নামাজ না পড়ার শাস্তি - বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে


ইসলামের প্রধান ইবাদত হলো নামাজ। আর এই নামাজ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের অনেক বর্ণনা করা হয়েছে এবং যারা নামাজ পড়বেনা তাদের ভয়াবহ পরিণাম ও শাস্তির কথা কুরআনে এসেছে। কোরআনে বর্ণনা অনুযায়ী নামাজ ত্যাগকারীর শাস্তির কথা যদি মানুষ জানতো তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে নিয়োজিত থাকতো। আসুন তাহলে আমরা জেনে নেই ,নামাজ না পড়ার শাস্তি - বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে সে সম্পর্কে।
আশা করছি নামাজ না পড়ার শাস্তি - বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে এর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আপনারা উপকৃত হবেন। আর নামাজ না পড়ার শাস্তি - বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে এটা সম্পর্কে জানার পর আপনারা নামাজের ব্যাপারে অনেকটাই আগ্রহী হবেন। আসুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেই,নামাজ না পড়ার শাস্তি - বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে এ সম্পর্কে।

ভূমিকা

ইসলামে পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। একজন মানুষ ঈমান আনার পর তার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নামাজ। প্রত্যেক মুসলমানের ওপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। কেননা পবিত্র কোরআনে প্রায় শতবার সালাত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ জিলহজ্জ মাসের রোজা কয়টি 

তাইতো এই পোষ্টের মাধ্যমে আজ আমরা আলোচনা করব, নামাজ না পড়ার শাস্তি - বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে তা সম্পর্কে। বন্ধুরা এটি সম্পর্কে জেনে আপনারা অবশ্যই উপকৃত হবেন ।তাই নামাজ না পড়ার শাস্তি - বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে তা সম্পর্কে জানতে আমাদের পোস্টটি একটু ধৈর্য সহকারে পড়ে নিন।

নামাজ না পড়ার শাস্তি

নামাজ হলো বেহেস্তের চাবি । আর প্রতিটা মুসলমানদের জন্যই নামাজ একটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল। নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অন্যভাবে বলতে গেলে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ইবাদত হলো নামাজ। তাই নামাজ না পড়ার শাস্তি ইসলামে কঠোরভাবে দেওয়া আছে। 

আল্লাহ পাক যারা নামাজ পড়বে না তাদের জন্য ১৫ টি আযাব নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। এই আজাব গুলোর মধ্যে থেকে ছয়টি দুনিয়ায় ,তিনটি মৃত্যুর সময়, তিনটি কবরে এবং বাকি তিনটি হাশরের ময়দানে দেওয়া হবে। আসন বন্ধুরা তাহলে আমরা জেনে নেই এই সকল আজাব গুলো সম্পর্কে।

দুনিয়াতে যে ছয়টি আজাব দেওয়া হবে

  • তাহার জীবনে কোনরূপ বরকত পাবে না।
  • আল্লাহ সেই লোকের চেহারা হইতে নেক চিহ্ন উঠিয়ে নেবেন।
  • আল্লাহ পাকের নিকট তার দোয়া কবুল হবে না।
  • আল্লাহ পাকের ফেরেশতাগণ তাহার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন।
  • ইসলামের মূল্যবান নেয়ামত থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন।
  • সে যা কিছু নেক কাজ করবে তার কোন সওয়াব পাবে না।

মৃত্যুর সময় যে তিনটি আজাব দেওয়া হবে

  • অত্যন্ত দুর্দশা গ্রস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।
  • মৃত্যুর সময় তার এত পিপাসা পাবে যে, তার ইচ্ছা করবে দুনিয়ার সমস্ত পানি পান করতে।
  • সে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে।

কবরের মধ্যে যে তিনটি আজাব দেওয়া হবে

  • তার কবরে দিনরাত্রি সব সময় আগুন জেলে রাখা হবে।
  • তার কবর এমন সংকীর্ণ হবে যে তার এক পাশের হার অপরপাশের হাড়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।
  • আল্লাহ পাক তার কবরে একজন আজাবে ফেরেস্তা নিযুক্ত করবেন। তার হাতে থাকবে লোহার মুগুর। আর সে মৃত ব্যক্তিকে বলতে থাকবে যে দুনিয়ায় কেন তুমি নামাজ পড়ো নি। আর তাই আজ তাহার ফল ভোগ করো। আর এই কথা বলে ,

ফজর নামাজ না পড়ার জন্য ফজর হতে জোহর পর্যন্ত ,জোহর নামাজ না পড়ার জন্য যোহর হইতে আসর পর্যন্ত , আসর নামাজ না পড়ার জন্য আসর হইতে মাগরিব পর্যন্ত এবং মাগরিবের নামাজ না পড়ার জন্য মাগরিব হইতে এশা পর্যন্ত এবং এশার নামাজ না পড়ার জন্য এশা হইতে ফরজ পর্যন্ত লোহার মুগদ দ্বারা আঘাত করতে থাকবে।

আর বাকি তিনটি আজাব হাশরের ময়দানে প্রদান করা হবে।

বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে

বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ঃ

বেনামাজীর অবস্থান হবে  সাখার জাহান্নাম

আল্লাহর নিজে তাঁর বান্দার প্রতি কাজের হিসাব নেবেন। আর প্রতি কাজের হিসাব দিতে না পারলে শাস্তি হবে অবধারিত। যাদের শাস্তি দেয়া হবে সে সকল মানুষকে তাদের অপরাধের কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা তা বলতে থাকবে। 

আরো পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিনের গুরুত্ব ও ফজিলত

আর আল্লাহতালা কুরআনে সে কথা তুলে ধরেছেন এইভাবে, কোন জিনিস (কাজ) তোমাদেরকে (সাকার)জাহান্নামে নিয়ে এলো? তারা বলবে আমরা নামাজীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। (সূরা আল মুকাদ্দিস আয়াত ৪২-৪৩)

নামাজ না পড়ার শাস্তি

যারা নামাজ পড়েন না বা পড়লেও অবহেলা করেন। আবার দেখা যায় কোন সময় নামাজ পড়েন আবার নামাজের দেরি করে্ন। আবার নামাজে বিনয় ও নম্রতা না থাকলেও নামাজ আদায় বলে বিবেচিত হয় না। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন; দুর্ভোগ সেসব নামাজ আদায়কারীদের জন্য যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন। (সূরা মাউন আয়াত ৪ থেকে ৫)

নামাজ পরিত্যাগেই সৃষ্টি হয় বিবাদ ও পতন

যারা নামাজ পড়ে না কিংবা মন চাইলে দুই-এক ওয়াক্ত পড়ে। আবার সপ্তাহ কিংবা মাসে বা বছরে নামাজ পড়ে, এইসব লোকেরা খুব শীঘ্রই অশান্তি ও পতন ভোগ করবে। আর শাস্তি তাদের জন্য অবধারিত। আল্লাহ পাক বলেন,;

তাদের পরে যারা তাদের স্থলা বিশিষ্ট হলো তারা নামাজ নষ্ট করলো। এবং নফসের লালসা বাসনার অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই এই কুকর্মের শাস্তি ভোগ করবে। অবশ্য যারা তওবা করেছে ঈমান এনেছে ও সৎকর্মশীল হয়েছে তারা ব্যতীত। (সূরা মারিয়াম আয়াত ৫৯)

হাশরের ময়দানে বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমানিত হবে

যারা দুনিয়াতে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে তারা পরকালে আল্লাহর নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে সেজদায় লুটিয়ে পড়বে। অন্যথায় যারা দুনিয়াতে যথাযথভাবে নামাজ পড়বে না এমনকি লোক দেখানো কিংবা সুনাম লাভের আশায় নামাজ পড়বে তারা সেই দিন সেজদা করতে পারবে না। ফলে তারা হবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন;

সেই চরম সংকটময় কিয়ামতের দিবসের কথা ,সেই দিন তাদেরকে আহবান করা হবে সেজদা করার জন্য কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত হবে, হীনতা তাদের অবসন্ন করবে অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল, তখন তো তাদের সেজদা করার আহ্বান করা হতো( কিন্তু তারা সেজদা করেনি)। (সূরা আল কালাম আয়াত ৪২-৪৩)

পরকালে মুক্তির উপায়

নামাজ হলো বেহেস্তের চাবিকাঠি। আর এই নামাজ পড়া যে কত সৌভাগ্যের বিষয় আর নামাজ না পড়া যে কত দুর্ভাগ্যের বিষয় এ সম্পর্কে হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যত্নের সঙ্গে আদায় করবে, কেয়ামতের দিন এ নামাজ তার জন্য আলো হবে। তার ঈমান ও ইসলামের দলিল হবে এবং তার নাজাতের উসিলা হবে। আর যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে না, কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নামাজ তার জন্য আলো হবে না। দলিলও হবে না এবং সে আজাব থেকে রেহায়ও পাবে না। (মুসনাদে আহমদ হাদিস৬৫৭৬)

নামাজ হল মোমিন ও কাফিরের পার্থক্যকারী

নামাজ মুমিন ও কাফিরের পার্থক্য করে দেয়। জাবির .(রা) বলেন আমি নবী (সা) কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ছেড়ে দেওয়া। (মুসলিম হাদিস ১৪৮)

আরো পড়ুনঃ জান্নাতে যারা যেতে পারবেনা

নামাজি হলো পরকালের মুক্তির অন্যতম একটি উপায়। বুরাইদা (রা) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমাদের ও তাদের (কাফিরদের)মধ্যে (মুক্তির) যে প্রতিশ্রুতি আছে তা হল নামাজ। সুতরাং যে ব্যক্তির নামাজ ছেড়ে দেয় সে কুফরি কাজ করে।( তিরমিজি হাদিস ২৬২১)

এবং হাদিসেও অনেক ধরনের ব্যাখ্যা আছে একটি ব্যাখ্যা হল, যখন কেউ নামাজ ছেড়ে দেয় তখন সে যেন কুফরের সঙ্গে গিয়ে মিলাতে হয়। তার নামাজ না পড়াটা কুফরী কাজের সমতুল্য। নামাজ না পড়া খুব কুফরিসাদৃশ্য কাজ। ওই ব্যক্তিকে সরাসরি কাফের বলা যাবে কিনা বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাবি রাখে।

উপসংহার

নামাজ না পড়ার শাস্তি - বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে বন্ধুরা এই সম্পর্কে অবশ্যই অবগত হয়েছেন। কারণ উপরিক্ত আলোচনায় আমরা নামাজ না পড়ার শাস্তি - বেনামাজিরা যেসব শাস্তি ও অপমান ভোগ করবে এই পোস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি। বন্ধুরা যদি কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। আর হ্যাঁ আমাদের পেজটি ফলো করতে ভুলবেন না।-ধন্যবাদ


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url