গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা - গর্ভ অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না


গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার মা ও শিশু দুজনের জন্যই উপকারী। তাই গর্ভাবস্থায় খাদ্য ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো মা ও শিশুর পুষ্টি যোগাবে আবার এমন কিছু খাবার আছে যা মা ও শিশু দুজনের জন্যই ক্ষতিকর। তাই আজ আমরা আলোচনা করব গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা - গর্ভ অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না তা নিয়ে।
আসুন বন্ধুরা আর দেরি না করে জেনে নেই গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা - গর্ভ অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না তা সম্পর্কে।গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা - গর্ভ অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না এ প্রসঙ্গে আমরা জানবো, গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার, গর্ব অবস্থায় কোন মাসে কতটুকু খাবার খেতে হবে, গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না, গর্ব অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন, গর্ভবতী মায়ের খাবার তৈরি সম্পর্কে।

গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার

গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা - গর্ভ অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

দুগ্ধ জাত খাদ্যদ্রব্য

গর্ভ অবস্থায় মা ও শিশু উভয়েরই জন্যেই পুষ্টিকর খাবার একান্ত প্রয়োজনীয়। খাবারে যাতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

আরো পড়ুনঃকাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা

আর এর জন্য যে কোন ধরনের দুগ্ধ জাত খাদ্যদ্রব্য রোজকার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু বা রাঙ্গা আলু এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। এটা খেতেই শুধু সুস্বাদু নয় এতে রয়েছে পুষ্টিগুণ। এটি উদ্ভিদে পাওয়া এক ধরনের যোগ যা মানব শরীরে ভিটামিন এতে পরিণত হয়। আর এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

গর্ভবতী মায়েদের রোজগার খাবার তালিকায় ডাল, সয়াবিন, বাদাম জাতীয় খাদ্যদ্রব্য থাকতে হবে। কারণ এ সকল খাদ্যদ্রব্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন ,ফলেট ,ক্যালসিয়াম, আয়রন। আর এ সমস্ত কিছুই শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য অধিক প্রয়োজনীয়।

স্যালমন মাছ

স্যালমন মাছ গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। এই মাসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা বাচ্চাদের মস্তিষ্ক ও চোখের পুষ্টি যোগায়।

ডিম

গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা অবশ্যই ডিম রাখতে হবে। ডিমে প্রায় প্রয়োজনীয় সব রকমের পুষ্টি মজবুত থাকে। তাছাড়া একটা বড় ডিমে ৮০ ক্যালোরি, প্রচুর প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে।

সবুজ শাকসবজি

সবুজ শাকসবজি যে কোন পুষ্টিকর খাদ্য তালিকায় অন্যতম প্রধান উপাদান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ,ভিটামিন সি ,ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম ,আয়রন ,পটাশিয়াম।

মাংস

মাংস গর্ভবতী মায়েদের শরীরে উন্নত মানের প্রোটিন যোগায়। বিভিন্ন ধরনের রেড মিটে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে যার রক্ত গাড়ো করতে সাহায্য করে।

গোটা শস্য

গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় গোটা শস্য অবশ্যই থাকা উচিত। কারণ এতে রয়েছে ফাইবার ও ভিটামিন। তাছাড়াও কিছু গোটাশস্যএ পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন থাকে।

বিভিন্ন ধরনের ফল

গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় ফল রাখা জরুরি। কারণ এ সকল ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ফাইবার ভিটামিন খনিজ পদার্থ। যা গর্ভবতী মা এবং শিশু দুজনের জন্যই বেশ উপকারী।

মাছের যকৃত

মাছের যক্রত থেকে প্রাপ্ত তেলও শরীরের পক্ষে খুব ভালো ।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ইপিএ ও ডি এইচ এ থাকে। এগুলো শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের জন্য খুব প্রয়োজনীয়।

পানি

গর্ভবতী মায়েদের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হল পানি। এই সময় বিপুল পরিমাণ পানি খাইতে হবে যার ফলে শরীরে যত সম্ভব হাইডেড রাখা যাবে। গর্ভাবস্থায় রক্তের পরিমাণ 45% বৃদ্ধি পায় তাই শরীরে পানি থাকা খুব দরকার।

গর্ব অবস্থায় কোন মাসে কতটুকু খাবার খেতে হবে

গর্ভধারণ করার পরেই যে খাওয়া-দাওয়া অনেক বাড়িয়ে দিতে হবে বিষয়টি এমন নয়। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস সাধারণত বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তবে এর পরের মাসগুলিতে তুলনামূলক কিছুটা বেশি খাবার খেতে হয়।গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা - গর্ভ অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না এর মাধ্যমে আমরা জানবো ,গর্ব অবস্থায় কোন মাসে কতটুকু খাবার খেতে হবে। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

১ মাস থেকে ৩ মাসের গর্ভ কালীন খাবার তালিকা

গর্ভাবস্থায় ১ থেকে ৩ মাসে তেমন একটা অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন হয় না।এই সময়ে খাদ্য তালিকা অর্থাৎ ক্যালোরি চাহিদা আপনার উচ্চতা ওজন দৈনিক পারিশ্রমিক পরিমাণ সহ বেশ কিছু জিনিসপত্রের ওপর নির্ভর করবে।

আরো পড়ুনঃকোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়

আর সে অনুযায়ী ওজন বাড়তে থাকলে খাবার পরিমান কমিয়ে এবং ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে স্বাভাবিক ওজনে আসার চেষ্টা করতে পারেন। আবার ওজন কমতে থাকলে ব্যায়ামের পরিমাণ কমিয়ে খাদ্য তালিকায় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। এসময় যে ধরনের খাবার খেতে পারেন তা হলঃ

  • ভাত = ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম
  • শাকসবজি = ২৫০ থেকে ৩৭৫ গ্রাম
  • হলুদ অথবা কমলা ফল ও সবজি = এক বাটি
  • ডিম = ১ টি
  • মাছ অথবা মাংস  =১ টুকরা
  • দুধ = এক গ্লাস
  • ঘন ডাল = দুই বাটি

৪ থেকে ৯ মাসের গর্ভবতীর খাবার তালিকা

৪ থেকে ৯ মাসের গর্ভবতী মায়েদের এ সময় খাবার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। গর্ভের শিশু বেড়ে ওঠা এবং সাথে সাথে গর্ভবতী নারীর খাবার চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এই সময়ে। ৪ থেকে ৬ মাসের গর্ভবতী প্রথম তিন মাসের চেয়ে প্রতিদিন প্রায়৩৪০ ক্যালোরি পরিমাণ অতিরিক্ত খাবার প্রয়োজন। আবার স্বাভাবিক ওজনের ৭ মাস থেকে ৯ মাসের গর্ভবতীকে অন্যান্য সময় তুলনায় অতিরিক্ত প্রায় ৪৫০ ক্যালোরি খাবার খেতে হবে।

আপনার ওজন যদিবেশি হয়ে থাকে তবে আরেকটু কম পরিমাণে অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে। এ বিষয়ে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। এই সময় আপনি তিন বেলা খাবার পাশাপাশি আরও দুইবার হালকা খাবার খাবার চেষ্টা করবেন। খাবারটি হতে পারে একটি ফল পাঁচ-ছয়টি বাদাম অথবা আধা কাপ টক দই। তাছাড়া ক্ষুধা লাগলে আপনি যেকোনো সময়ে পরিমাণ মতো স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না 

গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা - গর্ভ অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো,গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না সে সম্পর্কে। নিম্নের সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

গর্ভ অবস্থায় অতিরিক্ত তেল চর্বি ও চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া ঠিক নয়।অতিরিক্ত ভাজাপোড়া এবং পটেটো, মিষ্টি কেক, পেজটিকেক এগুলো খাওয়া যাবে না। কারণ এগুলো প্রয়োজনে পুষ্টির উপাদানের অভাব থাকে। এবং অন্যদিকে ক্ষতিকর ফ্যাট থাকতে পারে। এ জাতীয় খাবার বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হার্টের নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। তার অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার খেলে দাঁত ক্ষয় হয়। যে সকল খাবার মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকারক সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

  • মাখন
  • চিপস
  • বিস্কুট
  • কেক
  • ক্রিম
  • ঘি -ডালডা
  • ভাজাপোড়া
  • পেস্টি
  • আইসক্রিম
  • কোমল পানীয়
  • পুডিং
  • চা অথবা কফি
  • পনির বা চিজ
  • কলিজা
  • অপুস্তরিত দুধ
  • কাঁচা ডিম
  • সিদ্ধ না হওয়া মাছ
  • সিদ্ধ না হওয়া মাংস
  • মদ বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়
  • এলার্জি জাতীয় খাবার
  • হারবাল বা ভেজেস ঔষধ
  • অতিরিক্ত ক্যাফেন জাতীয় পানীয় ইত্যাদি।

গর্ব অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন 

গর্ব অবস্থায় আপনাকে খাদ্য তালিকায় ছয় ধরনের খাবার নিশ্চিত করতে হবে। যা আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য খুবই উপকারী। এই ছয় ধরনের খাবার গুলো হলোঃ

  • ডিম
  • দুধ জাতীয় খাবার
  • শর্করা জাতীয় খাবার
  • গারো সবুজ ও রঙ্গিন শাক
  • মাছ মাংস ও ডাল
  • রঙিন ফল ও সবজি

এ সকল খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন টক জাতীয় খাবার খাবেন।যেমন আমলকি ,জলপাই ,লেবু, জাম্বুরা, আমড়া, জাম ,কমলা ,মালটা এগুলোতে ভিটামিন সি থাকে। আর ভিটামিন সি আপনার ও গর্ভের শিশুর ত্বক, রক্তনালী ও হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তৈরি

গর্ভবতী মায়ের খাবার তৈরীর ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে কারণ বিভিন্ন ধরনের জীবাণু মায়ের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যা মা ও শিশু দুজনেরই স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে। গর্ভাবস্থায় খাবার ব্যাপারে বা খাদ্য তৈরির ব্যাপারে একটু বেশি সচেতন হন। নিম্নের সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

আরো পড়ুনঃমাথা ব্যাথা হলে করণীয়

  • কাঁচা খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম ,শাক-সবজি কাঁটা ধোয়া অথবা রান্নার পর অবশ্যই প্লেট, থালা-বাসন রান্নার পাত্র ভালোভাবে সাবান, ডিশ ওয়াশিং, লিকুইড অথবা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নেবেন। এবং নিজের হাত দুটো ভালোমতো সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
  • আর রান্না করার আগে এবং কাঁচা খাবার আগে সব ধরনের ফল ও শাকসবজি ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন। করে খাবারে কোনরকম ময়লা ,মাটি ,ধূলিকণা লেগে না থাকে।
  • কাঁচা মাছ ও মাংস কাটার জন্য আলাদা চুরি , বটি ,কাটার বোর্ড ব্যবহার করবেন।
  • বাইরে থেকে আনা খাবার অথবা রান্না করা খাবার ফ্রিজ থেকে বের করার পর ঠিকমতো গরম না করে খাবেন না।
  • ফ্রিজে বেশি দিন ধরে রাখা খাবার খাবেন না। সবসময় টাটকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
  • কাঁচা খাবার বা রান্না করা খাবার ফ্রিজের পৃথক থাকে আলাদা করে এবং ঢাকনা বন্ধ করা বাটিতে সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করবেন।

শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা আজ আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আলোচনা করেছি,গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা - গর্ভ অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না তা নিয়ে। আশা করছি,গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা - গর্ভ অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না এই পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। বন্ধুরা এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।-ধন্যবাদ


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url