অনেক সময় গোসল দেওয়া ভালো। 

ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি

অনেক সময় ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে দায়ী হতে পারে অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া,  শারীরিক মানসিক পরিশ্রম, রোদ ,অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন ,ক্ষুধার্ত থাকা, মানসিক চাপ , মদ্যপান, ধূমপান, মাদকাসক্তি ইত্যাদি।মাথাব্যথার মধ্যে মাইগ্রেন আর টেনশন খুবই পরিচিত। এর মধ্যে ৭০% টেনশন টাইপ হেডেক আর ১১ শতাংশের জন্য দায়ী মাইগ্রেন।

গ্যাস থেকে মাথাব্যথা 

কলকাতার ফটিস হাসপাতালের বৈশিষ্ট্য মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়দীপ ঘোষের কথায়, আসলে বাঙ্গালীদের মধ্যে পেটের গ্যাস নিয়ে বেশি সচেতনতা। আমরা গ্যাসের সঙ্গে সব রোগ জড়িয়ে ফেলি। তবে মনে রাখবেন মাথায় গ্যাস পৌঁছানো সম্ভব নয়।

তাই গ্যাস থেকে মাথা ব্যাথা হওয়ার কোন আশঙ্কাও নেই। তাই বেশিরভাগ মানুষ যা জানেন তা সবটাই ভুল। তাই শুধরে যেতে হবে। নিয়মিত মাথা ব্যথা বা যন্ত্রণা হলে ফেলে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফেলুন ।তবে রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

মাথা ব্যথার ঔষধ

বেশিরভাগ মাথা ব্যথাই ওষুধের মাধ্যমে সারানো সম্ভব। আমাদের দেশে অনেক ধরনের মাথা ব্যথার ওষুধ পাওয়া যায় এগুলো হচ্ছেঃ

  • নাপা
  • নাপা এক্সট্রা
  • এইচ
  • প্যারাসিটামল
  • লজরিন
  • আরিন
  • মিনোপা
  • টাফনিল
  • টলমিক
  • মাইগান
  • নামিটোল

কখন ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেওয়া উচিত 

মাথা ব্যথা হলে করণীয় - মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা এ প্রসঙ্গে আমরা জানবো কখন ডাক্তারের কাছে মাথা ব্যাথা হলে পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

  • মাথা ব্যাথার ধরন পাল্টাতে থাকলে।
  • প্রচন্ড মাথা ব্যথা হলে।
  • মাথা ব্যাথা দিনকে দিন খারাপের দিকে যেতে থাকলে।
  • মাথায় বাড়ি খাওয়ার অনুভূতির পর মাথা ব্যথা শুরু হলে।
  • মাথা ব্যাথার ফলে প্রতিদিনের কার্যক্রম বিঘ্নিত হলে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির মানসিক কার্যকারিতা ও ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসলে।

বাম পাশে মাথা ব্যাথার কারণ

কোন কোন সময় বাম পাশের মাথা ব্যথা প্রাইমারি হেডেক নয়। তবে এটা কোন রোগের লক্ষণও হতে পারে। এটা কখনো কখনো হতে পারে সিরিয়াস এবং মারাত্মক।

যে সকল সিরিয়াস কারণে বাম পাশে মাথা ব্যাথা হতে পারে সেগুলো হলোঃ

  • রক্তনালীর সমস্যা
  • প্রদাহজনিত রোগ
  • আঘাত
  • আবার কোন কোন সময় সাধারণ কারণে বাম পাশে মাথা ব্যাথা হতে পারে সেগুলো হল
  • সাইনাস
  • পেইন কিলার এর উপর বেশি নির্ভরতা

বিভিন্ন ধরনের মাথা ব্যথার কারণ উপসর্গ 

মাথা ব্যাথা হলে করণীয় - মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা এর মাধ্যমে আমরা আলোচনা করব বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা কারণ ও উপসর্গ নিয়ে।বিভিন্ন ধরনের প্রাথমিক মাথা ব্যথার কারণ ও উপসর্গ নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

মাইগ্রেন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সারা বিশ্বে ১৪ শতাংশ মাইগ্রেনে আক্রান্ত। মাইগ্রেনে স্থানপৃথিবীতে তৃতীয়। বাঁ পাশের মাথাব্যথা মূলত মাইগ্রেনে কারণে হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার

মাইগ্রেন ফলে মাথায় প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। মাথায় ধরপরানি শুরু হয় এবং মাথার এক পাশ যন্ত্রণা করে ।ব্যথা শুরু হয় চোখের চারপাশ বা লোলাট থেকে এবং তারপর মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।

উপসর্গ

যে সকল সমস্যাকে মাইগ্রেন হিসেবে ধরতে হলে এসব উপসর্গ থাকতে হবে। যেমন,

  • মাথা ঘোরা
  • বমি বমি ভাব
  • শব্দ, আলো, ছায়া বা গন্ধের প্রতি চরম সংবেদনশীলতা
  • দৃষ্টি বদলানো
  • মুখোমন্ডলে অবুঝ ভাব

যে সকল কারণে মাইগ্রেন শুরু হতে পারে। যেমন,

  • প্রচন্ড শব্দ যা অনেকক্ষণ ধরে হচ্ছে
  • পারফিউম বা আতরের তীব্র গন্ধ
  • খুব বেশি আলো কিংবা কেঁপে কেঁপে চলা লাইট
  • মানসিক চাপ
  • যে কোন খাবার যেমন পনির, চকলেট, মদ্যপান
  • খুব কম বা খুব বেশি ঘুমানো

টেনশন হেডেক

টেনশন হেডেক মাথা ব্যথা মূলত মাথার বাম পাশে এবং চোখের পেছনে শুরু হয়। এটা অনেক সময় মানসিক চাপ জনিত কারণেও হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে মাথা ব্যথার রোগীদের মধ্যে ৪২ শতাংশ টেনশন হেডেক এ ভুগছেন।

উপসর্গ

  • দিনের শেষে ব্যথা বেড়ে যায়
  • গলা এবং ঘাড়ের মাংসপেশি টাইট হওয়া
  • টাইট, চাপ দেওয়া ব্যথা যা শুরু হয় চোখে পেছন থেকে তারপর কপালে এবং মাথার পেছনে ছড়িয়ে পড়ে।

ক্লাসটার হেডেক 

মূলত বা পাশের মাথাব্যথা ক্লাসটার হেডেক। ক্লাসটার হেডেক খুবই যন্ত্রণাদায়ক এবং এটা মাথার এক পাশের শুরু হয়।

উপসর্গ

  • ৫ থেকে ১০ মিনিট পর ব্যথা আরো বেশি বেড়ে যায়
  • প্রচন্ড ব্যাথা স্থায়ী হয় আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত
  • এক চোখ, ললাট কিংবা কপালের একপাশে ব্যথা শুরু হয়
  • একটু কম ব্যাথা তিন ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে

মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা

অনেক সময় কিছু কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে অসহ্যকর মাথাব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। মাথা ব্যাথা হলে করণীয় - মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা এ প্রসঙ্গে আমরা জানবো মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে।

আরো পড়ুনঃ শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায়

চা -কফি

চা বা কফিতে থাকা ক্যাফেইন মাথার যন্ত্রণা কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর। আবার অনেক সময় চায়ের সাথে আদা ,লবঙ্গ, মধু মিশিয়ে খেলে মাথার যন্ত্রণায় অনেক আরাম পাওয়া যায়।

এসেন্সিয়াল অয়েল

অনেক সময় এসেন্সিয়াল অয়েল রগে বা কপালে মাসাজ করলে অনেক আরাম পাওয়া যায়। আবার লেভেন্ডার বা পিপারমিমেন্ট মতো যে কোন সুগন্ধি ফ্লেভারের তেল দিয়ে মাসাজ করলে মাথার যন্ত্রণা অনেকটা কমে।

গোসল

অসহ্যকর মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে গোসল করা যেতে পারে। কারণ মাথায় কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানি ঢাললে ভালো লাগবে।

আলো কমান

মাথায় প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হলে ঘরের আলো কমিয়ে দিন। ল্যাপটপ ,কম্পিউটারের স্কিন বা মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকুন। বাইরে গেলে ভালো মানের রোদচশমা ব্যবহার করুন।

ম্যাসাজ

মাথাব্যথা বেশি হলে কপালের দুই পাশের রগ বা ঘাড়ের কাছে যদি কিছু সময়ের জন্য আঙ্গুলের ডগা দিয়ে মাছ মাসাজ করেন তাহলে অনেক আরাম পাবেন। ক্লান্তির কারণে মাথাব্যথা হলে এই মাসাজ কাজে দেয়। কারণ আঙ্গুলের ডগার চাপ ব্যাথার উৎপত্তি স্থলে গিয়ে দারুন কাজ করে।

ইতিকথা

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজ আমরা আলোচনা করেছি মাথা ব্যাথা হলে করণীয় - মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে। আপনারা যদি মাথা ব্যাথা নিয়ে কিছু জানতে চান তাহলে মাথা ব্যাথা হলে করণীয় - মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা এই পোস্টটি পড়ুন। আশা করছি আপনাদের কাজে আসবে বা উপকারে আসবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url