দাঁত ব্যথা হলে করণীয় - দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ঔষধ
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা আলোচনা করব দাঁত ব্যথা হলে করণীয় ও দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ঔষধ সম্পর্কে। যে সকল বন্ধুরা দাঁত ব্যথায় ভুগছেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। আপনারা যদি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে, আপনারা দাঁত ব্যাথা হলে কোন কোন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে পারবেন এবং দাঁত ব্যাথা হলে করণীয় বা কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষই ক্যাভিটি রয়েছে যার কারণে তারা দাঁতের যন্ত্রণায় ভোগে থাকেন। আবার কোন কোন সময় দাঁতের ইনফেকশনের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন করতে চাই কিন্তু জানিনা কোন ঔষধ খেলে এ ধরনের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তো চলুন বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা দাঁত ব্যাথার এন্টিবায়োটিক ঔষধ ও দাঁত ব্যাথা হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানি।দাঁত ব্যথা হওয়ার কারণ সমূহ
বন্ধুরা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না দাঁত ব্যাথা হওয়ার কারণসমূহ সম্পর্কে। বিভিন্ন কারণে দাঁত ব্যাথা হতে পারে, আর এ সকল কারণ জেনেই চিকিৎসা নেওয়া উত্তম। তাই আমাদের সর্ব প্রথমে দাঁত ব্যথার কারণ সমূহ সম্পর্কে জানতে হবে। নিম্নে দাঁত ব্যথা হওয়ার কিছু কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো।
- দাঁত কোন কারনে ক্ষয় হয়ে গেলে ,সে দাঁতে ব্যথা হয়ে থাকে।
- আক্কেল দাঁত ওঠার সময় দাঁত ব্যথা হয়।
- দুই দাঁত ফাঁকার মাঝে খাদ্য আটকে থেকে দাঁত ব্যথা হয়।
- ক্যালসিয়ামের অভাবে দাঁত ব্যথা হয়।
- নিয়মিত ব্রাশ না করলে অর্থাৎ দাঁত পরিষ্কার না থাকলে তাতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের ফলেও দাঁত ব্যথা হতে পারে ।
- মাড়িতে ইনফেকশনের ফলে ও মাড়িতে ফোলা হওয়ার কারণে ও দাঁত ব্যথা হতে পারে।
দাঁতের মাড়ির ব্যথা কমানো উপায়
দাঁতের মাড়িতে যদি প্রচন্ডব্যথা অনুভূত হয় এজন্য আমরা কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। আর যেগুলো ব্যবহারের কারণে দাঁতের মাড়ির ব্যথা কমানো সম্ভব। চলন বন্ধুরা নিম্নে আমরা দাঁতের মাড়ির ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি নাম জেনে নেই।
- লবণ
- লবঙ্গ
- রসুন
- লবণ পানি
- নিমপাতা
- পেয়ারা পাতা
উপরুক্তি এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো যদি আপনারা দাঁতের মাড়ির ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার করে থাকেন তাহলে উপকৃত হবেন। এগুলো যেভাবে ব্যবহার করবেন নিম্নে তা দেওয়া হলঃ
লবণ
লবণের সাথে গোলমরিচের গুড়ো ব্যবহার করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। কারণ লবন ও গোলমরিচের মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া রোধী ও এনালজরসসিক উপাদান। আর এই পেস্ট ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগালে তা ব্যথা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
রসুন
আমরা সবাই জানি রসুন এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে থাকে ।যেকোনো ব্যথা কমাতে তাই রসুন বেশ উপকারী ।তাই দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেলে দ্রুত ফলাফল পাবেন।
লবঙ্গ
লবঙ্গ ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।দাঁতে যদি ইনফেকশন হয়ে থাকে লবঙ্গ তা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। আর এজন্য আপনি দুটি লবঙ্গ পিষে নিন ,আর এতে দিন দুই ফোঁটা অলিভ অয়েল। এবার একটি দ্রবণ তৈরি করুন। দ্রবণটি ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগান এবং জিভ দিয়ে চেপে ধরে রাখুন। দেখবেন কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যথা কমে গেছে।
নিম পাতা
নিমপাতা ব্যাকটেরিয়া দূর করতে ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই আপনি দাঁতের ব্যথা দূর করতে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য নিম পাতা আপনি পানিতে ফুটিয়ে নিন। এরপরে পানি ছেঁকে নিয়ে তাতে এক চামচ লবণ মেশান। তারপর সেই পানি দিয়ে ফুলকুচি করুন। এতে ব্যথা কমবে এবং আপনি অনেক আরাম পাবেন।
পেয়ারা পাতা
পেয়ারা পাতার রস ব্যথার জন্য খুবই উপকারী । তাছাড়াও পেয়ারা পাতার সেদ্ধ পানি দিয়ে মাউথ ওয়াশ হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
লবণ পানি
লবণ পানি মারি ফোলা ,গলা ব্যথা ,দাঁতের ব্যথা ইত্যাদির জন্য খুবই উপকারী। আর এজন্য আপনাকে কুসুম গরম পানিতে এক চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার কুলকুচ করতে হবে অথবা গড়গড়া করতে হবে ।এতে করে দাঁতের ব্যথা ও গেলা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
দাঁতের ব্যথা কমানোর দোয়া
কোরআন শরীফে আল্লাহ তা'আলা সকল রোগের বা সকল সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। দাঁতের ব্যথা সম্পর্কেও কোরআন শরীফে কিছু আয়াত রয়েছে। আসুন আমরা জেনে নেই দাঁতের ব্যথা কমানোর দোয়া।
উচ্চারণঃ "কুল হুয়াল্লাজি আংশাআকুম ওয়া ঝাআলালাকুসুস সামআওয়াল আবছারা ওয়াল আফয়িদাতা ক্কালিলাম্মা তাশকরুন"।(সূরা মূলকঃ আয়াত ২৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এই আয়াতের মাধ্যমে দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি থাকার তৌফিক দান করুন আমীন ।সূরা মূলক এর ২৩ নাম্বার আয়াতটি পাঠ করলে আল্লাহতালার রহমতে তাদের ব্যথা কমে যাবে।
দাঁত ব্যথা হলে করণীয়
দাঁতে ব্যাথা হলে কিছু করণীয় রয়েছে যা আমাদের দাঁত ব্যথা থেকে রক্ষা করে থাকে। মূলত আমাদের দাঁতের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এটি মাঝে মাঝে আমাদের অস্বস্তি থেকে শুরু করে একটি গুরুতর ব্যথা তৈরি করে থাকে। আর এটি উপশম্যের পথ হিসেবে আমরা অনেক উপায় খুঁজতে থাকি। তো চলুন দাঁত ব্যথা হলে কিছু করণীয় উপায় জানি।
রুট ক্যানেল থেরাপি
দাঁতের ব্যথা যদি পাল্প সম্পর্কিত হয় তাহলে ডেন্টিস্টরা রুট ক্যানেলের থেরাপি্র পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর এই পদ্ধতির মাধ্যমে ডেন্টিস্টরা পাল্প সরিয়ে ফেলবেন, দাঁত পরিষ্কার এবং জীবাণু মুক্ত করবেন। এবং বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন ব্যবহারের মাধ্যমে দাঁতের পরিপূর্ণভাবে রুট ক্যানেল করা হয়। দাঁত ব্যথার জন্য রুট ক্যানেল থেরাপি বেশ কার্যকরী একটি চিকিৎসা।
মাড়ির রোগের চিকিৎসা
দাঁতের ব্যথা হলে ডেন্টিস্টরা ক্যানিং এবং রুট প্ল্যানিংয়ের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।এই পদ্ধতিতে মাড়ির উপর এবং নিচে থেকে ক্যালকুলাস অপসারণ করা এবং দাঁতের শিকড় গুলিকে মসৃণ করে মাড়িগুলিকে দাঁতের সাথে পুনরায় সংযুক্ত করতে সহায়তা করে। মাড়ির রোগের চিকিৎসার কারণে দাঁতের ব্যাথা অপসরণ করতে এ পদ্ধতি মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে থাকে।
দাঁত তোলা
তার প্রতি অতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে এবং ব্যথা প্রচন্ডভাবে হয়ে থাকে এছাড়াও তা যদি রাখার অনুপযোগী হয়ে থাকে তাহলে ডেন্টিস্টরা তা তুলে ফেলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ডেন্টিস্টরা ক্ষতিগ্রস্ত দাঁত দিয়ে তুলে ফেলা পরামর্শ এবং প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন একটি ডেন্টাল ইনপ্লান্ট ব্রিজ বা ডেনচার। দাঁত তোলা একটি বিশেষ অবলম্বন তবে গুরুতর দাঁত ব্যথার জন্য একটি প্রয়োজনের চিকিৎসা হতে পারে।
ফিলিং
দাঁতে যদি কিছু গর্ত বা ক্যারিজ থাকে তাহলে ডেন্টিস্টরা ফিলিং করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর এই ফিল্মগুলো ছোট থেকে মাঝারি আকারের দাঁত ভালো করতে সাহায্য করে থাকে। তবে দাঁত ব্যথা প্রতিরোধে ফিলিং একটি সাধারন এবং কার্যকর চিকিৎসা। তবে মনে রাখা উচিত কিছু তাদের ফিলিং করা যাবে তবে সব দাঁতেরই ফিলিং করা যায় না।
টুথপেস্ট
সংবেদনশীল এর কারণে যদি দাঁত ব্যাথা হয়ে থাকে তাহলে ডেন্টিস্টরা সংবেদনশীল টুথপেস্ট এর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর এই টুথপেস্টগুলিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা সংবেদনশীলতাকে ব্লক করে বা কমাতে সাহায্য করে ।আর এই সংবেদনশীলতার কারণে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ব্যথা উপশমের ঔষধ
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তাররা দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথা উপশময়ের ঔষধ খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর সে সকল ঔষধ গুলো সেবনের ফলে দাঁতের ফোলা ও দাঁতের ব্যথা দূর হয়।
দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ঔষধ
দাঁতের ব্যথা বা দাঁতের পরিস্থিতি এর ওপর নির্ভর করে ডাক্তাররা দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ঔষধ প্রদান করে থাকেন। যেগুলো দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। নিম্নে এমন কয়েকটি দাঁতের ব্যথা অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ এর নাম দেওয়া হলোঃ
- Lebac 500mg
- Moxacil 500mg
- Cefotil plus 500mg
- Tycil 500mg
- Sefrad 500mg
- Fenamic 500/250
- Amodis 400
- Napa One
মূলত উল্লেখিত এই ঔষধ গুলো দাঁত ব্যথার অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনারা যারা দাঁত ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন তারা এ সকল ঔষধ দাঁত ব্যথা এর জন্য সেবন করতে পারেন। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন এ সকল ওষুধ সেবনের পূর্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
দাঁত ব্যথা দূর করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ
বন্ধুরা এতক্ষণ আমরা জানলাম দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ঔষধ সম্পর্কে। এবার আমরা জানবো দাঁত ব্যথা দূর করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ সম্পর্কে । যেসকল বন্ধুরা দাঁত ব্যথা দূর করার জন্য হোমিওপ্যাথি ঔষধ সম্পর্কে জানতে চান। তারা এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জেনে নিন দাঁত ব্যথা দূর করার হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গুলোর নাম।
- সিলিসিয়া
- আর্নিকা
- মার্কসল
- হেপার সালাফ
- পালসেটিল্লা
- মারকুরিয়াস
- আর্সেনিক
- ব্রায়োনিয়া
- ক্যামমিলা
বন্ধুরা আশা করছি আপনারা দাঁত ব্যথা দূর করতে হোমিওপ্যাথি ঔষধ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
শেষ কথাঃ দাঁত ব্যথা হলে করণীয় - দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ঔষধ
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে আমি আলোচনা করেছি দাঁত ব্যাথা হলে করণীয় এবং দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক ঔষধ সম্পর্কে। যে সকল বন্ধুরা দাঁত ব্যথার সমস্যায় ভুগতেন তারা এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি আপনাদের কাজে লাগবে এবং উপকৃত হবেন। এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এ ধরনের আরো অনেক আর্টিকেল পেতে আমাদের পেজটি ফলো রাখুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url