খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা - দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
খেজুর কমবেশি আমরা সবাই খেতে পছন্দ করে থাকি । খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ। গ্রীষ্ম মন্ডলীয় অঞ্চলে খেজুর গাছ জন্মায়। খেজুরের বৈজ্ঞানিক নাম হল ফিনিক্স ড্যাক্টিলিফেরা। আর ইংরেজি নাম হল Date Fruit।। খেজুর শুকনো হতে পারে আবার তাজা ও হতে পারে। খেজুর আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করে থাকে।
খেজুরের উপকারিতা
খেজুরে রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা। যা আমাদের শরীরের শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে থাকে। তাছাড়াও খেজুর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে সেই সাথে সাথে মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। তো চলুন নিম্নে খেজুরের উপকারিতা কি কি সে সম্পর্কে জেনে নিই।
- খেজুর হাড় মজবুত করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে
- হজম শক্তি উন্নতি করে
- শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
- পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ত্বকের জন্য উপকারী
- মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করে
- হ্যাংওভার নিরাময় করে
- খেজুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- চুলের জন্য খুবই উপকারী
- খেজুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
- রক্তশূন্যতা দূর করে
- ফোলা কমাতে সাহায্য করে
- বাতের সমস্যার উপশম করে খেজুর
- ওজন কমায়
- গর্ভবতী মায়েদের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে খেজুর
- রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায়
- বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
খেজুরের অপকারিতা
খেজুরের এতগুলো উপকারী গুনাগুন থাকার পরেও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আসুন নিম্নে আমরা খেজুরের অপকারিতা সম্পর্কে জানি।
- খেজুর অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে তা বদহজম তৈরি করতে পারে আবার পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যাও হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় খেজুর খেলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ বিপুল পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে খেজুরে।
- কেউ যদি অতিরিক্ত মাত্রায় খেজুর খায় তাহলে তার ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
- যাদের ডায়বেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা খেজুর থেকে বিরত থাকুন। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের অতিমাত্রায় খেজুর খেলে ডায়াবেটিস বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
- যাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। তারা খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি শরীরের ক্ষতি সাধন করে।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
অনেক বন্ধুরা রয়েছেন যারা খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান।খেজুর আপনারা প্রতিদিন সকালে খেতে পারেন ।কারণ সকালে খেজুর খেলে সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীরের শক্তি পাওয়া যায়। খেজুরের সাথে আপনারা আরো যেসব খাবার খেতে পারেন সেগুলো হলোঃ
- কিসমিস ও খেজুর একসাথে খেতে পারেন।
- দুধ ও খেজুর মিশিয়ে খেতে পারেন।
- খেজুর ও শসা একসাথে খেতে পারেন।
- শুকনো খেজুর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন ।কারণ এর উপকারী গুনাগুন বেশি।
- মধু ও খেজুর একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- যারা জিমে যান তারা জিমে যাওয়ার আধা ঘন্টা আগে খেজুর খেতে পারেন।
- খেজুর খাওয়ার উত্তম সরকার সময় হল সকালে খালি পেটে।
- তাছাড়া আপনারা যখন ইচ্ছে তখনই খেতে পারেন কিন্তু পরিমাণ মত।
আশা করছি বন্ধুরা আপনারা খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
খেজুরের পুষ্টি উপাদান
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান।চলুন দেখে নেই খেজুরের পুষ্টি উপাদান কি কিঃ
- ম্যাগনেসিয়াম
- পটাশিয়াম
- ম্যাঙ্গানিজ
- ফসফরাস
- ভিটামিন বি ৬
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন কে
- ভিটামিন ই
- সোডিয়াম
- কার্বোহাইড্রেট
- আয়রন
- ফ্যাট
- জিংক
- ক্যালসিয়াম
- প্রোটিন
- পানি
এগুলো ছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরের মধ্যে রয়েছে পুষ্টি উপাদান যেমন-
- ভিটামিন সি ০.৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ ৬ মাইক্রগ্রাম
- নিয়াসিন ১.২৭৪ মিলিগ্রাম
- থায়ামিন ০.০৫২ মিলিগ্রাম
- ফলেট ১৯ মাইক্রগ্রাম
- ভিটামিন কে ২.৭ মাইক্রগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৩৯ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই ০.০৫ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম
- জিংক ০.২৯ মিলিগ্রাম
- আয়রন ০.৯০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৬ - ০.২৪৯ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ০.২৯৬ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিস ৫৪ মিলিগ্রাম
- চর্বি ০.১৫ গ্রাম
- পটাশিয়াম ৬৯৬ মিলিগ্রাম
- ফাইবার ০.৭ গ্রাম
- কার্বোহাইডেট ৭৪ . ৯৭ গ্রাম
- প্রোটিন ১.৮১ গ্রাম
- ক্যালরি ২৭৭ কিলো ক্যালরি
কাঁচা খেজুরের উপকারিতা
খেজুর শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল ।পাকা খেজুরের পাশাপাশি পাকা কাঁচা খেজুরও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। তাছাড়াও কাঁচা খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফাইবার ,প্রোটিন ও ভিটামিন বি ৬। চলুন নিম্নে কাচা খিচুরের উপকারিতা জেনে নেই।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- পেট ফোলা দূর করে
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- বদহজম দূর করে
- হাড় মজবুত করে
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে
- পেটের গ্যাস দূর করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
- স্টকের ঝুঁকি কমায়
- রক্তশূন্যতা দূর করে ইত্যাদি।
মধু ও খেজুরের উপকারিতা
মধু ও খেজুর প্রচুর উপকারী এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। তাছাড়াও মধু ও খেজুরের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। শরীর মন ও স্মৃতিশক্তি স্বদেশ রাখতে মধু ও খেজুরের ভূমিকা অপরিসীম। চলুন নিম্নে মধু ও খেজুরের উপকারিতা জেনে নেই।
- শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে
- হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট নিরাময় করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- উচ্চ রক্তচাপ কমায়
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- স্নায়ু শক্তি বৃদ্ধি করে
- কণ্ঠস্বরকে ভালো রাখে
- নিঃসন্তান দম্পতি সন্তান দানের সহায়তা করে
- তারুণ্য ধরে রাখে
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- হাড় ও দাঁত মজবুত করে
- দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে
- শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে
তাই আমাদের শরীরে সুস্থ রাখতে নিয়মিত খেজুর ও মধু খাওয়া বেশ উপকারী। শরীর সুস্থ রাখতে তাই আপনারা নিয়মিত এটি খেতে পারেন।
আজওয়া খেজুরের উপকারিতা
আজোয়া খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ এবং এটি খেতে খুবই সুস্বাদু। আজোয়া খেজুরটি ছোট ছোট কালো জামের মতো হয়ে থাকে। অন্যান্য খেজুরের তুলনায় আজোয়া খেজুরের দাম একটু বেশি। আজোয়া খেজুরের উপকারিতা হলোঃ
- আজওয়া খেজুর সম্পর্কে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে আজওয়া জান্নাতের একটি ফল ,যাতে রয়েছে বিষক্রিয়ার প্রতিশোধক।(তিরমিজি ২০৬৬ হাদিস)
- আজো খেজুর সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেছেন কোন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খায়। সেদিন তাকে কোন জাদু ও বিষ তাকে ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। (বুখারী ৫৪৪৫ হাদিস)
- আজওয়া খেজুর সম্পর্কে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূল (সা) এরশাদ ফরমায়েন করেছেন যে, আল আলিয়ার আজোয়া খেজুর খেয়ে সকালে উপবাস ভাঙ্গলে তার সকল প্রকার বিষক্রিয়া ও যাদু থেকে বাঁচায়। (মুসনাদে আহমদ ২৩৫৯২ হাদিস)
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
খেজুরে প্রচুর পুষ্টিগুণ ও উপকারী গুনাগুন থাকলেও এটি অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। কারণ অতিরিক্ত খেলে এটি শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিয়ম অনুসারে দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫টি খেজুর খেতে পারেন।
আর এর ফলে আপনার স্বাস্থ্য উপকারিতা মিলবে অর্থাৎ ৪ থেকে৫টি বা ১০০ গ্রাম খেজুরই মিলবে প্রায় ২৭৭ কিলো ক্যালরি। তবে অতিরিক্ত মিষ্টির কারণে এই ফল যদি বেশি খেয়ে থাকেন তাহলে ওজন বাড়াতে পারে সেই সাথে সাথে বাড়াতে পারে ডায়াবেটিস।
শেষ কথা
বন্ধুরা আজকের খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা - দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আরও জানাবেন যে আপনারা কি এই আর্টিকেলটির থেকে উপকৃত হয়েছেন কিনা। আপনাদের যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এ ধরনের আরো অনেক আর্টিকেল পেতে আমাদের পেজটি ফলো রাখুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url