জিলহজ্জ মাসের ১৩ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল


আরবি ১২ মাসের সর্বশেষ মাসটি হলো জিলহজ্জ মাস অর্থাৎ আরবি মাসের ১২ তম মাস হল জিলহজ্জ মাস। এই মাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রোজা ও আমল রয়েছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই প্রতিটি মানুষের রমজান মাসের রোজা পালন ছাড়াও বেশ কিছু রোজা রয়েছে। যেই রোজাগুলো একজন মুসলমান ব্যক্তি কে ইহকাল ও পরকাল জগতের মুক্তি দেয়। আজ আমরা আলোচনা করব,জিলহজ্জ মাসের ১৩ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল নিয়ে।
আসুন বন্ধুরা তাহলে জেনে নেই জিলহজ্জ মাসের ১৩ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে। জিলহজ্জ মাসের ১৩ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল এ সম্পর্কে আমরা আরো জানব ,জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল,হজ করা,কোরবানি করা,প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা,বেশি বেশি নেক আমল করা,বিশেষত আরাফাতের দিন রোজা রাখা,তাকবীরে তাশরিক পড়া,নখ- চুল ইত্যাদি না কাটা,ঈদুল আযহার নামাজ পড়া ।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল

জিলহজ্জ মাসের ১৩ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল এ প্রসঙ্গে আমরা জানবো জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে।আরবি ১২ মাসের শেষ তম মাস হল জিলহজ্জ মাস। এ মাসে গুরুত্ব ও ফজিলত অধিক। আবার জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। যা পালন করা খুবই ফজিলত। নিম্নে জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

আরো পড়ুনঃ সূরা ফাতিহা বাংলা অর্থসহ এর ফজিলত

  • জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন নখ- চুল না কাটা
  • জিলহজ্জের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা; বিশেষত আরাফার দিনে রোজা
  • বেশি বেশি নফল ইবাদত করা
  • আন্তরিকভাবে তাওবা করা
  • বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকির করা
  • সামর্থ্য থাকলে হজ ও ওমরা করা
  • সমর্থ্যবান হলে কুরবানী করা
  • বেশি পরিমাণে তাকবীর পাঠ করা
  • যথা সম্ভব সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
  • সাদকাহ করা

এগুলো ছাড়াও আরো অনেক আমল রয়েছে, যা জিলহজ্জ মাসে ১৩ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল। নিম্নে সে সকল আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

হজ করা

জিলহজ্জ মাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হল হজ করা। হজ হলো ইসলামের মৌলিক পাঁচতম্ভের একটি। এটি ৮ জিলহজ্ব থেকে ১২ জিলহজ্জের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। হজ সমর্থ্যবানদের ওপর জীবনে একবার ফরজ। ইরশাদ হয়েছে, মানুষের মধ্যে যার যেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই গৃহে হজ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য।

আর যে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত যে আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি সামান্যও মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আল ইমরান আয়াত ৯৭) যেহেতু হজে যেতে হলে আগে নিবন্ধন করে নিতে হয়। আর নিবন্ধনের পর সিরিয়াল পেতে পেতে দুই তিন বছর সময় লেগে যায়। তাই যে বছরে হজে যাওয়ার দৃঢ় প্রকল্প আছে তার দুই তিন বছর আগেই নিবন্ধন করতে হবে এবং সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

কোরবানি করা

জিলহজ্জ মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল কোরবানি। যা ১০-১১ বা ১২ তারিখে সম্পন্ন করতে হয়। এবং তা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর ওয়াজিব -যিনি সাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী। মহানবী (সা) সরাসরি কোরবানির ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছেন। আল্লাহ বলেন; তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর। (সূরা কাওসার আয়াত ২)

রাসুলে কারীম(স) ইরশাদ করেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (মুস্তাদরাকে হাকিম হাদিস ৭৫৬৬)

প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। এই রোজাগুলো প্রতিটি রোজা ১ বছরের রোজার সমতুল্য। আর প্রথম দশ রাতের ইবাদত করাও অধিক উত্তম। এর প্রত্যেকটি রাত লাইলাতুল কদর সমতুল্য। নবীজি সাঃ এরশাদ করেছেন, জিলহজের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্যদিনের ইবাদতে তুলনায় বেশি প্রিয়। অর্থাৎ প্রতিদিনের রোজা এক বছরের রোজার মত। আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদত এর মত।

আরো পড়ুনঃ বাংলা অর্থসহ সূরা হাশরের শেষের তিন আয়াত এবং এর ফজিলত

যদি ৯ দিন রোজা রাখা সম্ভব না হয় তবে যতদিন রোজা রাখা সম্ভব ততদিন রোজা রাখতে পারেন। আবার পুরো দশ রাত ইবাদত করা সম্ভব না হলে যত রাত এবাদত করা সম্ভব হয় তত রাত ইবাদত করতে পারেন। এতেও অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে।

বেশি বেশি নেক আমল করা

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের যেকোনো নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কাছে জিলহজের ১০ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোন দিনের আমল নেই। তাই আপনারা প্রতিটি মুহূর্তে কোন না কোন নেক আমল করতে চেষ্টা করুন। অর্থাৎ যে কাজই করি না কেন তা যেন হয় ইহকালীন বা পরকালীন কল্যাণময়। এবং পাশাপাশি গুনাহ থেকে বিরত থাকার বিশেষভাবে চেষ্টা করুন।

বিশেষত আরাফার দিন রোজা রাখা

আরাফার দিন অর্থাৎ ৯জিলহজ্জ রোজা রাখলে দুই বছরের সগিরা গুনাহ মাপ হয়ে যায়। তাই আপনারা চাইলে এই দিনে রোজা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করুন। নবীজি সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন, আরাফার দিনে রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে তিনি আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেবেন। (মুসলিম হাদিস; ১১৬২)

তাকবীরে তাশরিক পড়া

নয় জিলহজ্জ ফরজ থেকে ১৩ জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত মোট২৩ ওয়াক্ত নামাজ। এর প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার তাকবীরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব। জামাতে নামাজ পড়া হোক বা একাধিক পুরুষ বা একাধিক নারী হোক, মুকিম হোক বা মুসাফির। তাকবীরে তাশরিক পুরুষদের জন্য জোরে জোরে পড়া ওয়াজিব। তাকবীরে তাশরিকটি হলঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

নখ- চুল ইত্যাদি না কাটা

জিলহজ্জ মাসে যারা কুরবানী করার ইচ্ছা করবে তাদের জন্য জিলহজ্ব মাসের প্রথম থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত নখ-চুল ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহ সালাম বলেছেন, যখন জিলহজের প্রথম ১০ শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কোরবানি করবে সে যেন তার চুল ও নক না কাটে। (আবু দাউদ হাদিস২৭৮৯)

ঈদুল আযহার নামাজ পড়া

ঈদুল আযহার নামাজ প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন পুরুষদের জন্য ওয়াজিব। সূর্যোদয়ের 20 থেকে 30 মিনিট পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাজ পড়া যায়। 

আরো পড়ুনঃ হতাশা মুক্তির আল - কোরআনের ১০টি আয়াত

নবীজি সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ঈদুল আযহার নামাজ সাধারণত সূর্যোদয়ের আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টার মধ্যে আদায় করতেন। অর্থাৎ ঈদুল আযহার নামাজ তাড়াতাড়ি পড়ায় উত্তম। প্রয়োজনে কিছুটা বিলম্ব করা নিষিদ্ধ নয়।

শেষ কথা

জিলহজ্জ মাসের ১৩ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে জানতে বন্ধুরা এই পেজটি ফলো করুন। এই পেজটির মাধ্যমে আপনারা জিলহজ্জ মাসের ১৩ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে , যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। অথবা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।-ধন্যবাদ



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url