ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস - ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ


ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস - ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এই প্রশ্নটি অনেক মুসলমান ভাই ও বোনেরা করেন। আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদের জানাবো ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস - ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ তা নিয়ে। এবং এটি আমরা জানাবো পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে। তাই ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস - ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এ বিষয়ে জানতে হলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে আপনাকে পড়তে হবে।

আমাদের দেশে প্রতিবছরই রাসুল সাঃ এর দুনিয়ার আগমনে তিনটিকে ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করা হয়। ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের ব্যাপারে আলেম সমাজের অনেক মতবিরোধ রয়েছে। অনেক আলেমই রয়েছেন যারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের ব্যাপারে তীব্র বিরোধিতা করেন। তাই আমরা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জানবো ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ সেই সম্পর্কে। তো বন্ধুরা চলুন জেনে নেই ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস - ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এ প্রসঙ্গে।

ঈদে মিলাদুন্নবী কি ও কেন এটি পালন করা হয়ে থাকে

আজ আমি আলোচনা করব আমার, ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস - ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এই আর্টিকেলটিতে ঈদে মিলাদুন্নবী কি ও কেন এটি পালন করা হয়ে থাকে সে সম্পর্কে। আর আপনারা যদি এ বিষয়ে জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি পুরোটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আরো পড়ুনঃ ১২ই রবিউল আউয়াল কত তারিখ ২০২৩ - ঈদে মিলাদুন্নবী কত তারিখ ২০২৩

ঈদ শব্দের অর্থ হলো খুশি বা ফিরে আসা আর মিলাদুন্নবী (সা) বলতে নবীজি (সা) এর জন্মদিন কে বোঝানো হয়েছে। সহজ ভাবে বলতে গেলে ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে রাসূল (সা) জন্ম বা আগমনকে বোঝানো হয়। অশান্তি আর বর্বরতা কে দূর করতে রাসুলুল্লাহ সাঃ শান্তির দূত হিসেবে পৃথিবীতে আসেন। আর নবীজি (সা) এর পৃথিবীতে শুভ আগমন কেই ঈদে মিলাদুন্নবী বলা হয়ে থাকে। আবার এ বিষয়ে কোরআন শরীফে কিছু আয়াতও অবতীর্ণ হয়েছে যেমন-

  • স্মরণ করো আল্লাহর নিয়ামতকে যা তোমাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। (সূরা বাকারা আয়াত -২৩১)
  • "হে হাবিব ,নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি"। (সূরা আম্বিয়া আয়াত ১০৯)
  • আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছেন," আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি পালন করা যা তোমাদের সমস্ত ধন দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়"। (সূরা ইউনুস আয়াত ৫৮)

অতএব এই তিনটি আয়াতকে পরিচালনা করলে যে বিষয়টি পাওয়া যায় তা হচ্ছে আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের উপর রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। আর তাই এই দিনটিকে খুশিতে উদযাপন করা আমাদের উচিত। তবে খুশি বলতে গান-বাজনা করা নায়। খুশি বলতে নবীজির উপরে দরুদ পাঠ করা এবং জিকির করা ।আল্লাহর এবাদত বন্দেগী করা। আর তাই আপনি এই আলোচনা থেকে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন যে, ঈদে মিলাদুন্নবী কি এবং কেন এটি পালন করা হয়ে থাকে।

ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস

হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি ঈদে মিলাদুন্নবী প্রচলন হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা। সে সময়ে মিশরের ফাতেমীয়রা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করতেন। পরবর্তী সময়ে ইরাকের একটি প্রদেশের শাসক আবু সাঈদ মোজাফফর আল দিন কুকুবুরি ছিলেন ঈদে মিলাদুন্নবীর সবচেয়ে বিখ্যাত প্রচারক।

সে সময় তিনি প্রথম সিরাতুন্নবী যিনি সুন্নিসহ সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদে মিলাদুন্নবীর উদযাপনের প্রচলন করেছিলেন। আর তারপর থেকে ব্যাপকভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়। তাই ধারণা করা হয় ৬০৪ হিজরি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়ে থাকে। আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে হাসান ইবনে দেহিয়া আল কাবলি নামে এক ভদ্রলোক সারা বিশ্ব ভ্রমণ করে থাকেন এবং ঈদে মিলাদুন্নবী আয়োজনের জন্য মানুষের মনে আগ্রহ সৃষ্টি করে থাকেন। এবং তিনি মিলাদ কায়েমের ওপর প্রথম গ্রন্থ রচনা করেন যার নাম "কিতাবুল তানভীল ফি মাওলিদিস সিরা-জীল মুনির"। আর এভাবেই ওই সময় থেকেই বিশ্বের মুসলিম দেশে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হয়।

ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে বিভিন্ন তর্কবিতর্ক থাকলেও বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশে মত বাংলাদেশের মুসলমানরাও নানা আয়োজনে মধ্য দিয়ে দিনটিকে উদযাপন করে থাকেন। তবে ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে গান বাজনা মিছিল ও অন্যান্য খবরের আয়োজন ইসলামী আইনের সাথে সংঘর্ষিক।

কারণ নবী রাসূলের সময় এভাবে ঈদ উদযাপন হয়নি। তাই এভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা জায়েজ নয়।

ঈদে মিলাদুন্নবী কবে থেকে পালিত হয়

মানবজাতিকে রক্ষা করতে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন ১২ ই রবিউল আউয়াল আমাদের প্রিয় নবী এবং মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তার এই আগমনের দিনটিকে আনন্দের সাথে উদযাপন ও স্মরণীয় করার জন্য, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়ে থাকে। তবে নবী রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামদের সময়ে এটি পালনের কোন চলছিল না।  নবী কারীম এর মৃত্যুর বহুদিন পরে ইরাকের শাসকেরা সর্বপ্রথম ঈদে মিলাদুন্নবী ও মিলাদ কায়েম আয়োজনের কথা চালু করেছিলেন।

আরো পড়ুনঃ ঈদে মিলাদুন্নবী কত তারিখ ২০২৩

আর সে থেকে আজও মুসলিম বিশ্বের প্রায় সকল দেশগুলোতেই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়। শিয়া সম্প্রদায় লোকেরা ঈদে মিলাদুন পালনে বিশেষ করে আগ্রহী ভূমিকা পালন করে। এবং সেই দিন তারা দিনব্যাপী বিভিন্ন ধরনের আনন্দ অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন।

তো বন্ধুরা আশা করছি আপনারা ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস - ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জানতে পারলেন ঈদে মিলাদুন্নবী কবে থেকে পালিত হয় সে সম্পর্কে। এখন আমরা নিম্নে জানবো ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ সে সম্পর্কে।

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ

আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন আছে ঈদে মিলাদুন পালন করা কি জায়েজ এ ব্যাপারে।ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস - ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এই পোস্টটির মাধ্যমে চলুন জানি ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ না বেদাআত সে সম্পর্কে।

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। অনেক আলেম ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করাকে সরাসরি বেদাআত আখ্যায়িত করেছেন। তাছাড়া অনেক হাক্কানী আলেম শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে ইসলামের সাথে সংঘর্ষিক না হয় এমন পদ্ধতিতে ঈদে মিলাদুন্নবী স্বল্প পরিসরে পালন করলে কোন সমস্যা নেই বলে মত পোষণ করেছেন। তাই চলুন জানি ইসলামী বিধান অনুসারে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ কিনা সে সম্পর্কে।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে সকলের উদ্দেশে একটি ঘোষণা দিয়ে যান যে, যতদিন তোমরা আমার পরিপূর্ণ জীবন আদর্শ ও পবিত্র কোরআনকে আঁকড়ে রাখতে পারবে, ততদিন কেউ তোমাদের ইসলামের পথ থেকে পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। অতএব তার এই ঘোষণার শিক্ষা হলো এই যে ,ইসলামের প্রতিটি দিবসের ক্ষেত্রে তার দেখানো পথ অনুসরণ করলে আমরা সফলকাম হব ইনশাআল্লাহ।

ঈদের মিলাদুন্নবী পালন করা হয় মূলত নবীজির আগমনের আনন্দিত হয়ে বা খুশি হয়ে। কিন্তু আর একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে যে বারই রবিউল আউয়াল নবীজি শুধু এই দুনিয়াতে এসেছেন তা নয় এই দিনে তিনি আমাদের ছেড়ে চলেও গেছেন। তাই এই দিনে শুধু আনন্দ উৎসব করে কাটানো একদম যৌক্তিক হতে পারে না। নবীজির মৃত্যুর পর সাহাবায়ে কেরামগণ ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে থাকতেন। তাই যদি সাহাবীরাই ব্যতীত হয়ে থাকেন তবে আমরা কেন আনন্দ উৎসব পালন করি। আর এজন্যই অনেক আলেমগণ ঈদে মিলাদুন্নবীতে আনন্দ করার চরম বিরোধিতা করে থাকেন।

বর্তমানে এই সময়ে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ,গান-বাজনা এবং অযাচিত আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে। আর এই সকল আয়োজন কোনোভাবেই ইসলামী বিধি-বিধান সমর্থন করে থাকেন না। সেজন্য নবীজির মৃত্যু দিবসে আলেমদের কোন মতবিরোধ নেই কিন্তু ইসলামের সাথে সংঘর্ষিক পদ্ধতিতে জন্মদিন পালনের ক্ষেত্রে আলেমদের মনে মতবিরোধ রয়েছে। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর মতে, ইসলাম সম্মত নয় এমন কোন বিষয় ইসলামের সাথে মিলিয়ে পালন করা সুস্পষ্ট বিদাআত।

আরো পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বার আমল - আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত

তাই আমরা ঈদে মিলাদুন্নবীতে বিদআতি কোন আচার অনুষ্ঠান পালন করব না। আশা করছি ইসলামের বিধানে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ না বিদআত সে সম্পর্কে আপনারা সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।

শেষ কথা

ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস - ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এই আর্টিকেলটি বন্ধুরা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। এই আর্টিকেলটিতে আমি ঈদে মিলাদুন্নবীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ঈদে মিলাদুন্নবী কি ও কেন এটি পালন করা হয়ে থাকে ,ঈদে মিলাদুন্নবী কবে থেকে পালিত হয়, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা যদি পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন অবশ্যই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তো বন্ধুরা আমাদের পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন এবং আমাদের পেজটি ফলো রাখবেন।-ধন্যবাদ


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url