কৃমির ঔষধের নাম - কৃমি হওয়ার কারণ, লক্ষণ ,প্রতিকার ,ঔষধ খাওয়ার নিয়ম


কৃমি মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকারক একটি প্রাণী। এটি মূলত দূষিত ও অপরিচ্ছন্ন মলমত্র খাদ্যদ্রব্য এবং মাটি থেকে ছড়ায়। তাছাড়াও কৃমি আক্রান্ত ব্যক্তির মলমূত্র মাটিকে দূষিত করে এবং তার টিম থেকে অন্য মানুষের শরীরে ছড়ায়। অস্বাস্থ্যকর দূষিত পানি, অপরিচ্ছন্ন গৃহস্থালি ,শৌচাগার থেকে আসার পর সাবান দিয়ে হাত না ধোয়া, খাবার গ্রহণের পূর্বে বা পড়ে হাত সাবান দিয়ে হাত না ধোঁয়া ,কাঁচা ফলমূল ধুয়ে না খাওয়া,খালি পায়ে শৌচাগারে যাওয়া ইত্যাদি কারণে মানুষের শরীরে কৃমি  আক্রান্ত হয়ে থাকে।

তাই আজকে আর্টিকেলটিতে আমি আলোচনা করেছি কৃমির ঔষধের নাম সম্পর্কে, এর পাশাপাশি  কৃমি হওয়ার কারণ, লক্ষণ ,প্রতিকার ও ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। বন্ধুরা আপনারা যারা কৃমি সমস্যায় ভুগছেন তারা এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা, আপনাদের সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।

কৃমি রোগের লক্ষণ

কৃমি হলে সাধারণত মানুষের শরীরে অনেক ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর মধ্যে একটি হল পেটে ব্যথা। অর্থাৎ কৃমি হলে পেটে ব্যাপকভাবে ব্যথা করে। চলুন নিম্নে এর লক্ষণগুলো জেনে নেই।

  • শরীর দুর্বল অনুভূতি
  • বমি বমি ভাব 
  • পেট ব্যথা
  • রক্তশূন্যতা
  • ক্ষুধা মন্দা
  • ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।

শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমি হলে অনেক সময় এটি মুখ, নাক ও পায়খানার সাথে বের হয়ে আসে।

কৃমি হওয়ার কারণ

কৃমি মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকারক এবং এটি একটি পরজীবী প্রাণী। কৃমি মূলত হয়ে থাকে নোংরা পরিবেশের কারণে। তাছাড়াও সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে বা সাবান দিয়ে হাত না ধোঁয়া ইত্যাদির কারণে কৃমি হয়ে থাকে। যে মিষ্টি খাওয়ার ফলে কৃমি হয়ে থাকে, তবে এটি ভুল ধারণা। তাছাড়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করে থাকেন দাঁত কামড়ালে বা মুখ থেকে লালা ঝরলে কৃমি হয় এগুলো ভুল ধারণা।

কৃমি যেভাবে ছড়ায়

কৃমি মূলত একটি পরজীবী প্রাণী। আর এর একমাত্র খাওয়ার হচ্ছে রক্ত। কৃমি আমাদের দেহে প্রবেশ করে থাকেন খাবার গ্রহণের মাধ্যমে। এছাড়াও কৃমির ডিম পানি ,বাতাস, টয়লেট, কমট ,বাথরুমের দরজা ,পশুর লালা, দরজার হ্যান্ডেল ,খাবার ,বিড়াল কুকুর লোমে ইত্যাদি জায়গায় থাকে। আর এখান থেকে ক্রিমের ডিম গুলো আমাদের দেহে প্রবেশ করে থাকে। আর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়ায় ও বংশ বিস্তার করে সর্বশেষে বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

কৃমি হলে বোঝার উপায়

কৃমি হলে মূলত শিশুদের পেট ফুলে যায়। তাছাড়া অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে। আর প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তশূন্যতা, আমাশয় ,পুষ্টির অভাব,পেট ফাঁপা ,পেট কামড়ানো ,পায়ুপথ চুলকানি সহ বিভিন্ন রকম লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে। আর এই লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত ঔষধ খেতে হবে।

কৃমির ওষুধ কখন খাব

অনেকে মনে প্রশ্ন রয়েছে যে কৃমির ওষুধ কখন খেতে হয়। যাদের মনে এ ধরনের প্রশ্ন রয়েছে তারা এই পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কারণ এই পোস্টটিতে আমরা আলোচনা করেছি কৃমির ওষুধ কখন খাব সে সম্পর্কে। 

  • প্রতি তিন মাস পর পর আপনারা কৃমির ওষুধ অ্যালবেন্ডাজল একটি করে বড়ি সেবন করতে পারেন। আর যদি আপনারা মেবেন্ডাজল খেয়ে থাকেন তাহলে পরপর তিনদিন খেতে হবে। এবং সাতদিন পর আরেকটা ডোজ পাওয়া যায়। শিশুদের ক্ষেত্রেও একইভাবে সিরাপ খাওয়াতে হবে। তবে দুই বছরের নিচে শিশুদের খাওয়াতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • আবার অনেকেই মনে করে থাকেন যে গরমকালে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়া যায় না। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। আপনারা ইচ্ছে করলে গরমকালেও কৃমিনাশক ঔষধ খেতে পারবেন তবে খাবার পর বা ভাড়া পেটে খাওয়া ভালো।

কৃমি সমস্যার প্রতিকার

কৃমি সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপনারা জেনে নিন কৃমি সমস্যার প্রতিকার সম্পর্কে। আসুন আমরা কৃমি সমস্যার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

  • খালি পায়ে হাঁটবেন না
  • শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তা রোধ করতে হবে
  • শৌচাগার ও বাড়িঘর পরিষ্কার রাখুন
  • কাঁচা ফলমূল ও সবজি খাবার আগে ভালোভাবে ধুয়ে খান
  • বাড়ির সবার নখ কেটে ছোট রাখতে হবে।
  • তিন মাস পর পর বাড়ির সব সদস্যকে কৃমির ঔষধ খাওয়ান
  • মলত্যাগের পর ,খাবার তৈরি বা পরিবেশনের আগে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।

আশা করছি বন্ধুরা আপনারা কৃমি সমস্যার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।

কৃমির ঔষধের নাম

বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের কৃমি ওষুধ রয়েছে যেগুলো আপনারা খুব সহজেই পাবেন। তবে আপনাদের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে কোন ওষুধটি কৃমি নাশকের জন্য ভালো সে সম্পর্কে। তাছাড়াও আরো প্রশ্ন থাকে যে বাচ্চাদের কৃমি ঔষধের নাম কোনটি। বড়দের কৃমির ঔষধের নাম ।কৃমির ওষুধ খাওয়ার পরে ভিটামিন খেতে হবে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে। তো চলুন বন্ধুরা আমরা কৃমির ওষুধের নামগুলো জেনে নেই।

  • lvermectine
  • Praziquantel
  • Albendzole
  • Levamisol
  • Mebendazole

এছাড়াও সবচেয়ে ভালো এবং কার্যকরী কয়েকটি কৃমি ঔষধের নাম হলঃ

  • Albezen Tablet
  • Ben-A Tablet
  • Almex Tablet
  • Estazol Tablet

বন্ধুরা আশা করছি আপনারা কৃমির সবচেয়ে ভালো এবং কার্যকরী ঔষধের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তো ওই বিষয়ে যদি আপনাদের কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এবং এই ঔষধগুলি সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম

আপনারা যদি আপনাদের বাচ্চার ক্রিমের ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন ।কারণ এই আর্টিকেলটি শিশুদের কৃমি ওষুধ সেবনের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তো চলুন নিম্নে সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের টিকা কেন্দ্রে নিয়ে কৃমির ঔষধ খাওয়ানো সর্বোত্তম।তাছাড়া প্রতি চার থেকে ছয় মাস পরপর কৃমির ঔষধ খাওয়ালে কৃমির সংক্রমণ রোধ করা অনেকটাই সম্ভব।

মেবেন্ডাজেলঃ এই ওষুধটি বাজারে এরমক্স বা মেবেন নামে পরিচিত। এই ওষুধটি ট্যাবলেট ও সিরাপ দুটো আকারেই পাওয়া যায়। এই অংশটি দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ১০০ মিঃগ্রাম করে দিনে দুইবার পর পর তিনদিন দিতে হবে।

লিভোমসোলঃ শিশুর ওজনের ওপর ভিত্তি করে এই ওষুধটি দেওয়া হয়। অর্থাৎ ১ কেজি ওজনের বাচ্চার জন্য ৩ মিঃগ্রাম লিভোমসোল ডোজ দেওয়া হয়ে থাকে।

অ্যালবেন্ডাজল ঃএই ঔষধটি বাজারে সেনটেল, এলবেন ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়।এই ঔষধটি দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ৪০০ মিলিগ্রাম অর্থাৎ (দুই চামচ) সকালে এবং রাতে দিতে হবে। এক বছর থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক ডোজ। এছাড়াও যদি সমস্যা বেশি হয়ে থাকে তাহলে তিন সপ্তাহ পর আরো একবার খাওয়ানো যাবে

শেষ কথা

বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে আমি আলোচনা করেছি কৃমির ঔষধের নাম - কৃমি হওয়ার কারণ, লক্ষণ ,প্রতিকার ,ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আশা করছি বন্ধুরা এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা অনেক তথ্য পেয়ে থাকবেন এবং এটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। 

তো বন্ধুরা এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং এই আর্টিকেলটি ব্যাপারে আপনাদের যদি কোন মতামত থেকে থাকে তাও কমেন্ট করে জানাবেন। আমাদের আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এধরনের আরো আর্টিকেল পেতে আমাদের পেজটি ফলো রাখবেন ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url