ফুলকপির উপকারিতা, অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন
শীতকালীন সবজি হিসেবে ফুলকপি খুবই সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় একটি সবজি। শীতকালে বাঙালিরা নানা আইটেমে রান্না করে থাকেন এই সবজিটি।যেমন- ফুলকপির ভাজি ,ফুলকপির তরকারি ,মাছ ও ফুলকপি দিয়ে রান্না, ফুলকপির পাকোড়া ইত্যাদি। ফুলকপি দেখতে অনেকটাই সাদা ।দেখতে যেমন সাদা এটি খেতেও তেমনি সুস্বাদু।
ফুলকপি সম্পর্কে কিছু তথ্য
ফুলকপি কালীন একটি সবজি। এবং প্রতিটি মানুষের কাছে এটি একটি সুস্বাদু সবজি হিসেবে পরিচিত। সবুজ পাতায় ঘেরা মধ্যে দব দবে সাদা ফুলের মতো দেখতে বলে একে ফুলকপি নামে ডাকা হয়। ফুলকপির বৈজ্ঞানিক নাম হলো Brassica Oleracea var.botrytis। ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় এর আদি স্থান বলে জানা যায়। এটি বর্ষজীবী গাছ হলেও এর অনেক বর্ষজীবী জাতও রয়েছে।
বর্তমান সময়ে একটি সারা বিশ্বে অতি পরিচিত। যদিও এটি ভূমধ্যসাগরে এলাকার পর ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফুলকপির প্রধান প্রধান জাত উদ্ভাবিত হয়েছিল নেদারল্যান্ড, গ্রীস, ডেনমার্ক ,ফ্রান্স সহ অনেক দেশে। শীতল ও আর্দ্র জলবায়ুতে ফলে বলে বাংলাদেশে ফুলকপি শীতকালে চাষ করা হয়ে থাকে।
বর্তমান সময়ে ফুলকপি বিভিন্ন রঙের পাওয়া যায়। তবে এই রংগুলো কিছু ন্যাচারাল মিউটেশনের ফলে হয়েছে আর বাকি সব উদ্ভাবিত হয়েছে কৃত্রিমভাবে যাকে বলে হাইব্রিড উপায়। ফুলকপির কিছু উল্লেখযোগ্য জাত হলো-মেইন ক্রপ ,টপিক্যাল গ্রু ৫৫, আর্লি পার্টনার ,কার্তিকা, রাক্ষসী ,বেনারসি, এলাগন,পুশা দীপনি , white ব্যারন,ইত্যাদি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফুলকপি পাওয়া যায় যেমন হলুদ, সবুজ, কমলা ,বেগুনি। এর মধ্যে ব্রকলিও এক ধরনের ফুলকপি।
ফুলকপির উপকারিতা
ফুলকপি যেমন স্বাদের দিক দিয়ে অনন্যা ,তেমনি এটি তার গুণাগুণের দিক থেকেও অনন্যা। কারণ ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্য উপকারিতা যেমন -
- ফুলকপি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
- ফুলকপি আমাদের মস্তিষ্ক ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ফুলকপি।
- হত করতে সাহায্য করে থাকে।
- হাড় ও দাঁত শক্ত করতে সাহায্য করে থাকে ফুলকপি।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়।
- ভিটামিন এবং খনিজের উৎস হলো ফুলকপি।
- হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
- চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী।
- শক্তি যোগায়।
- দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
- পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে।
- উচ্চ ফাইবার যুক্ত।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ভালো উৎস ফুলকপি।
- রক্তের জন্য খুবই ভালো হলো ফুলকপি।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফুলকপি খুবই উপকারী।
বন্ধুরা আশা করছি আপনারা ফুলকপির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। কারণ ফুলকপি খেতেও যেমন সুস্বাদু তেমনি এর উপকারিতা ও রয়েছে অধিক। তাই আপনারা নিয়ম মেনে নিয়মিত ফুলকপি খেতে পারেন। এতক্ষন আমরা ফুলকপির উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম এবার আমরা জানবো ফুলকপির অপকারিতা সম্পর্কে।
ফুলকপির অপকারিতা
সব কিছুরই যেমন উপকারী গুনাগুন রয়েছে তেমনি অপকারী গুনাগুন রয়েছে। আর ফুলকপির ক্ষেত্রেও তেমনি। তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো ফুলকপির অপকারিতা সম্পর্কে। তো চলুন নিম্নে সে সম্পর্কে জেনে নিই।
- অতিরিক্ত ফুলকপি খেলে পেট ফুলে যাওয়া এবং পেট ফাঁপা হতে পারে।
- ভাইপোথাইরয়েডডিজোম অনুভব করতে পারেন।
- অতিরিক্ত ফুলকপি খাওয়ার ফলে খুদা কম লাগতে পারে।
- রক্ত পাতলা প্রভাব অনুভব করতে পারেন।
- ফুলকপিতে তিনি রাফিনোজ থাকে। আর এই চিনি শরীরের জন্য ভাঙ্গা কঠিন ।যার ফলে এটি গ্যাস এবং ফোলা ভাব তৈরি করতে পারে।
- অতিরিক্ত ফুলকপি খেলে তা কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। আর যাদের আগে থেকেই কি নিতে পাথর রয়েছে তারা একদমই ফুলকপি খাবেন না।
- অতিরিক্ত ফুলকপি খেলে পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে আপনার পেট ফুলে যাওয়া এবং এসিডিটি সমস্যা হয়।
- অতিরিক্ত ফুলকপি খাওয়ার ফলে অনেক সময় জয়েন্ট গুলোতে ব্যথা এবং ফোলা ভাব তৈরি হয়।
- যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে ফুলকপি তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
- যেসব মায়েরা বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ান তারা, ফুলকপি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।কারণ ফুলকপি খেলে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হতে পারে অর্থাৎ গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে।
তো বন্ধুরা আশা করছি আপনারা ফুলকপির অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তবে আপনারা যদি ফুলকপি অধিক মাত্রায় পছন্দ করে থাকেন তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে অর্থাৎ অতিরিক্ত ফুলকপি খাবেন না। এতে উপকারে এসে অপকার দেখা দিতে পারে।
ফুলকপির পুষ্টিগুণ
ফুলকপির এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি। এবং এটি একটি মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। তো চলুন ফুলকপিতে যে সকল পুষ্টিগুণ বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো নিম্নে জেনে নেই।
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- জিংক
- ম্যাগনেসিয়াম
- ভিটামিন বি
- বিটামিন সি
- ভিটামিন কে ইত্যাদি।
গবেষণামতে একটি মাসারি ধরনের ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ রয়েছে
- কার্বোহাইড্রেট-৪ .৯৭ গ্রাম
- প্রোটিন ১.৯২ গ্রাম
- শক্তি ২৫ কিলোক ক্যালরি
- ফ্যাট ০.২৮
- আঁশ ২ গ্রাম
- থায়ামিন ০.০৫
- প্যান্থানিক এসিড ০.৬৬৭ মাইকো গ্রাম
- ফোলেট ০.৭৫ মাইক্রো গ্রাম
- নিয়াসিন ০.৫০ মাইকোগ্রাম
উপরিক্ত এই পুষ্টিগুণ থাকায়, ফুলকপিকে একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আশা করছি আপনারা ফুলকপির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
প্রতিদিন ফুলকপি খাওয়া ঠিক কি
ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ সবজি হাওয়ায়, এটি স্বাস্থ্যের ঝুঁকি ছাড়াই স্বাস্থ্যের উপকারিতা প্রদান করে থাকে। তাই আপনারা ফুলকপি খেতে পারেন তবে অতিরিক্ত নয়।
ফুলকপির ব্যবহার
ফুলকপি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমন রান্না, ভাজি, স্যুপ ইত্যাদি উপায়। মূলত ফুলকপির সাদা অংশটি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর বাকি অংশটি গৃহস্থালি পশুদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার এটি আচার ও সালাত হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়।
শেষ কথা
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে আমি আলোচনা করেছি,ফুলকপির উপকারিতা, অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এবং এই আর্টিকেলটি মাধ্যমে আপনারা ফুলকপির স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনাদের কাছে আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এ ধরনের আরো অনেক আর্টিকেল পেতে আমাদের পোস্টটি ফলো রাখুন। তাছাড়াও এ বিষয়ে যদি আপনাদের কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে তা কমেন্ট করে জানান।-ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url