তিতির পালন পদ্ধতি - তিতির পালনের সুবিধা ও অসুবিধা
তিতির পালন পদ্ধতি
তিতির পালন পদ্ধতি - তিতির পালনের সুবিধা ও অসুবিধা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আজ আমরা জানবো তিতির পালন পদ্ধতি সম্পর্কে। আসন বন্ধুরা তাহলে জেনে নেই তিতির পালন পদ্ধতি সম্পর্কে। তিতির মুরগি সাধারণত যে উপায়ে পালন করা যায় সেগুলো হল। যেমন-
- মুক্ত পদ্ধতি
- আধা মুক্ত পদ্ধতি
- বদ্ধ পদ্ধতি
- এছাড়া বাড়িতে হাঁস মুরগি পালনের সাথে অনায়াসে তিথির পালন করা যায়।
তিতির এর বাচ্চা অন্যান্য মুরগির বাচ্চার তুলনায় ঠান্ডায় সংবেদনশীল। তাই
তিতিরের বাচ্চাকে প্রথম সপ্তাহে উচ্চ ব্রুডিং নতাপমাত্রায় প্রয়োজন। তিতির অলস
প্রকৃতির একটি পাখি। এরা নিজেদের টিমে নিজেরা তা দেয় না। যদিওবা দেয় তাহলে দু
একটি বাচ্চা ফুটলেই তারা উঠে চলে যায়। তাই তিতিরের বাচ্চা ফোটার ব্যাপারে সতর্ক
থাকতে হবে।
আরো পড়নঃ কাদাকনাথ কি - কাদাকনাথ মুরগির উপকারিতা
প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ৩৭ ডিগ্রি সে এবং চতুর্থ থেকে পঞ্চম সপ্তাহ ৩৬°
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর জায়গার ক্ষেত্রে এক থেকে চার সপ্তাহের একটা
তিতিরের বাচ্চার জন্য ০.৫ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়। ৫ থেকে ৮ সপ্তাহে
তিতিরের জন্য ১.০ বর্গফুট জায়গা লাগে ৯ থেকে ১৩ সপ্তাহের তিতিরের জন্য
১.৫ বর্গফুট জায়গা লাগে আর পূর্ণবয়স্ক তিতিরের জন্য লাগে ২ থেকে ২.৫
বর্গফুট জায়গা।
আবদ্ধ অবস্থায় তিতিরের ঘর তৈরি করতে বাস ,কাট, টিন, সং, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি
করতে হয়। ঘরটি আলো বাতাস পূর্ণস্থানে করতে হবে ।ঘর প্রতিদিন পরিষ্কার রাখতে হবে।
স্যাঁতস্যাঁতে যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবং তিতিরে পায়খানা ঘরের
মেঝেতে যেন না লেপ্টে যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ,কাঠের গুড়া ছিটিয়ে
দিতে হবে। এছাড়াও কিছুদিন পরপর তিতিরের ঘরের মেঝের তুষ গুলো উল্টে পাল্টে দিতে
হবে।
তিতিরের জাত
পালকের রঙের উপর ভিত্তি করে তিতির পাখিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- পাল ভ্যারাইটি-এদের সাধারণত ধূসর পালক থাকে। এবং পালকে ফোটা ফোঁটা সাদা দাগও থাকে। এটা দেখতে খুবই সুন্দর।
- লেভেন্ডার ভ্যারাইটি-পাল ভ্যারাইটি সঙ্গে লেভেন্ডার ভ্যারাইটির অনেক মিল রয়েছে। তবে এদের পালকের রং হালকা ধূসর হয়ে থাকে।
- সাদা ভ্যারাইটি-এই তিতির পাখির পালক সাদা এবং এর পালকের কোন দাগ নেই।
পুরুষ ও স্ত্রী তিথির চেনার উপায়
তিতির পালন পদ্ধতি - তিতির পালনের সুবিধা ও অসুবিধা এ প্রসঙ্গে আমরা জানবো পুরুষ ও স্ত্রী দিদির চেনার উপায়। নিম্নে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
স্ত্রী তিতির
- স্ত্রী তিতিরের হেলমেট তুলনামূলক ছোট ও মাথার সামনের দিকে থাকে।
- এবং ওয়াটলস বেস্ট ছোট হয়।
পুরুষ তিতির
- পুরুষ তিতিরের হেলমেট সুউচ্চ ও মাথার মাঝখানে থাকে।
- ওয়াটলস বেশ বড় হয়।
তিতিরের খাদ্য
তিতির পাখিরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খায় যেমন কচি ঘাস ,পোকামাকড়, ঘাসের বিচি,
ভুট্টা ভাঙ্গা, ধান, গম, ধানের কুড়া, ভাত ইত্যাদি। এছাড়া আবদ্ধ ও অর্ধমুক্ত
পালনের জন্য বয়লার বা লিয়ার মুরগির খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। এই মুরগি দৈনিক
১২৮ থেকে ১২১ গ্রাম খাবার খায়।
তিতিরের রোগ, ভ্যাকসিন ও প্রতিকার
তিতির পালন করার সময় কিছু রোগ বালাই দেখা দেয়। তার মধ্যে কয়েকটি মারাত্মক রোগ
হল রক্ত আমাশয়, গোল কৃমি, উকুন ইত্যাদি। আর এইসব রোগের থেকে রেহাই পেতে অবশ্যই
টিকা দিতে হবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মুরগিদের রানীক্ষেত রোগ হয়। তাই সতর্কতার
জন্য তিতির কেউ রানীক্ষেত রোগের টিকা দিতে হবে। তবে কোনোভাবেই রোগাক্রান্ত পাখিকে
টিকা দেওয়া যাবে না।
খোড়া পাঃ হ্যাচারি থেকে বাসা বের করার পর পরই এই রোগটি দেখা দিতে পারে। এমনকি
তিতিরের বাচ্চা গুলো অসুস্থ হয়ে এলোমেলো ভঙ্গিতে হাঁটতে পারে। এমন অবস্থায়
আলতোভাবে চিকন পাইপ দিয়ে পা আটকে দিলে বাচ্চাগুলো ভালো হয়ে যায়।
আরো পড়নঃ টাইগার মুরগির বাচ্চা চেনার উপায়
রক্ত আমাশয়ঃ রক্ত আমাশয় একটি সাধারণ প্যারাসিতিক রোগ। এটি প্রোটোজোয়ান
প্যারাসাইট দ্বারা সৃষ্টি হয়। গিনি ফাউলের খাবার পানিতে ড্রপিংস পাওয়া
যেতে পারে যা থেকে দ্রুত রক্ত আমাশয় ছড়িয়ে পড়ে।
যদি কোন তিতির পাখি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব অন্যান্য তিথির
পাখিদের সরিয়ে নিতে হবে। কেননা অসুস্থ তিতিরের সংস্পর্শে থাকলে বাকি সুস্থ
তিতিরাও আক্রান্ত হতে পারে। এবং অতিরিক্ত গুরুতর সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তিতির পালন লাভজনক
তিতির একটি খুবই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ পাখি। তাছাড়া এই পাখির বাজার
মূল্য বেশি হাঁস মুরগির চেয়ে অনেক বেশি। তাই যে কেউ এই পাখির লালন-পালন করে
লাভবান হতে পারবে। এবং এই পাখি পালনের ফলে দারিদ্র বিমোচনেও সহায়তা এর
পাশাপাশি বিপন্নপ্রায় এই প্রজাতির সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে।
মাংস উৎপাদন
দেশী মুরগীর তুলনায় তিতির পাখির ওজন বেশি হয়ে থাকে। যেখানে দেশি মুরগির ওজন ৬
মাসের সর্বোচ্চ এক কেজি হয়। সেখানে তিতির মুরগির ওজন দেড় থেকে দুই কেজি হয়ে
থাকে। আবার বেশি মুরগি বছরে ৫০থেকে ৬০ টা ডিম দেয়, সেখানে তিতির মুরগি বছরে
প্রায় ১০০ থেকে ১২০ টি ডিম দিয়ে থাকে।
তিতির পালনের সুবিধা ও অসুবিধা
তিতির পালন পদ্ধতি - তিতির পালনের সুবিধা ও অসুবিধা এ পর্যায়ে আমরা জানবো তিতির পালনের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে। নিম্নে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
আরো পড়নঃ টাইগার মুরগির খাদ্য তালিকা
তিতির পালনের সুবিধা
- তিতিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।
- প্রাকৃতিক খাদ্য খায় বলে এর খাদ্য খরচ কম।
- এটি পালনের উন্নত মানের ঘর দরকার হয় না।
- খুব বেশি জিনিসপত্র লাগে না।
- এর ডিম ভাঙ্গার সম্ভাবনা কম থাকে।
- এই পাখি পালনের খরচ ও ঝুঁকে অনেক কম।
- এই পাখি পরিবেশের সাথে অনেক সংবেদনশীল।
- তিথির পাখি বাড়িতে পালন করা খুবই সহজ।
তিতির পালনের অসুবিধা
- তিতিরের বাচ্চার মৃত্যুর হার খুব বেশি।
- এই পাখি বাচ্চার যত্ন নেয় না।
- মুক্ত অবস্থায় পালন করলে বনের ডিম পাড়ে বা ডিম লুকিয়ে রাখে।
- এরা ঝোপ জঙ্গল পছন্দ করে বলে শিয়াল ,কুকুর, বাজ পাখি, বেজি ইত্যাদি প্রাণী এদের ধরে খেয়ে নেয়।
- লিটারে পালনের ক্ষেত্রে বাচ্চাগুলো লিটারের ময়লা খায়। ফলে পেটে অনেক সমস্যা দেখা দেয়।
- তিথির খাঁচায় পালন করলে এগ্রসিভ হয়ে যায় এবং ঠোকাঠুকি করে।
ইতিকথা
প্রিয় বন্ধুরা,তিতির পালন পদ্ধতি - তিতির পালনের সুবিধা ও অসুবিধা এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। এই আর্টিকেলটি আপনাদের কি কোন উপকারে এসেছে। যদি উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এবং আমাদের পেজটি ফলো করবেন।-ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url