গাজরের উপকারিতা ,অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন
গাজর শীতকালীন একটি সবজি এবং এটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর, সেই সাথে সাথে অধিক আঁশ সমৃদ্ধ। তবে এই সবজিটি সারা বছরই পাওয়া যায়। গাজর কাঁচা বা রান্না দুভাবেই খাওয়া যায়। তাছাড়া গাজর সালাত বা তরকারিতে বেশ জনপ্রিয়। গাজরে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান এবং উচ্চমানের বিটা ক্যারোটিন, মিনারেল ,ভিটামিন এ ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ।
গাজরের উপকারিতা
গাজর শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমানে এটি সব সময় পাওয়া যায়। এবং এর পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি। এটা খাওয়া যায় রান্না করে কাচাঁ বা সালাত হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। এই সবজিতে রয়েছে উচ্চমানের বিটা ক্যারোটিন , মিনারেল,ভিটামিন এ ,ও এন্টি অক্সিডেন্ট। চলুন এর উপকারিতা গুলো জেনে নিই।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
আমরা যে সকল খাবার খাই তা হজম প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর অবশিষ্ট খাবার গুলো আমাদের শরীরের কিছু কোষ নষ্ট করে। আর গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিজেন যা এই সকল মৌলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফলে ক্যান্সার জন্ম নেওয়ার প্রবণতা কমে যায়। অর্থাৎ গাজর ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ সহায়ক।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
এন্টি অক্সিডেন্টের মাত্রা ঠিক রাখে
গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে। মানুষের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা ঠিক থাকলে তার বয়সের চাপ চলে যায়। তাছাড়াও এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে হৃদরোগ, ক্যান্সার ও বিষমুক্ত করতে সহায়তা করে থাকে।
হার্ট সবল রাখে
হার্ট সুস্থ না থাকলে মানুষের কর্ম ক্ষমতা কমে যায়। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়োটরি ফাইবার ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা ধমনীর ওপর কোন ধরনের আস্তরণ পড়তে দেয় না ।ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং হার্ট ভালো রাখে।
ত্বকের শুষ্কতা দূর করে
গাজোরে পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত খনির উপাদান উপস্থিত থাকার কারণে তা ত্বকে সুস্থতা দূর করে এবং ত্বক রাখে সুস্থ ও সতেজ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আপনি যদি প্রতিদিন গাজরের এক গ্লাস জুস পান করেন, তাহলে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আশ্চর্যজনক ভাবে কাজ করবে। তা ছাড়াও গাজর শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ,জীবাণু ও বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে ।
অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে
আপনার যদি কোথাও পুড়ে যায় বা কেটে যায় তাহলে সেখানে লাগিয়ে দিন গাজর কুচি বা সেদ্ধ করেও তা পেস্ট বানিয়ে লাগাতে পারেন। এতে আপনার ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে।
কানের ব্যাথার প্রতিকারে
সর্দি-কাশি বা যেকোনো ধরনের কানের ব্যথা হলে ,কলা, গাজর, আদা ,রসুন একসাথে পানিতে সিদ্ধ করে এক থেকে দুই ফোঁটা কানে ব্যবহার করুন ।দেখবেন কানের ব্যথা কমে যাবে।
মস্তিষ্কের সুরক্ষায়
শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের সহায়তা করে গাজরের হালুয়া। এছাড়াও গাজরের জুস নার্ভাস সিস্টেম উন্নত করে এবং মস্তিষ্কে ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য দান করে।
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা সমাধান
গাজর ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা সমাধান করে থাকে যেমন-অ্যাজমা, এমফিসেমা, এবং ব্রংকাইটিস।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেয় গাজর ।ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ খুব সহজ হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কেউ যদি নিয়মিত গাজর খায় তাহলে তার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধান হয়। গর্ব অবস্থায় প্রায় প্রতিটি মায়েরাই শিরায় কান লাগাবা বেশি শক্ত হয়ে যাওয়া অনুভূত করে থাকেন। এ ধরনের সমস্যা সমাধান করতে গাজর বেশ উপকারী। গাজর রক্তস্বল্পতা ও অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ তা আপনার অনাগত শিশুর হাড় এবং তরুণাস্থির গঠনে খুবই প্রয়োজনীয় খনিজ। তাছাড়া গাজোরে থাকা ফলিক এসিড গর্বের সন্তানের স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
গাজরের অপকারিতা
গাজোরে পশুর উপকারী গুনাগুন থাকার পরেও কিছু অপকারী গুনাগুন রয়েছে। নিম্নে গাজরের অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- দুদ্ধদান কারী মায়েরা যদি অতিরিক্ত গাজর খায় তাহলে তাদের বুকের দুধের স্বাদ পরিবর্তিত হয়।
- অতিরিক্ত গাজর খেলে ত্বকের রং হলুদ হয়ে যেতে পারে। আবার অল্প বয়সে শিশুদের দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
- গাজরের অতিরিক্ত বিটা ক্যারোটিন উপস্থিতি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
- গরমে গাজর খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।
- বেশি পরিমাণে গাজর খেলে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা ,গ্যাস, পাকস্থলীর পাচনজনিত ব্যাধি দেখা দিতে পারে।
- গাজরে চিনির মাত্রা বেশি থাকার কারণে এটি অধিক খেলে ডায়াবেটিস এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
গাজরের পুষ্টিগুণ
গাজোরে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। যেমন-
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন কে
- ভিটামিন বি
- বিটামিন এ
- পটাশিয়াম
- আয়রন
- ফাইবার
- ফোলেট
- প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড
এগুলো ছাড়াও প্রতি১০০ গ্রাম কাজরে রয়েছেঃ
- খাদ্য শক্তি ৪১ কিলো ক্যালরি
- ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ১২ মিলিগ্রাম
- বিটা ক্যারোটিন ৮২৮৫ মাইক্রগ্রাম
বন্ধুরা আপনারা উল্লেখিত পুষ্টিগুণ দেখে অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে গাজরের পুষ্টি উপকারিতা কত। তাই আপনারা নিয়মিত গাজর খেতে পারেন পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য। তবে অতিরিক্ত গাজর খাওয়া একদমই ভালো নয়। কারণ এতে করে হজমজনিত সমস্যা যেমন পেটব্যথা , গ্যাস ইত্যাদি তৈরি হতে পারে।
শেষ কথা
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে আমি আলোচনা করেছি গাজরের উপকারিতা,অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। আশা করছি বন্ধুরা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা গাজর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে গেছেন। তো বন্ধুরা আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এ ধরনের আরো অনেক আর্টিকেল পেতে আমাদের পেজটি ফলো রাখবেন। এই আর্টিকেলটি বিষয়ে যদি আপনাদের কোন মতামত থেকে থাকে তাও কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url