জরায়ু টিউমারের লক্ষণ
জরায়ু টিউমার একটি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা এবং এর কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। বেশিরভাগ সময় ৩০ বছরের উর্ধ্বে নারীদের এই সমস্যাটা হয়ে থাকে। গর্ভধারণের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এটির ফলে। যেকোনো সমস্যা নিয়ে আল্টাস সাউন্ড করালে এই সমস্যাটি ধরা পড়ে। জরায় টিউমার মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে যেমন -সাব সেরাস, সাব মিউকাস, ইন্ট্রা মুরাল।
জরায়ু টিউমারের লক্ষণ
জরায়ু টিউমারের তেমন করলেও উল্লেখযোগ্য লক্ষণ নেই বললেই চলে ।তাই রোগী নিজেই বুঝতে পারে না যে তিনি জরায়ু টিউমারে ভুগছেন ।গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে প্রতি তিন জন আক্রান্তের মধ্যে একজনের লক্ষণ প্রকাশ পায় ।তাই আসুন নিম্নে জরায়ু টিউমারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
মাসিক দীর্ঘস্থায়ী হওয়া
টিউমারের লক্ষণ দেখা দেওয়ার অন্যতম প্রধান হলো মাসিক দীর্ঘস্থায়ী হওয়া অর্থাৎ একবার মাসিক শুরু হলে তা চলতেই থাকে।
সহবাস কালীন ব্যথা
জরায়ুর মুখে টিউমার হলে সহবাসের সময় ব্যথা হতে পারে বা অসস্তি দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাটিকে ডিস্পেরনিয়া বলে।
তলপেট ফুলে যাওয়া
বড় আকারে টিউমার যখন দেখা দেয় তখন তলপেট ফুলে যেতে পারে। কোন কোন সময় টিউমারের কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে।
গর্ভপাত বা বন্ধ্যাত্ব
জরায়ুর অভ্যন্তরীণ অংশে টিউমার সৃষ্টি হলে তা ফেলোপিয়ান টিউবকে বন্ধ করে দিয়ে থাকে। যার ফলে গর্ভধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে ফলে সৃষ্টি হয় বন্ধ্যাত্বের। কখনো কখনো আবার টিউমারের কারণে গর্ভপাত হতে দেখা যায়।
মূত্রনালী ও অন্তে চাপ
কখনো কখনো টিউমারের কারণে জরায়ুর সামনে অবস্থিত মুত্রনালীতে চাপের সৃষ্টি হয়ে থাকে ।ফলে রোগীর ঘন ঘন প্রসাবের প্রয়োজন পড়ে।। কোন কোন সময় আবার এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিয়ে থাকে।
অতিরিক্ত পরিমাণে রক্ত স্রাব বা ব্যথা যুক্ত
টিউমারের কারণে অনেক সময় মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। আবার কখনো কখনো অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হয়। আর এর ফলে আয়রনের পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তস্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে।
জরায়ু টিউমারের করণীয় বা চিকিৎসা কি
জরায়ু মেয়েদের সংবেদনশীল একটি অঙ্গ ।আর এখানে টিউমার হওয়ার আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। জরায়ুতে ইনফেকশনের আরেক নাম হলো ইউরিন ফাইব্রয়েড। ৩০ বছরের মধ্যে নারীদের মধ্যে ২০ শতাংশই টিউমার সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে টিউমার বা ফাইবয়েড এক ধরনের নিরীহ টিউমার যা ক্যান্সার বা বিপদজনক কিছু নাই। কিন্তু দুটো সমস্যার কারণে চিকিৎসার দরকার। একটি হলো অতিরিক্ত মাসিক ও ব্যথা হওয়া থেকে রক্তশূন্যতা, অপরটি হল বন্ধ্যাত্ব । জরায়ু টিউমারে করণীয় বা চিকিৎসা কি চলুন জানি।
- অনেকেরই রয়েছে যাদের এই জটিলতা জ্যোতি বহু গুনে বেড়ে যায় তাহলে অস্ত্রপ্রচার এর প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু জীবনযাত্রা ও খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন আমাদের জীবনে উপকার মিলবে। খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি যাতে করে এ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে ,পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- টিউমার বা ফাইব্রয়েড এর উপসর্গ দেখা দিলে নারীদের জীবন অনেক ক্ষেত্রে যন্ত্রণাময় হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বলে থাকেন যে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে ফাইব্রয়েডের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
- জরায়ু টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে এই টিউমার হলে গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্মদানের জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম বলেন, ফাইব্রয়েডের যে উপসর্গ বেশি বেশি রক্ত যাওয়া,সেটি কমিয়ে রাখার ঔষধ আছে। তবে ঔষধের মাধ্যমে ফাইব্রয়েড বা টিউমার অপসারণ সম্ভব নয়।
- যারা সন্তান ধারণ করে থাকেন তাদের জন্য ঝুঁকি কম থাকে। আর যারা বেশি সন্তান নিয়ে থাকেন তাদের জন্য ঝুঁকি আরো কম হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
- টিউমার অপারেশনের মাধ্যমেই সাধারণত সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। এটি অপারেশন করে ফেলে দেওয়া যায় ।পেট না কেটে ল্যাপাররোসকপি করেও অপারেশন করা যায়।
- ল্যাপারা কপির মাধ্যমে সার্জারিতে পেট না কেটে কয়েকটি ফুটো করে ক্যামেরা এবং অস্ত্র পাচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র ঢুকিয়ে জরায়ু থেকে টিউমার সরিয়ে ফেলা যায়।
টিউমারের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
বর্তমান সময়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় জরায়ু টিউমার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুবই জনপ্রিয় একটি চিকিৎসা। জরায়ু টিউমারের চিকিৎসা অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের মাধ্যমে করালে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়ায় অনেক সময় এটি নির্মূল করা সম্ভব হয়ে থাকে। তাই অযথা জরায়ু টিউমার হলে চিন্তিত না হয়ে বা সময় নষ্ট না করে একবার রিপোর্টসহ অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
টিউমারের চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ
টিউমারের চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ হিসেবে ডাক্তাররা যে সকল ঔষধ রিকোয়ারমেন্ট করেন আসুন জানি সে সকল ঔষধের নাম সম্পর্কে।
- থুজা
- গ্রাফাইটিস
- কোনিয়াম
- ক্যালকেরিয়া ফ্লোর
- ব্যারাইটা কার্ব
বন্ধুরা আশা করছি আপনারা টিউমার চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ গুলোর নাম জানতে পেরেছেন। তবে এগুলো খাবার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খাবেন।
টিউমার প্রতিরোধক খাবার
বন্ধুরা আপনারা যদি টিউমার সমস্যা থেকে বাঁচতে চান কিংবা টিউমার হলে দ্রুত সরে উঠতে চান ।তাহলে টিউমার প্রতিরোধও কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আপনারা নিয়ম মেনে খান। আর এ থেকে আপনারা পাবেন পুষ্টি। আম আসন নিম্নে টিউমার প্রতিরোধক কিছু খাবার সম্পর্কে জানি।
- সবুজ শাকসবজি
- মাশরুম
- কাঁচা হলুদ
- দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার সমূহ
- মাছ ইত্যাদি।
টিউমার চেনার উপায়
আপনারা যারা টিউমার চেনার উপায় খুঁজছেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটিতে আপনারা জানতে পারবেন টিউমার চেনার উপায় সম্পর্কে। আপনারা দ্রুত টিউমার সনাক্ত করে এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে চাইলে টিউমার চেনার লক্ষণগুলো জেনে নিন।
- প্রসাব কমে যাওয়া বা বেশি হওয়া
- ত্বকের রং পরিবর্তন হওয়া
- অস্বস্তি অনুভূত হওয়া
- মাংস পেয়েছে স্ফীতি
- শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা
- কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া
- দীর্ঘমেয়াদি কফ
- মাসিক বা ঋতু স্রাব অনিয়মিত হওয়া
অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ু টিউমার কেন হয়
অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ু টিউমার হওয়ার আলাদা কোন নিয়ম নেই। তবে অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ু টিউমার হতে পারে বংশগত, গ্রোথ ফ্যাক্টর, জিনগত কারণে। তবে সুস্পষ্ট জরায়ু টিউমারের কারণ জানা যায়নি।
লক্ষণ
অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ু টিউমার এর কোন লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মাসিকের পরিমাণ বেশি হয় এবং মাসিকের সময় অত্যাধিক ব্যথা ও তলপেটে ব্যথা অনুভূত হয়।
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
মহিলাদের মাসিকের সময় যদি অতিরিক্ত রক্ত যায় কিংবা মাসিকের আগে উপরে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে ।তাছাড়াও টিউমারের সাইজ যদি ১২ সপ্তাহের প্রেগনেন্সির সমান হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
চিকিৎসা
অনেক সময় এটি কোন সমস্যা ছাড়াই ভালো হয়ে যায় অর্থাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে মাসিকের সময় যদি বেশি রক্ত যেয়ে থাকে তাহলে সেবনযোগ্য ঔষধ খেলে এটি ভালো হয়।ট্রানেক্রেমিক গ্রুপের ঔষধি এর জন্য যথেষ্ট যেমন-এইচপিআর,জ্যামিক ক্যাপসুল। এই ট্যাবলেট মাসিকের সময় দুই থেকে তিন দিন খেলেই চলে।
জরায়ু টিউমার কেন হয়
মূলত জরায়ু মসৃণ পেশী দ্বারা তৈরি। আর এই মসৃণ কোষের অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি কারণেই জরায়ু টিউমার হয়ে থাকে। ডিম্বাশয় এর উৎপন্ন সংবেদনশীল হরমোন ইস্টোজেনের জন্য এটা মূলত হয়ে থাকে। শরীরে ইস্টোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে টিউমারের আকার ও বেড়ে যায় ।আর গর্ভাঅবস্থায় ইস্টোজেনের বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ।তবে দেহে এর মাত্রা কমে গেলে টিউমারের আকার ও সংকুচিত বা ছোট হয়ে থাকে।
জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ
জরায়ু টিউমারের চিকিৎসার পরও আবার যদি সেটি ফিরে আসে বা খুব দ্রুত জরায়ু টিউমার বড় হতে শুরু করে বা জরায়ু টিউমারের সঙ্গে পোস্টমেনোপজ ঋতুস্রাব পুনরায় শুরু হয়। তাহলে দেরি না করে দ্রুত জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে গাইনী বিশেষজ্ঞরা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আর এর চিকিৎসা মূলত অস্ত্রপ্রচার বা অপারেশন করা হয়ে থাকে। যা মাল্টি ডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে।
শেষ কথা
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে আমি আলোচনা করেছি জরায়ু টিউমারের লক্ষণ নিয়ে। আশা করছি যে সকল বন্ধুদের জরায়ু টিউমারের সমস্যা রয়েছে তারা এ আর্টিকেল থেকে অনেক কিছু জানতে পারবেন। বন্ধুরা আপনারা যদি আর্টিকেল থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এ ধরনের আরো অনেক পোস্ট পেতে আমাদের পেজটি ফলো রাখবেন।-ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url