জন্ডিস হলে কি ওষুধ খাব - জন্ডিস হলে কি খেতে হয়
রক্তে বিলিরুবিন বৃদ্ধির ফলে জন্ডিস রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর সে কারণে রোগীর তকো চোখ হলুদ হতে থাকে। আর তার সাথে সাথে শরীরে দেখা দেয় রক্তের অভাব। তাই এই সময়ে রোগীর খাবারের উপর বিশেষ যত্ন নিতে হবে, এবং সেই সাথে সাথে জন্ডিস হলে কি ওষুধ খাবে সে সম্পর্কেও জানতে হবে।
জন্ডিস কেন হয়
শরীরে যখন বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে যায় তখন আমাদের শরীরে জন্ডিস দেখা
দিয়ে থাকে। প্রত্যেকটি মানুষের শরীরে স্বাভাবিক নিয়মে লোহিত কণাগুলো ভেঙ্গে
গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে যা আমাদের লিভারের প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সঙ্গে
আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্রের পিত্তোনালীর মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে থাকে।
এক সময় এই বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে বের হয়ে থাকে।
বিলিরুবিন নির্গত হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি হলে আমাদের
শরীরের রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে যায়। ফলে শরীরে জন্ডিস দেখা
দেয়।
জন্ডিসের লক্ষণ সমূহ
জন্ডিস পানিবাহিত একটি রোগ। আর এই রোগের রয়েছে অনেকগুলো লক্ষণও। আর তাই খুব সহজে
জন্ডিস রোগীদের সনাক্ত করা সম্ভব। তবে আপনারা যদি জন্ডিসের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে
কিছুটা জানতে পারেন তাহলে এই রোগ সনাতন করা আরও সহজ। তো চলুন আমরা জন্ডিসের
লক্ষণসমূহ সম্পর্কে জেনে নেই।
- অরুচি থাকবে
- বমি বমি ভাব হবে
- চোখ মুখ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে
- প্রসাব হলুদ হয়ে থাকবে
- আপনার শরীর হলুদ বর্ণ হতে শুরু করবে
- কোন কোন সময় চুলকানি হতে পারে
- কারো পায়খানা সাদা হতে পারে
- অনেক সময় শরীর দুর্বলতা দেখা দেবে
- কখনো কখনো মৃদু বা তীব্র পেট ব্যথা হতে পারে
- কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে
- ক্ষুধামান্দার সমস্যা দেখা দিতে পারে
জন্ডিস প্রতিরোধে করণীয়
উপরে আমরা উল্লেখ করেছি জন্ডিস এর লক্ষণ সমূহ নিয়ে এবার আমরা আলোচনা করব জন্ডিস
প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে। আপনারা যারা জন্ডিসের সমস্যায় ভুগতেন তারা
হয়তো বা জন্ডিস প্রতিরোধের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইছেন। তাই আপনারা যদি এই
আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েন তাহলে অবশ্যই জনসভাতে করণীয় সম্পর্কে
জানতে পারবেন ।আসুন নিম্নে সে সম্পর্কে জেনে নেই।
- জন্ডিস প্রতিরোধে নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
- নিরাপদ যৌন মিলন নিশ্চিত করতে হবে।
- কলকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ থেকে সবসময় দূরে থাকতে হবে।
- সেলুনে সেভ করার সময় অবশ্যই নতুন ব্লেড ব্যবহার করতে হবে।
- জন্ডিস আক্রান্তর ব্যক্তির নিকট থেকে সব সময় নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
- হেপাটাইটিস এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।
- সিনঞ্জ ব্যবহারের সময় অবশ্যই নতুন সিনঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
- অবশ্যই প্রয়োজনে স্কিনিং করে শরীরের রক্ত নিতে হবে।
জন্ডিস হলে কি ওষুধ খাব
জন্ডিস হলে আমরা পড়ে যায় বিপাকে এবং ভাবতে থাকি যে কোন ধরনের ঔষধ খেলে তা থেকে
রেহাই পাব। আপনাদের সমস্যা সমাধান করে দিতে তাই আমি আপনাদের সাথে জন্ডিস হলে কি
ওষুধ খাব সে সম্পর্কে আজকে জানাবো। তাহলে চলুন জেনে নেই জন্ডিস হলে কি ওষুধ খাব
সে সম্পর্কে।
- Solvit B syrup
- Avolac syrup
- Omidon Tablet
- Bioliv Capsule
জন্ডিস এর জন্য হামদার্দ এর ঔষধ
আপনারা উপরের ঔষধ গুলোর পাশাপাশি জন্ডিসের জন্য হামদার্দ এর ঔষধ খেতে পারেন।
নিম্নের হামদাদ এর কিছু ঔষধের নাম দেওয়া হলঃ
- হাজমি প্লাস সিরাপ
- ইকটান সিরাপ
জন্ডিস হলে কি খেতে হয়
জন্ডিস হলে এমন কিছু খাবার খাওয়া উচিত যাতে করে যকৃত বা পিত্তথলিত কোনরকম
প্রেসার বা চাপ না পরে। অল্প অল্প করে পরপর খেলে এবং পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিলে
জন্ডিস খুব সহজেই সেরে যায়। আসুন নিম্নে আমরা জেনে নেই জন্ডিস হলে কি খেতে হয়
সে সম্পর্কে।
সবজি
জন্ডিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী সবজি ।যেমন- মিষ্টি আলু, মুলা, গাজর, টমেটো,
ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া ,পালং শাক ইত্যাদি।
প্রোটিন
জন্ডিস রোগীদের জন্য অবশ্যই খাদ্য তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন- মুরগির
মাংস, মাছ ,ডাল থাকতে হবে। কারণ জন্ডিস রোগীরা যদি প্রোটিন জাতীয় খাবার না খায়
তাহলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে।
দুগ্ধ জাতীয় খাবার
জন্ডিস রোগীরা দুদ্ধজাতীয় খাবার খেতে পারবে। কিন্তু ফুল ক্রিম দুধ বা দই ,পনির
ইত্যাদি এগুলো না খাওয়াই ভালো যা যকৃত জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
গোটা শস্য
বাদামি চাল, ওটস, রুটি খেতে পারবেন কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে।
কারণ গোটা শস্যই থাকে প্রচুর আশঁ, ভিটামিন যা ক্ষতিকারক টক্সিন শরীর থেকে বের করে
দেয়।
এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার
জন্ডিস রোগীদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে। কারণ এগুলো শরীরে
পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে
।যেমন-বাতাবি লেবুর শরবত ,লেবু, কমলা লেবু ইত্যাদি। তাছাড়াও পরিমাণমতো প্রতিদিন
বাদামও খেতে দিতে হবে। এগুলোর পাশাপাশি প্রতিদিন আদা কুচি বা রসুন কুচি, আদার রস
বা আদা চা খেতে দিন দিনে দুবার যা যকৃতের জন্য খুবই উপকারী।
পানি
জন্ডিস রোগীদের প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি পান করতে দিন। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত
পানি পান করার প্রয়োজন নেই। পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর স্টক্সিন বের করে দেয় এজন্য
ডাবের পানি, আখের রস খেতে দিতে পারেন। তবে এগুলো অবশ্যই ঘরে তৈরি খেতে হবে।
জন্ডিস হলে যেসকল খাবার খাবেন না
এতক্ষণ আমরা জানলাম জন্ডিস হলে কি খাবার খেতে হবে সে সম্পর্কে ।এখন আমরা জানবো
জন্ডিস হলে যে সকল খাবার খাবেন না তা সম্পর্কে। তো চলুন নিম্নে আমরা জেনে নেই
জন্ডিস হলে যে সকল খাবার খাবেন না তা সম্পর্কে।
- কাঁচা লবণ
- অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় বা চিনি জাতীয় খাবার
- অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার
- রেডমিট যেমন-ছাগল ,মহিষ, গরুর মাংস
- অ্যালকোহল
- ভাজা খাবার
- চা বা কফি
- কলা
- জাঙ্ক ফুড
শেষ কথা
শরীরে যখন বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে যায় তখন আমাদের শরীরে জন্ডিস দেখা
দিয়ে থাকে। প্রত্যেকটি মানুষের শরীরে স্বাভাবিক নিয়মে লোহিত কণাগুলো ভেঙ্গে
গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে যা আমাদের লিভারের প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সঙ্গে
আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্রের পিত্তোনালীর মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে থাকে।
এক সময় এই বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে বের হয়ে থাকে। বিলিরুবিন নির্গত হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি হলে আমাদের শরীরের রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে যায়। ফলে শরীরে জন্ডিস দেখা দেয়।
আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আপনাদের কাছে আর্টিকেলটি যদি
ভালো লেগে থাকে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের পেজটি ফলো রাখবেন।
এ ধরনের আরো অনেক পোস্ট পেতে আমাদের পেজটি ফলো করুন।-ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url