পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা
আজ আমরা এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করব ,পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা নিয়ে। মানুষের যতগুলো হাড় রয়েছে অর্থাৎ ২৬ টি হাড়ের মধ্যে গোড়ালির হার সবচেয়ে বড়। আর এই হার মানুষের শরীরের ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে। আমরা দৌড়ানো বা হাঁটাহাঁটি করার সময় আমাদের শরীরে যে চাপ পড়ে।তার বেশির ভাগটাই বহন করে পায়ের গোড়ালির হাড়। তাই গোড়ালির কোন সমস্যা দেখা দিলে আমাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। আর এ থেকে রেহাই পেতে জানতে হবে ,পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা সম্পর্কে।
গোড়ালি ব্যথা কি
গোড়ালি ব্যথা কি চিকিৎসকের ভাষায় এই অবস্থাটির নাম হল প্লান্টার ফাসাইটিস। এর ফলে পায়ের তলায় বা গোড়ালিতে খোঁচা দেওয়ার মতো ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ হার্টের রোগীর খাবার তালিকা - হার্টের জন্য ক্ষতিকারক খাবার
এর ফলে সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এবং কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর ব্যথা কমে যায়।
পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর জন্য কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চললেই এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে চলুন জানি পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার
এটি পায়ের গোড়ালিতে লাগালে টক জাতীয় তরল মাখানোর ফলে গোড়ালির জমে থাকা
ক্যালসিয়াম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। আবার আপনি চাইলে এক
টুকরা ব্যান্ডেজ এর কাপড় এর মধ্যে ডুবিয়ে আক্রান্ত গোড়ালির ওপর বসিয়ে বেধেও
রাখতে পারেন। তবে এ পদ্ধতিটি ব্যবহারের সময় আপনাকে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে এতে
ফল ভালো পাবেন।
বরফ
গোড়ালির যে স্থানে ব্যথা হয় কাজ করার আগে আপনি ১৫ মিনিট সেই স্থানে বরফ ধরে
রাখতে পারেন। প্রয়োজন অনুসারে এটি বারবার ব্যবহার করা যেতে পারে। বরফ ব্যবহার
করার ফলে গোড়ালির ক্যালসিয়াম জমে যাওয়া অংশটির চারপাশের কোষ কলার প্রদাহ কমতে
সাহায্য করে।
বাঁধাকপির পাতা
বাঁধাকপির পাতা প্রদাহ রোধকারী উপাদান যুক্ত বলে পরিচিত। এটি আক্রান্ত গোড়ালিতে
বেঁধে রেখেও ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বাঁধাকপির পাতা ব্যবহার আগে
পাতাটিকে সামান্য গরম করে নিন এবং নরম করে নিয়ে লাগাতে হবে। পাতাটি শুকিয়ে গেলে
তা পরিবর্তন করে নতুন পাতা লাগান।
নারিকেল তেল
পায়ের গোড়ালি ব্যথা হলে নারিকেল তেল সামান্য গরম করে মালিশ করতে পারেন এতে
উপকার পাওয়া যাবে। এই তেল গোড়ালিতে জমে থাকা বারতি ক্যালসিয়াম গলিয়ে ফেলতে
সাহায্য করে। এবং ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে থাকে।।
বেইকিং সোডা
বেইকিং সোডা এবং কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে
লাগান ।এটি লাগানোর ফলে আপনি ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন। এই পেস্ট আপনি চাইলে
কাপড়ের টুকরা সাথে মাখিয়ে আক্রান্ত স্থানে বেঁধে রাখতে পারেন।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা ৩ ও ফ্যাটি এসিডের শক্তিশালী প্রদাহরোধকারী উপাদান গোড়ালির ব্যথা থেকে
মুক্তি দিয়ে থাকে।
তিসির তেল
গোড়ালির ব্যথায় তিসির তেল বেশ উপকারী। এক টুকরা কাপড়ের সাথে তিসির তেল মাখিয়ে
নিয়ে আক্রান্ত স্থানে বেঁধে রাখতে পারেন। এতে ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
গোড়ালি ব্যথার জন্য কখন ডাক্তার দেখাবেন
পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে চলুন বন্ধুরা জানি গোড়ালি ব্যথার জন্য কখন ডাক্তার দেখাবেন সে সম্পর্কে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
আরো পড়ুনঃত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় - চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপায়
- পায়ের গোড়ালি অবশ হয়ে গেলে।
- পায়ের পাতা এবং গোড়ালি ফুলে গেলে।
- হাঁটাচলা করার সময় পা ভাঁজ করতে অসুবিধা হলে।
- জ্বরের সাথে যদি গোড়ালি ব্যথা হয় অথবা গোড়ালি ব্যথার জন্য জ্বর আসে।
- সাত দিনের বেশি গোড়ালি ব্যথা হয়ে থাকলে অর্থাৎ হাঁটাচলা ছাড়াও সব সময় গোড়ালি ব্যথা হলে।
- পায়ের পাতায় ভর দিয়ে দাঁড়াতে অসুবিধা হলে।
- কাফ মার্সেল প্রচন্ড ব্যথা এবং ফুলে গেলে।
বন্ধুরা আপনাদের যদি এই সকল লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে। তবে দেরি না করে অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা
যে সকল ব্যক্তিদের মধ্যে পায়ের গোড়ালি ব্যথা এর চিহ্ন বা উপসর্গ রয়েছে। তারা ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এটা কার্যকর ভাবে সারাতে সক্ষম। তারপরেও যারা জানতে চান পায়ের গোড়ালি ব্যাথার চিকিৎসা সম্পর্কে।পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা এই পোস্টটির মাধ্যমে জেনে নিন পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা সম্পর্কে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
প্রাথমিক চিকিৎসা
বরফ
পায়ের গোড়ালি ফোলা এবং ব্যাথা কমানোর জন্য বরফ সেক দিতে পারেন। যেখানে ব্যথা বা
আঘাত পেয়েছেন সেখানে ১৫ মিনিট বরফ লাগান ।৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন ফের আবার বরফ
দিন।
বিশ্রাম
পায়ের গোড়ালি ব্যথা হলে কিছুদিন ব্যায়াম করা বন্ধ রাখুন। এমন কাজ করুন যে
কাজের ফলে আপনার পায়ের উপর চাপ না পরে ।অর্থাৎ আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম
গ্রহণ করুন।
সেঁক দেওয়া
ইলেকট্রিক ব্যান্ডেজ রয়েছে যা বাজারে পাওয়া যায় এগুলো প্রদাহ বা ফোলা কমায়
এবং টেন্ডেনসনের নড়াচড়াও কমায়।
উপযুক্ত জুতো পরুন
আপনার গোড়ালি ব্যাথা হলে গোড়ালি ব্যথা কমাতে সহায়ক বা উপযুক্ত জুতো পরুন।
পায়ের গোছ নড়াবেন না
পায়ের গোছ প্লাস্টার করার পরে বা পা নিচু করে গোড়ালি তোলা উঁচু করে রাখুন যাতে
করে প্রথম কয়েক সপ্তাহে পায়ের গোছ একদম নাড়াতে না হয়।
এলিভেশন
পায়ের গোড়ালি ফোলা কমানোর জন্য পায়ের নিচে বালিশ রেখে হাটের উচ্চতার চেয়ে
উঁচুতে পা রাখুন। কিংবা পা উচু রেখে ঘুমান।
দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা
ঔষধ
যাদের যন্ত্রনা বা প্রদাহ কমেনা তাদের সাধারণত যন্ত্রণা নিরোধক ঔষধ দেওয়া
হয়।যদি ঔষধে কোন কাজ না করে ।তাহলে করা ব্যথা কমানোর ঔষধ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া
হয়।
ফিজিওথেরাপি
ডাক্তাররা অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপিও বা ফিজিক্যাল থেরাপীর পরামর্শ
দেন। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট যে সকল সুপারিশ প্রদান করে থাকেন সেগুলো হলঃ
- অ্যাকিলিস টেন্ডেন এবং সহায়ক কাঠামো মজবুত করার জন্য সেগুলি টানটান এবং শক্তিশালী করা।
- আধ্যাত্মিক উপকরণ এর ব্যবহার যেমন ব্রেস, সপ্লিন্ট, ওয়েজ, জুতোর ইনসার্ট, যা গোড়ালি উচু করে এবং চাপ কমায় এবং গোড়ালির তলায় আরামদায়ক কুশনের অনুভূতি দিয়ে থাকে।
অস্ত্র প্রচার
পাচিন পদ্ধতিতে আরাম যদি না পাওয়া যায়। টেন্ডেন একেবারে ছিঁড়ে গিয়ে থাকে।
তাহলে অস্ত্রপ্রচার এবং পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়।
তো বন্ধুরা উপরিক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনারা আশা করি জানতে পেরেছেন পায়ের গোড়ালি
ব্যাথার চিকিৎসা সম্পর্কে।
পায়ের গোড়ালি ব্যথা এর প্রতিরোধ
বন্ধুরা আপনারা যারা পায়ের গোড়ালি ব্যথা এর প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে চান। তারা পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কারণ আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে পায়ের গোড়ালি ব্যথা এর প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তো চলুন বন্ধুরা নিম্নে জেনে নেই পায়ের গোড়ালে ব্যথা এর প্রতিরোধ সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণসমূহ - সিজারের পর খাবার তালিকা
- পায়ের গোড়ালি ব্যথা এর প্রতিরোধ করতে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য তালিকা বানান।
- ওজন ঠিক রাখুন।
- যখন আপনার পেশী ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন পর্যাপ্ত পরিমাণ।
- নিজে যে শারীরিক কাজ করতে চান,সে কাজের জন্য উপযুক্ত জুতা ব্যবহার করুন ।
- যে কোন কাজের জন্য নিজের গতি অনুযায়ী কাজ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- গোড়ালি ব্যথা না হওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালবেলা ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়াম করার পর পায়ের পাতা ,পায়ের ডিম টানটান করে দাঁড়াতে হবে।
- নিজের পায়ের সঙ্গে মানানসই জুতা ব্যবহার করুন যা চলাফেরায় সাহায্য করে।
- পায়ের ডিমের পেশী শক্ত করার জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম করুন ,যাতে পরিশ্রমসাধ্য কাজের সময় চাপ মোকাবেলা করতে পারেন।
- তার জন্য প্রথমে কম চাপের প্রশিক্ষণ নিন এবং পরে ধীরে ধীরে নিজের সহনশীলতা অনুসারে পরিশ্রমের মাত্রা বাড়িয়ে দিন।
শেষ কথা
বন্ধুরা পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - পায়ের গোড়ালি ব্যথার
চিকিৎসা এই পোস্টেটি আপনাদের কাছে কেমন লাগলো। আশা করছি যে সকল বন্ধুদের পায়ের
গোড়ালি ব্যাথার সমস্যা রয়েছে। তারা এই পোষ্টের মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকবেন। তো
বন্ধুরা আপনারা উপকৃত হলে আমাদের কষ্ট সার্থক।-ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url