কাজা নামাজের নিয়ম এবং কাজা নামাজ কয় প্রকার


আজ আমরা আলোচনা করব কাজা নামাজের নিয়ম এবং কাজা নামাজ কয় প্রকার তা সম্পর্কে। আসুন তার আগে জেনে নেই কাজা নামাজটা কি। কাজা নামাজ হলো অনিচ্ছাকৃত ,ভুলবশত কিংবা অন্য কোন কারণে যে কোন সময়ের নামাজ আদায় না করতে পারলে পরবর্তী সময় আদায় করাকে কাজা নামাজ বলা হয়। তো তো বন্ধুরা আপনারা কি জানতে চান ,কাজা নামাজের নিয়ম এবং কাজা নামাজ কয় প্রকার সে সম্পর্কে।

ফরজ অথবা ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে কাজা আদায় করা আবশ্যক কিন্তু সুন্নত অথবা নফল নামাজ আদায় করা না গেলে কাজা আদায় করতে হবে না। আবার ফরজ নামাজ ছুটে গেলে তার কাজা তোলা বা ফরজ আবার ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলেও তা কাজা তোলা ওয়াজিব। তো চলুন বন্ধুরা, নিম্নে আমরা জেনে নেই কাজা নামাজের নিয়ম এবং কাজা নামাজ কয় প্রকার সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

কাজা নামাজ কয় প্রকার

কাজা নামাজের নিয়ম এবং কাজা নামাজ কয় প্রকার এই পোস্টটির মাধ্যমে এখন আমরা জানবো কাজা নামাজ কয় প্রকার। মূলত কাজা নামাজ দুই প্রকার যথাঃ

আরো পড়ুনঃ বিয়ে কখন করা ফরজ ,কখন নিষিদ্ধ

  • ফাওয়ায়েতে কালিল অর্থাৎ অল্প কাজা। পাঁচ ওয়াক্ত পরিমাণ নামাজ কাজা হইলে তাকে ফাও য়ায়েতে কালিল বা অল্প কাজা বলে।
  • ফাওয়ায়েতে কাছির অর্থাৎ বেশি কাজা। যখন পাঁচ ওয়াক্তের অনেক বেশি দিনের নামাজ কাজা হয় তখন তাকে ফাওয়ায়েতে কাছির বা অধিক কাজা বলা হয়। এ ধরনের কাজা নামাজ সকল ওয়াক্তিয়া নামাজের আগে পড়তে হবে।

কাজা নামাজের সময়

কাজা নামাজ আদায়ের কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। নামাজের অর্থ চলে যাওয়ার পর আপনার যখনই স্মরণ হবে তখনই আপনি করতে পারেন। যেমন ধরেন আপনি ঘুমিয়ে গেছেন ঘুমের কারণে ফজরের নামাজ আদায় করতে পারলেন না। তবে যখন আপনি ঘুম থেকে উঠবেন তখনই কাজা নামাজ আদায় করবেন। তবে যদি নিষিদ্ধ সময় গুলোতে মনে পড়ে তাহলে অপেক্ষা করতে হবে। যেমন ধরেন আপনি ফজরের নামাজ কিন্তু যোহরের অর্থ চলে এসেছে। তাহলে আগে আপনাকে ফজরের কাজা নামাজ আদায় করে তারপরে যোহরের নামাজ আদায় করতে হবে।

কাজা নামাজের নিয়ত

কাজা নামাজ আর ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে মিল রয়েছে তবে সামান্যতম একটু পার্থক্য রয়েছে যে কাজা নামাজে( আন উসালিলয়া) শব্দের জায়গায় (আন আগদিয়া) এবং যে নামাজ আদায় করবেন তার নাম বলে আল ফাইতাতে বলতে হবে। তো চলুন কাজা নামাজের নিয়ম এবং কাজা নামাজ কয় প্রকার এই পোষ্টের মাধ্যমে প্রতি ওয়াক্তের কাজা নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জেনে নেই।

আরো পড়ুনঃ নামাজে সাহু সিজদা দেওয়ার নিয়ম

ফজরের কাজা নামাজের দুই রাকাত ফ ফজর নামাজের নিয়ত

নাওয়াইতুয়ান আগদিয়া লিল্লাহি তা আলা বাকাআতি ছালাতিল ফজরী ফায়েতাতি ফারজুল্লাহি তা আলা মোতাওয়াজিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলামুখী হইয়া আল্লাহর উদ্দেশ্যে ফজরের ফরজ দুই রাকাত কাজা নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার

জোহরের কাজা নামাজের চার রাকাত ফরজ এর নিয়ত

নাওয়াইতুয়ান আগদিয়া লিল্লাহি তা আলা আরবায়া বাকাআতি ছালাতিল জোহরে ফায়েতাতি  ফারজুল্লাহি তা আলা মোতাওয়াজিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যোহরের ফরজ চার রাকাত কাজা নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।

আসরের কাজা নামাজের চার রাকাত ফরজ এর নিয়ত

নাওয়াইতুয়ান আগদিয়া লিল্লাহি তা আলা আরবায়া বাকাআতি ছালাতিল আছরিল ফায়েতাতি  ফারজুল্লাহি তা আলা মোতাওয়াজিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আসরের চার রাকাত কাজা ফরজ নামাজ আদায় করছি।আল্লাহু আকবার।

মাগরিবের কাজা নামাজের তিন রাকাত ফরজ এর নিয়ত

নাওয়াইতুয়ান আগদিয়া লিল্লাহি তা আলা আরবায়া বাকাআতি ছালাতিল মাগরিব ফায়েতাতি  ফারজুল্লাহি তা আলা মোতাওয়াজিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে মাগরিবের ফরজ তিন রাকাত কাজা নামাজ আদায় করছি ।আল্লাহু আকবার।

এশার কাজা নামাজের চার রাকাত ফরজ এর নিয়ত

নাওয়াইতুয়ান আগদিয়া লিল্লাহি তা আলা আরবায়া বাকাআতি ছালাতিল এশার ফায়েতাতি  ফারজুল্লাহি তা আলা মোতাওয়াজিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে এশার চার রাকাত কাজা ফরজ নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।

কাজা নামাজের নিয়ম

বন্ধুরা এখন আমরা জানবোকাজা নামাজের নিয়ম এবং কাজা নামাজ কয় প্রকার এই পোষ্টের মাধ্যমে কাজা নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। তো চলুন বন্ধুরা আর দেরি না করে জেনে নেই কাজা নামাজের নিয়ম গুলো কি কি।

আরো পড়ুনঃ তাওসিফ নামের ইসলামিক, আরবি ও বাংলা অর্থ

  • যদি কোন মানুষ দীর্ঘদিন নামাজ না পড়ে থাকে তাহলে তার উচিত অনুমান করে নামাজের কাজা আদায় শুরু করে দেওয়া। আর এই অবস্থায় কাজা নামাজের নিয়ম হবে ওই ব্যক্তি যখন প্রতিদিনের নির্ধারিত ওয়াক্তের নামাজ আদায় করবে তখন সে ওয়াক্তের সঙ্গে মিল রেখে ধারাবাহিকভাবে ওই রক্তের কাজা আদায় করে নেবে। অথবা যে ওয়াক্তের কাজা নামাজ পড়তে চাইবে সে ওয়াক্তের নাম দেওয়া।
  • সফরের সময় যে নামাজ কাদা হবে সে নামাজ মুসাফির অবস্থায় যেমন হবে মুকিম অবস্থায় হওয়ার পরও সে হুকুমে থাকবে। অর্থাৎ কোন মানুষ যদি সফরের যথা সময় নামাজ আদায় করতে না পারে তবে সে সফল এবং মুকিম (বাড়িতে আসার পর) অবস্থা ও কাজা কচর আদায় করবে।
  • কোন কারণবশত যদি নফল নামাজ নষ্ট হয়ে যায় অথবা শুরু করার পর কোন কারণও যদি ছেড়ে দিতে হয় তাহলে তার পরেও কাজা করা ওয়াজিব।
  • তবে সুন্নতে মুকাদ্দা বা নফল নামাজের কোন কাজা নেই। ফজরের নামাজ সুন্নত ফরজ উভয়টা পড়তে না পারলে সুন্নত ফরজ একসঙ্গে কাজা করা উত্তম। আবার দুপুরে চার রাকাত সুন্নত পড়তে না পারলে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পরও পড়ে নেওয়া যায়।
  • যোহরের ফরজ নামাজের পর যে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পর চার রাকাত সুন্নতে মুকাদ্দার আগেও পড়া যায় এবং পরেও পড়া যায়। তবে জোহরের ওয়াক্ত চলে গেলে জোহরের আগে এবং পরে চার ও দুই রাকাত সুন্নতের কাজা ওয়াজিব হবে না।
  • জুম্মার নামাজের কোন কাজা নেই তবে কেউ যদি জুম্মার নামাজ না পড়তে পারে তবে সেই রক্তের সম্ভব হলে জোহরের চার রাকাত নামাজ পড়ে নেবে। চলে গেল চার রাকাত যোহর আদায় করবে।
  • কাজা নামাজ জামাতের সহিত আদায় করলে ইমাম কেরাতটি জোরে পড়বেন। জোহর এবং আসল চুপকে চুপকে পড়বেন।
  • জীবনে কেউ যদি নামাজী না পড়ে তার কত নামাজ কাজা হয়েছে তারও হিসাব না থাকে। তবে সে যদি এখন কাজা করিতে চায় তবে প্রথমে নামাজের পূর্বে তরতীব অনুযায়ী কাজা আদায় করিতে থাকিবে । ইহাকে ওমরি কাজা বলে। এবং ইহাতে অসীম ছোয়াপ রয়েছে।

শেষ কথা

তো বন্ধুরা কাজা নামাজের নিয়ম এবং কাজা নামাজ কয় প্রকার এই পোস্টটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। আপনারা কি এই পোষ্টের মাধ্যমে কাজা নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এবং কাজা নামাজের নিয়ম এবং নিয়ত ভালোভাবে বুঝে নিয়েছেন। আপনারা যদি এই প্রশ্নের মধ্যে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের পেজটি ফলো করুন।= ধন্যবাদ


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url