নিউমোনিয়া হওয়ার কারণ ,লক্ষণ ,প্রতিকার - নিউমোনিয়ার ঝুকি এড়াতে করণীয়
শীতকালে বেশিরভাগ বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। আর এটি হয়ে থাকে ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে। অর্থাৎ ফুসফুসে পানি জমে গেলে নিউমোনিয়া দেখা দেয়। প্রতি সতর্ক না হওয়া যায় তাহলে পরবর্তী সময়ে এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিউমোনিয়া রোগটি ছোট বাচ্চাদেরই বেশি হয়ে থাকে। তাই নিউমোনিয়াড়াতে ছোট বাচ্চাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এই রোগ থেকে মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে।
নিউমোনিয়া কি
নিউমোনিয়া হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ,ছত্রাক কিংবা অন্য যেকোনো পরজীবীর সংক্রমণে ফুসফুসের প্রদাহ জনিত একটি রোগ। এই রোগটি দেখা দিলে শরীরের অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের স্বাভাবিক আদান প্রদান প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটে। এবং এই রোগটি ফুসফুসের মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে থাকে। যা দেহের বাতাসের আদান-প্রদান প্রক্রিয়াকে বাধা দিয়ে থাকে যার ফলে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাওয়া বঞ্চিত হয়। এবং ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ শরীরে জমা হয়ে তা হৃদপিণ্ড, কিডনি ,এমনকি মস্তিষ্ক দ্রুত ক্ষতিসাধন করে। যার ফলে রোগী দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে।
নিউমোনিয়া হওয়ার কারণ
নিউমোনিয়া মূলত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক কিংবা যেকোনো পরাজীবীর সংক্রমণে ফুসফুসের প্রদাহ জনিত একটি রোগ। প্রতিবছর পাঁচ বছর কম বয়সী শিশুরা এই রোগের আক্রান্ত হয় এবং শতকরা ২২ জন শিশু এই রোগে মৃত্যুবরণ করে থাকে। এই রোগটি হওয়ার কারণ হলোঃ
- নিউমোনিয়া হওয়ার মূল কারণ হলো আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাকির মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়।
- নিউমোনিয়া রোগের জীবাণু সুস্থ মানুষের নাকও মুখে থাকতে পারে যা শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে ফুসফুসির ছড়িয়ে পড়ে।
- নিউমোনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে সুস্থ ব্যক্তি আসলে এবং তার জিনিসপত্র ব্যবহার করলে। তার শরীরে নিউমোনিয়ার জীবাণু প্রবেশ করতে পারে।
- আবার কোন কোন সময় নিউমোনিয়ার জীবাণু রক্তের সাহায্যে ফুসফুসে সংক্রামিত হতে পারে।
নিউমোনিয়া হওয়ার লক্ষণ
ওজন কম হওয়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপুষ্টি, টিকা সময়মতো না দেওয়া ,নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশুর জন্ম হওয়া অথবা যেকোনো কারণে শরীর অসুস্থতার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে সহজে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিম্নে নিউমোনিয়া হওয়ার লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলোঃ
- খাবারের অরুচি হওয়া
- জ্বর সর্দি কাশি অথবা শ্বাসকষ্ট হওয়া
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- বয়স অনুযায়ী শ্বাস দ্রুত মনে হওয়া
- পেটে ব্যথা হওয়া
- অস্থিরতা ভাব দেখা দেওয়া
- শ্বাসকষ্টের কারণে রোগীর খিচুনি
- শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
- মুকুট ফুটে চারপাশ নীল হয়ে যেতে পারে
- শ্বাস নেওয়ার সময় নাক ফুলে উঠা
- কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা
- কখনো কখনো রুগী অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
উল্লেখিত এগুলোই মূলত নিউমোনিয়া হওয়ার লক্ষণ। আশা করছি বন্ধুরা আপনারা নিউমোনিয়া হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনার বাচ্চার যদি এ ধরনের কোন সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে তাহলে আর দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এবং সে অনুযায়ী ঔষধ সেবন করান।
কাদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে
নিউমোনিয়া যেকোনো সময় যে কারোই হতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি কাদের বেশি রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। যেমন-
- নিউমোনিয়া হওয়ার যোগী মূলত বেশি রয়েছে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের।
- যারা ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি নিচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে।
- তারা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে অর্থাৎ এইডস হলে নিউমোনিয়া হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
- , যাদের শরীরে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন ধরনের রোগ রয়েছে। যেমন- হৃদরোগ ,ডায়াবেটিস, ফুসফুসের যে কোন ধরনের রোগ ইত্যাদি ।
- যে সকল ব্যক্তিরা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে।
- ধূমপান কিবা মাদক এ আসক্ত যারা, তারা এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
নিউমোনিয়ার প্রতিকার
যেকোনো রোগের চিকিৎসা চেয়ে পতিকার এ সতর্ক হওয়ায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবাইকে নিউমোনিয়ার ব্যাপারে সতর্ক বা এ বিষয়ে প্রতিকার করতে হবে। যেমন-
- অল্প ওজনের বাচ্চা বা অপরিণত বাচ্চা সহজেই নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে ।তাই গর্ভকালীন সময় অবশ্যই মায়েদের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে ।যাতে করে অপরিণত ও অল্প ওজনের বাচ্চার জন্ম না হয়।
- বাড়ির সবাইকে দিনে অন্তত কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- অপরিণত বচ্ছার জন্ম হলে তাদের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- সময়মতো বাচ্চাদের সবগুলো টিকা দিতে হবে।
- বাচ্চাদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধে অর্থাৎ বাচ্চারা যাতে অপুষ্টির শিকার না হয় সেজন্য জন্মের প্রথম থেকে ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
- বাচ্চার বয়স ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাচ্চাকে অবশ্যই বাড়ির তৈরি পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
- কারণ ঠান্ডা কাশি হলে অর্থাৎ নিউমোনিয়া আক্রান্ত হলে ,আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে থাকতে হবে।
- ছোট্ট বাচ্চাদের সিগারেট বা চুলার ধোঁয়া থেকে দূরে রাখতে হবে।
- বাড়িতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- বয়স্কদের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে এবং ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে।
- রোগাক্রান্ত হোক বা স্বাভাবিক মানুষ হোক হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই রোমান দিয়ে বা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিতে হবে।
নিউমোনিয়ার ঝুঁকি এড়াতে করণীয়
নিউমোনিয়ার ঝুঁকি এড়াতে কিছু করণীয় রয়েছে ,যেগুলো মেনে চললে এ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। চলুন নিম্নে এ সম্পর্কে জেনে নিই।
গরম পোশাক পরুন
শীতের ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে সব সময় গরম পোশাক পড়ে থাকার চেষ্টা করুন। ছোট্ট সোনা মনিরা সবসময় গরম পোশাক পড়তে চায় না তাই তাদের বিষয়ে সতর্ক হন। রাত্রে কোথাও বের হলে মাথা কান ভালোভাবে কাপড় কিংবা মাফলার দিয়ে মুড়িয়ে রাখার চেষ্টা করুন।
বার বার হাত ধোঁয়া
সব সময় চেষ্টা করুন পরিষ্কার থাকার অর্থাৎ বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিংবা ব্যবহার করুন হ্যান্ড স্যানিটাইজ । খাবার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
শীতকালে বাজারে নানান ধরনের সবজি পাওয়া যায়। যেগুলো কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, ভিটামিন ,ফাইবার যা যেকোনো রোগের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি যোগায়। আবার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এমন কিছু ফল রয়েছে যেমন লেবু, জলপাই, কমলালেবু ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে পারেন। এগুলো রোগ প্রতিরোধে বিশেষভাবে কাজ করে।
শেষ কথা
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে আমি আলোচনা করেছি,নিউমোনিয়া হওয়ার কারণ ,লক্ষণ ,প্রতিকার - নিউমোনিয়ার ঝুকি এড়াতে করণীয় সম্পর্কে। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে। এবং এই আর্টিকেল দ্বারা আপনারা উপকৃত হয়ে থাকবেন। আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর এই আর্টিকেলটি ব্যাপারে আপনাদের যদি কোন মতামত থেকে থাকে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url