গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যে সকল খাবার খাওয়া ভালো
গর্ভাবস্থায় পর থেকেই নিজের এবং সন্তানের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ যত্ন নিতে হবে। আর এই বিশেষ যত্নের মধ্যে খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং এ সময় সুসম খাদ্য গ্রহণ করা খুবই উত্তম। তাই আজ আমি আলোচনা করব,গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যে সকল খাবার খাওয়া ভালো সে সম্পর্কে। অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে গর্ব অবস্থায় কোন খাবার খাওয়া ভালো, কোন খাবার খাওয়া যাবেনা। তো যারা এ ধরনের ভাবনা পোষণ করেন তারা গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যে সকল খাবার খাওয়া ভালো এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব ,গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যে সকল খাবার খাওয়া ভালো তা নিয়ে। অনেক নতুন গর্ভবতী মায়ের আছেন যারা গর্ভাবস্থায় খাবার নিয়ে টেনশনে পড়ে যায়। যে গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খেলে তাদের জন্য ভালো হবে। কোন খাবার তাদের বিপদের কারণ হতে পারে তা নিয়ে।
আরো পড়ুনঃ ৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে প্রতিরোধের উপায়
আবার অনেকেই নিজের এবং বাচ্চার সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে জানতে চান। তো বন্ধুরা এত টেনশন না করে বা এত ভাবা চিন্তা না করে আমার ,গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যে সকল খাবার খাওয়া ভালো এই পোস্টটি পড়ুন। আশা করছি এ থেকে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন। এবং আপনি গর্ব অবস্থায় নিজের এবং বাচ্চার যত্ন নিতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যে সকল খাবার খাওয়া ভালো
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রশাসনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসরাফ জেরিন জানিয়েছেন গর্ব অবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা কেমন হবে। এবং তিনি আরো জানান গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাদ্য তালিকায় কি কি উপাদান থাকবে। তো চলুন বন্ধুরা আমরা নিম্নে গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যে সকল খাবার খাওয়া ভালো এটা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
আয়রন
আমাদের দেশের মেয়েদের বেশিরভাগই আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। এটি বিশেষ করে দেখা
দেয় বেশি গ্রাম অঞ্চলে। আর আয়রনের ঘাটতি হলে গর্ভের শিশুর শরীরে অক্সিজেন কম
পৌঁছায়। এতে করে শিশুর গঠন ও বৃদ্ধি বিঘ্নিত হয়ে থাকে। আবার সময়ের আগে শিশুর
জন্ম নেওয়ার মতো জটিলতাও তৈরি হয়। তাই গর্ব অবস্থায় বেশি বেশি আয়রন সমৃদ্ধ
খাবার খেতে হবে যেমন, ডিম ,মুরগির মাংস, পালং শাক, চোলা, খেজুর, কলা ইত্যাদি। তবে
মনে রাখা ভাল পানির উৎস তুলনায় উদ্ভিদ উৎস থেকে আয়রন গ্রহণ করা বেশি ভালো।
ফলিক এসিড
ফলিক এসিড বা ফোলেট সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ গর্ভাবস্থায় প্রথম ১৩ সপ্তাহে। বি
ভিটামিন হলো এক ধরনের এসিড। এটি প্রথম কয়েক সপ্তাহে ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি
হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনে। তাই এই সময়ে ডাক্তাররা পরামর্শ
দেন ফলিক এসিড গ্রহণ করার। ফলিক এসিড গুলো হল , বাদাম, ছোলা, মুঘ,ব্রকলি,
সূর্যমুখী বীজ, শত মলি ,কমলালেবু, আখরোট ,পেস্তা ইত্যাদি।
ক্যালসিয়াম
শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ গর্ভাবস্থায়। কারণ মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে ব্যাহত হয়। তাই মায়ের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে যেমন, দই ,পনির , ব্রকলি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, দুধ ,কাটাযুক্ত মাছ, পালং শাক, ডুমুর ,ডিম ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ ৩ মাসের শিশুর কাশি দূর করতে করণীয় উপায়
আর এই ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। তাই প্রতিদিন সকালে অন্তত১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য শরীরে রোদ লাগানো ভালো। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের পাশাপাশি ১০০০ মিলিগ্রাম করে ক্যালসিয়াম supplement গ্রহণ করতে।
জিংক
শরীরে কোষ গঠনের জন্য জিংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১১
মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন পড়ে ।তাই এ সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আপনারা ডাক্তারের
পরামর্শ নিয়ে জিংক ট্যাবলেট খেতে পারেন। এছাড়াও আপনার খাবার
তালিকায় জিংক সমৃদ্ধ খাবার রাখুন যেমন, কাজু, চিনা বাদাম,
ছোলা,ডাল ,মুরগির মাংস, গরুর মাংস, সিমের বিচি, দুধ ইত্যাদি।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
শিশুর বুদ্ধি এবং স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বিশেষ বিশেষভাবে
সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করলে শিশুর
শৈশবে চোখের দৃষ্টি শক্তি, বুদ্ধি এবং ভাষার বিকাশ খুব ভালোভাবে হয়। তাই এ
অবস্থায় আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। আবার
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে আপনি ভিটামিন এ ডিও সিযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে
পারেন।
আঁশ জাতীয় খাবার
গর্ব অবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই কমন একটি ব্যাপার। তাই এ সকল সমস্যা কমাতে আপনি
উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন, ওটস,ছোলা, মুগ, বাদামী ভাত, ব্রোকলি ,
ভুট্টা,শাকসবজি ইত্যাদি খেতে পারেন। এগুলো ছাড়াও আপনি গর্ব অবস্থায় পর্যাপ্ত
পানি পান করুন।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
গর্ব অবস্থায় মায়ের জন্য প্রায় ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
প্রয়োজন হয়। তাই এই সময়ে প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন, মাংস, মাছ ,ডিম ,ডাল
ইত্যাদি খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না
গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই জানার প্রয়োজন আছে যে, গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না তা সম্পর্কে। তো চলুন বন্ধুরা গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যে সকল খাবার খাওয়া ভালো এ প্রসঙ্গে আমরা জেনে নেই গর্ভ অবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন না সে সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চারা সর্দির কারণে খেতে না চাইলে করণীয়
- গর্ব অবস্থায় আপনি অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত খাবার খাবে না যেমন চা কফি। কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত খাবার গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
- গর্ভাবস্থায় যতদূর সম্ভব সামুদ্রিক মাছের তুলনায় মিঠা পানির মাছ বেশি খাবেন। কারণ সামুদ্রিক মাছের পারদ এর পরিমাণ বেশি থাকায় ,এটি ব্রণের মস্তিষ্কে বিকাশের বিলোপ প্রভাব ফেলে।
- গর্ভাবস্থায় আধা সিদ্ধ ডিম বা মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এ সকল খাবারে সালমনেলা ব্যাকটেরিয়া, ইস্টেরিয়া প্রভৃতি থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই প্রাণীজ প্রোটিন ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করে খাবেন। আদা সেদ্ধ মাছ, ডিমের পোচ, হাফ বয়েল ডিম ,মাংস কখনোই খাবেন না।
- গর্ভাবস্থায় আনারসম, কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
শেষ কথা
পরিশেষে বলতে চাই যে, গর্ব অবস্থায় নিজের এবং বাচ্চার যত্ন নেওয়া খুবই জরুরী।
তাই এ সময় আপনি অবশ্যই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। প্রত্যেকটি মানুষের
শরীর আলাদা আলাদা ধরনের। তাই গর্ভধারণের পর খাদ্যাভাসের বিষয়ে একবার অবশ্যই আপনি
চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নেবেন।
তো বন্ধুরা গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যে সকল খাবার খাওয়া ভালো আজকের এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের পেজটি ফলো করবেন এবং কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।-
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url