টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায় - টাইফয়েড জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার


শীত এলেই বেড়ে যায় আমাদের সর্দি কাশি এবং জ্বর। আর এ সময় জ্বরের লক্ষণ দেখলে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা করে থাকেন। এই জ্বরটি টাইফয়েড জ্বর কিনা তার লক্ষণ বুঝতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। টাইফয়েড জ্বর মূলত হয়ে থাকে সালমোনেলা টাইফি নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে।

আবার কোন কোন সময় দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমেও আমাদের শরীরে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে থাকে। ফলে আমাদের শরীরে দেখা দেয় জ্বর সহ নানা ধরনের উপসর্গ। টাইফয়েড জ্বর এ সব ধরনের বয়সী মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে এতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

টাইফয়েড কি

টাইফয়েড মূলত সালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে। টাইফয়েড জ্বর এ লক্ষণ মূলত মৃদু থেকে তীব্রতর হতে পারে। টাইফয়েড জ্বরের জীবাণু প্রবেশের ৬ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে লক্ষণ গুলি প্রকাশ পেয়ে যায়। এবং কয়েক দিনের মধ্যেই জ্বরের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

টাইফয়েড হওয়ার কারণ

টাইফয়েড মূলত আক্রান্ত রোগীর মলের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। আবার টাইফয়েডের জীবাণু দ্বারা দূষিত খাবার ও পানি কোন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে সেও এ রোগে আক্রান্ত হন।

তাছাড়াও টাইফয়েড মূলত মারাত্মক একটি পানি বাহিত রোগ। এই রোগটি দুটি জীবানুর সংক্রমনে হয়ে থাকে একটি হল সালমোনেলা টিইফি অন্যটি হলো সালমোনেলা প্যারাটাইফি ।সালমোনেলা টাইফি সংক্রমণ হলে টাইফয়েড জ্বর বা এন্টারিক ফিভার আর সালমোনেলা প্যারাটাইফির সংক্রমণ হলে প্যারা টাইফয়েড জ্বর হয়ে থাকে।

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ

সাধারণত কোন মানুষের শরীরে টাইফয়েডের জীবাণু প্রবেশের ১৪ থেকে ১৫ দিন পর এই রোগে লক্ষণটি প্রকাশ পেয়ে থাকে। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হল জ্বর। ৫-৬ দিন জ্বর বৃদ্ধি পায় আবার কখনো বাড়ে ,কখনো কমে, তবে কখনোই পুরোপুরি ছেড়ে যায় না। নিম্নে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ
  • টাইফয়েড জ্বর হলে জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, শরীর দুর্বল দেখা দিতে পারে।
  • ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত টানা জ্বর হওয়া।
  • গা ম্যাচ ম্যাচ করা সহ রোগীর কফ বা কাশি হতে পারে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া অথবা বমি হতে পারে।
  • ওষুধ চলা অবস্থায় সপ্তাহখানেক জ্বর থাকতে পারে।
  • কারো করো জ্বরের সঙ্গে কাশি হয়।
  • হার্ট রেট বা হ্রদ স্পন্দন কমে যেতে পারে।
  • দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীর পেটে ও পিঠে গোলাপি রঙের দানা দেখা দিতে পারে।
  • খুদা মন্দা হওয়া সহ কারো কারো কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
  • প্রচন্ড পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
বন্ধুরা আশা করছি আপনারা টাইফয়েড রোগের লক্ষণগুলি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনাদের কারো যদি এরকম লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে অবশ্যই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

টাইফয়েড জ্বর হলে প্রতিকার

টাইফয়েড জ্বর হলে প্রতিকার হিসেবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জোহরের জন্য নির্ধারিত ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণ করা জরুরী। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন এবং মুখে খাবার ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই এ ধরনের ভ্যাকসিন নেওয়া বা খাবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অতি জরুরী । কখনো কখনো ভ্যাকসিন ১০০ পার্সেন্ট কার্যকরী হয় না ।তাই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেমনঃ
  • যেকোনো ধরনের খাবার গ্রহণ প্রস্তুত বা পরিবষণের পূর্বে অবশ্যই হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
  • খাবার অবশ্যই ভালোভাবে সিদ্ধ বা রান্না করে খেতে হবে।
  • ফলমূল রান্নার বাসনপত্র শাকসবজি সব সময় পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে তারপরে তা খেতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ফোটানো পানি বা পরিশোধিত পানি গ্রহণ করতে হবে।
  • পানি যাতে দূষিত হতে না পারে সেজন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংরক্ষণকৃত সেই পানি পান করা উচিত।
  • রাস্তার পাশের যেকোনো খাবার দোকান থেকে পানি বা খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • টয়লেট সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • টয়লেট ব্যবহারের পর, শিশুদের পরিষ্কার করার পর, খাবার প্রস্তুতির আগে বা খাবার পরিবেশন করার পূর্বে ,নিজে খাবার পূর্বে বা শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে ,অবশ্যই দুই হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ধুতে হবে।

টাইফয়েড জ্বর থেকে রেহাই পেতে ঘরোয়া উপায়

আপনারা একটু সতর্ক হলেই ঘরোয়া উপায়ে টাইফয়েড জ্বর থেকে রেহাই পেতে পারেন। আপনাদের হাতের কাছে বা ঘরেই এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো আপনাদের খুব সহজেই টাইফয়েড জ্বর থেকে রেহাই প্রদান করে। আসুন জেনে নেই টাইফয়েড জ্বর থেকে রেহাই পেতে ঘরোয়া কিছু উপায় সম্পর্কে।

  • তুলসী পাতা
  • আদা
  • প্রচুর পানি পান
  • আপেল সিডার ভিনেগার
  • ঠান্ডা পানির জলপট্টি ইত্যাদি।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায়

আপনাদের অনেকেরই ধারণা রয়েছে বা অনেকেরই ভান্ত ধারণা রয়েছে যে টাইফয়েড জ্বর হলে গোসল করা যায় না। কিন্তু টাইফয়েড জ্বর হলে অবশ্যই গোসল করা যায়। এবং এটি শরীরের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর। কারণ টাইফয়েড জ্বরের কারণে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় ।যার কারণে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা হ্রাস পায়। যার ফলে টাইফয়েড প্রভাব কিছুটা কমতে থাকে।

তাই আপনি যদি টাইফার জলে আক্রান্ত হয়ে থাকেন অবশ্যই গোসল করবেন। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হবে।

টাইফয়েড জ্বরে গোসল করার উপকারিতা

টাইফয়েড জ্বরে আপনারা যদি গোসল করেন তবে এ থেকে আপনারা কিছু উপকারিতা পাবেন। আর যার ফলে আপনার শরীর অনেকটা সুস্থ থাকবে এবং টাইফয়েডের প্রভাব কমবে। তো চলুন নিম্নে কিছু উপকারিতা জেনে নেই।

  • টাইফয়েড জ্বরে রোগী গোসল করলে স্থিতিশীলতা অনুভব করবে এবং শরীরে উন্নতি অনুভব করবে।
  • গোসল করার ফলে রোগীদের শরীর ঠান্ডা ও শান্ত হবে।
  • টাইফয়েডের জ্বরের সময় রোগীরা গোসল করলে তাদের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারেনা ।ফলে জ্বর স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে।
  • যদি রোগীদের প্রচুর শীত বা ঠান্ডা লেগে থাকে তাহলে হালকা গরম পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে নিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • এই সময় গোসল দিলে রোগীরা সুস্থ অনুভব করে এবং মনোবল বৃদ্ধির সাথে সাথে অসুস্থটা কেটে যায় অনেকটা।

বন্ধুরা জানলেন তো টাইফয়েড জ্বরে গোসলের উপকারিতা কতটুকু। করছি আপনারা এই উপকারিতার কথা জেনে উপকৃত হবেন। তবে গোসল করলেই যে আপনার জ্বর ঠিক হয়ে যাবে তা নয় ।আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

শেষ কথা

বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে আমি আলোচনা করেছি টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায় - টাইফয়েড জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। আশা করছি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। আপনারা যদি উপকৃত হয়ে থাকেন অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আমাদের পেজটি ফলো রাখবেন। আপনাদের যদি এই আর্টিকেল বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে বা মতামত থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url