থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সম্পর্কে ইসলাম কি বলে - থার্টিফার্স্ট নাইটের উৎপত্তি ও ইতিহাস


ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ দিবাগত রাতকে থার্টি ফার্স্ট নাইট বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। মূলত এটি খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি হলেও প্রতিবছর অনেক মুসলমানও এটি পালন করে থাকে। কিছু বছর আগেও এটি তেমন একটা মুসলমানরা পালন করত না। কিন্তু বর্তমান সময়ে এটি বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এই রাতে পটকা বাজি, গান ,আতশবাজি, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, মাদক সেবন, নারীর শ্লীলতাহানি সহ সবকিছুই হয়ে থাকে। কিন্তু এটি এটি সম্পূর্ণ বিজাতীয় সংস্কৃতি। একজন মুসলমান ও রুচিশীল সচেতন মানুষ কিভাবে বিজাতি সংস্কৃত সমর্থন করবে এটা ভাবা যায় না। চলুন নিম্নে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সম্পর্কে ইসলাম কি বলে - থার্টিফার্স্ট নাইটের উৎপত্তি ও ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারি পালনের ইতিহাস

খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করে থাকেন। তবে পহেলা জানুয়ারি পালনের ইতিহাস ইসলামে কোনভাবেই সম্পৃক্ত নয়। পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে অর্থাৎ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পরে। তারপর এটি ধীরে ধীরে ইউরোপ নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হয়। ইরানে এই নববর্ষ টি শুরু হয় পুরনো বছরের শেষ বুধবার এবং উৎসব চলতেই থাকে নতুন বছরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত।

পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষ পালন করা হয়ে থাকে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান  ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। বাদশা আকরের ফরমান অনুযায়ী আমের ফাতেহুলা সিরাজী উদ্ভাবিত বাংলা ফার্সি চালু হয় ১০ মার্চ ১৫৬৩ সালে। ইংরেজ আমলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হলেও রাজস্ব আদাই ও অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের সাল ব্যবহারের জন্য ফসলী বেশি ব্যবহার করা হতো। ফসলেশনে নববর্ষ হিন্দুদের খাস ধর্মীয় উৎসবের দিন ছিল এর আগে দিন তাদের চৈত্র সংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখ হল ঘর পূজার দিন ।

থার্টি ফার্স্ট নাইটের উৎপত্তি

প্রাচীন পারস্যের সম্রাট জমশেদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে নববর্ষ প্রবর্তন করে থাকেন। তারপরে ব্যাবিলনের সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে ইংরেজি নববর্ষ প্রচলন করে। তবে প্রথম দিকে নববর্ষ বিভিন্ন তারিখে পালন করা হয়েছে ।পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পরিবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারি নববর্ষ দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে। এর পরে থার্টি ফাস্ট নাইটের ব্যাপক প্রচলন ঘটে থাকে ২০০০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মধ্য রাতের মেলেনিয়াম বা সস্রাব্দ পালনের মধ্য দিয়ে।

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

থার্টি ফাস্ট এটি সাধারণত খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি। তাই এটি মুসলমানদের পালন করা মোটেই উচিত নয়। এ সম্পর্কে ইসলাম বিভিন্ন কথা বলেছেন যেমনঃ

অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা

এই রাত্রিকে ঘিরে চলে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা। এই রাত্রিতে যুবক-যুবতীরা আঁটসাঁট ও অশ্লীল পোশাক পড়ে অভাবে চলাফেরা করে।

অথচ এ সম্পর্কে নবীজি সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন ,ওইসব নারী যারা হবে পোশাক পরিহিতা কিন্তু প্রায় নগ্ন। যারা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের নেয়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না ।এমনকি জান্নাতের সুগন্ধীয় পাবেনা।(সহীহ মুসলিম ২১২৮)

নেশা দ্রব্য সেবন

থার্টি ফার্স্ট নাইট রাতে যুবক-যুবতীরা মদ ও নেশাদ্রব্যপান করে মাতাল হয়ে বিভিন্ন অপকর্ম ঘটিয়ে থাকে। তাই ইসলাম সমুদয় নেশা দ্রব্য কে হারাম করেছে। (সূরা মায়েদা ৯০ থেকে ৯১ ও সূরা নিসা ১৪ মুসলিম দ্বিতীয় খন্ড ৯৬৭ পৃষ্ঠা)

অর্থ অপচয়

থার্টি ফার্স্ট নাইট রাতকে কেন্দ্র করে অর্থ অনৈোসলামিক হারাম কাজে ব্যয় করা হয়। যা অপচয় ও অপব্যায়ে শামিল। কিন্তু ইসলাম অপব্যকারীকে শয়তানের ভাই হিসেবে অভিহিত করেছেন। (সূরা বানী ইসরাইল ২৬ থেকে ২৭)

আতশবাজি ও পটকাবাজি

এই রাতে আনন্দ উৎসব উপভোগ করার জন্য মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে থাকে আতশবাজি ও পটকা বাজি। জনগণের মনে আতঙ্ক ও ভীতির সৃষ্টি করে। এবং এটি মুসলমানদের জন্য খুবই কষ্টকর। কিন্তু ইসলাম বলেছে যে যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মমিন নারীদের কষ্ট দেয় তারা মিথ্যা অপরাধ অপকার্য পাপের বোঝা বহন করে। (সূরা আযহা ৫৮ সহীহ বোখারী ২৯০৫)

যুবক যুবতীর অবাধ মেলামেশা

থার্টিফার্স্ট নাইটের রাত্রিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, সমুদ্র সৈকত, নাইট ক্লাব গুলোতে যুবক-যুবিদের অবাধ মেলামেশা ও অপকর্ম চলে। অথচ ইসলাম ইহাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন ,অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হলে তাদের তৃতীয় জন হয় শয়তান। (চিরমিজি, মিশকাত- ১৩১৮ সহিহ)

যুব সমাজকে ধ্বংস ও নারী সমাজ নষ্ট করার নীল নকশা

যুব সমাজ ধ্বংস ও নারী সমাজ নকশা করা নীল নকশা তৈরির জন্যই থার্টিফার্স্ট নাইট বাংলাদেশ আমদানি হয়েছে। ২০০০ সালে ৩১ শে ডিসেম্বর ২৫ মিনিটে গুলশান থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনীয় এক তরুণীকে কিছু মাতাল যুবক তার শরীরে বেশিভাগ কাপড় অংশ ছিড়ে ফেলে এবং শ্লীলতাহানি করে।

বিজাতীয় সাদৃশ্য

মূলত থার্টি ফার্স্ট নাইট বিজাতীয় সাদৃশ্য। এই রাত্রিতে আতশবাজি, পটকা বাজি, ফ্যাশন শো, ফায়ার প্লে, মেসেজ এর মাধ্যমে অভিবাদন জানানো ,কনসার্ট নেশা সবই বিজাতীয় সংস্কৃতির সাদৃশ্য। আর এটি ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করে থাকে।

এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তারই অন্তর্ভুক্ত। (আহমদ ,আবু দাউদ ৩৫১২ ,মিশকাত ৪৩৪৭)

শেষ কথা

পরিশেষে বলতে চাইছে ইসলামে থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করা জায়েজ নেই। এটি একটি ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ। তাই আপনারা অবশ্যই থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন থেকে বিরত থাকবেন। বন্ধুরা এই আর্টিকেল থেকে যদি আপনারা কোন তথ্য পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এবং এই আর্টিকেলটি ব্যাপারে আপনাদের জন্য কোন মতামত থেকে থাকে তাও কমেন্ট করে জানাবেন। এ ধরনের আরো অনেক আর্টিকেল পেতে আমাদের পেজটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url